স্বভাবতঃই আমারও উঠেছিল। তাই বাবা–মার ওপর খানিক রাগ দেখিয়েই প্রথমে দিল্লি তারপর সেখান থেকে ব্যাঙ্গালোরে ট্রান্সফার নিয়ে নিই। আর সেই তখন থেকেই আমি বাইরে বাইরে। যে কোম্পানীতে প্রথম ঢুকেছিলাম সেটা ছেড়ে এখন অন্য একটা ভালো জায়গায় আছি… এই বছর খানেক আগে বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে ছুটি নিয়ে বাড়ী আসি, এসে দেখি বাবা আমার বহাল তবিয়তে আছেন। বুঝলাম বাবার অসুস্থতার ভুয়ো খবর পাঠিয়ে আমাকে ডেকে এনে বিয়ের পিঁড়িতে বসানোর এ এক উৎকৃষ্ট প্রচেষ্টা…”
এরই ফাঁকে দেখি আমাদের খাবার চলে এসেছে…টুক–টাক মুখ চালাতে চালাতে জিজ্ঞেস করলাম–
-“তারপর তুই কি করলি?”
-“কি আবার? সিনক্রিয়েট করার হাল্কা একটা চেষ্টা চালিয়েছিলাম বটে। কিন্ত্ত তাতে কোনও লাভ হলো না বুঝলি… কারণটা হচ্ছে আমার পরিবারের সবাই এব্যাপারে আমার এক্কেবারে বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিল… একজনকেও আমার পাশে পেলাম না যে কিনা আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমার ফরে কথা বলবে… তারপর সেই সময় আবার কলকাতায় আসার একদিন পরেই সক্কাল সক্কাল ঘুম চোখ খুলেই যদি বাবার কাছে কাউকে ঝাড় খেতে হয় তাহলে কারই না মেজাজটা খিঁচড়ে যায় বল তুই…”
-“ঝাড় খেলি? শেষ পর্যন্ত তুই তাহলে তোর বাবার ঝাড় খেলি… হাঃ–হাঃ–হাঃ… তা কি নিয়ে ঝাড়টা খেলি? একটু শুনি…”
“জানিসই তো যে আমার বাবা একটু রাশভারী গোছের আর তাই বাবাকে আমরা একটু সমঝেই চলি। সেদিন সকালবেলা ঘুম চোখ খুলে ফ্রেশ হয়ে বাজারের ব্যাগটা নিয়ে যেই বেরোতে যাব অমনি পড়্বি তো পড়্ এক্কেবারে বাঘের মুখে।”
-“কোথায় চললে?”
-“বাবা বাজারে…”
-“বাজারে যাচ্ছ যখন যাও…কিন্ত্ত একটু তাড়াতাড়ি ফেরার চেষ্টা করো…”
-“কেন বাবা?”
-“তোমার সাথে আমার একটু জরুরী কথা ছিল…”
-“ঠিক আছে বাবা…”
যাই হোক সেদিন বাজার থেকে তো ফিরলাম তারপর ব্রেকফাস্টটা শেষ করে সবে উঠতে যাব এই সময় বাবা হঠাৎ বলে উঠলেন–
“বসো–বসো,, তোমার সাথে কথা আছে…”
“কি কথা বাবা?”
“শোনো তবে,বাউন্ডুলেপণা ছেড়ে তোমাকে এবারে সেট্ল করতেই হবে। আর সেটা করতে হবে এবছরেই। সেজন্যই আজ বিকেলে তোমার জন্য আমরা মেয়ে দেখতে যাচ্ছি। পছন্দ হলে আজই সব কিছু ফাইনাল করে তবেই ফিরব। আর তাই তোমাকেও যেতে হবে আমাদের সঙ্গে…”
আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম…
-“মানে আমার কি ইচ্ছে বা অনিচ্ছের কোনও দাম নেই না তোমাদের কাছে?…বললামই তো আমার একটু সময় চাই এটা নিয়ে ভাবনা–চিন্তা করার জন্য…”
-“ওহঃ সরি, ওই সময়টুকুই যা এইমুহূর্তে দেওয়া যাচ্ছে না তোমাকে। আমাদেরও তো বয়স হয়েছে নাকি। আর বিষয়টাতো নতুন কিছু নয় অনেক দিন ধরেই চলছে। বিগত বেশ কয়েক বছর যাবৎ এটা নিয়ে তুমি আমাদের ঝুলিয়ে যাচ্ছ। আজ যাব–কাল যাব করে, অনেক টালবাহানা করেছ। আর নয়। এর মধ্যেই তুমি আমাদের অনেক মুখ পুড়িয়েছ বাবা, অনেকটা সময় তোমাকে দেওয়া হয়েছে আর নয়,আমরা সবাই যাচ্ছি। তাই আজ তোমাকেও যেতে হবে ব্যস…”
-“ঠিক আছে…”
সেদিন দুপুর তিনটে বাজতে না বাজতেই দেখি আমার কাকু–কাকিমা,আমার পিসি, ছোটমামা–ছোটমামী, আমার মাসী–মেসোরাও এসে গেছেন। আর সঙ্গে লেজুর হয়ে আমার মামাতো ভাই দুটোও এসেছে। তাদের সাথে গোদের ওপর বিষ ফোঁড়া আমার খুড়তুতো বোনটাও এসে হাজির।
-“বা–ব্বা তোকেও আবার হুমকি শুনতে হয় না–কি?”-আমি ইয়ার্কি মেরে বললাম।
-“বলছি না… ঠাট্টা করবি পরে…শোন্না আগে…”
-“হ্যাঁ বল্ বল্…”
-“আজই মেয়ে দেখতে যেতে হবে শুনেই না আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পুরো আগুন জ্বলে গেল। আচ্ছা বল তো, আমার বাঁড়াটার এই সুদীর্ঘ এত বছরের স্বাধীনতাটা হঠাৎই যদি ‘বউ’ নামক কোনও একজনের দু’পায়েরফাঁকে সারা জীবনের জন্য বন্দী হয়ে পড়ে তখন কারই বা ভালো লাগে। তাই খানিক অনিচ্ছাবশতঃই সেদিন বাবা–মা আর পরিবারের অন্যান্যদের সঙ্গী হয়ে ফুল ব্যাটেলিয়ন নিয়ে গেলাম মেয়ে দেখতে তাদের বাড়ীতে…”
কলিং বেল বাজাতেই ৩৬–৩২–৩৮ ফিগারের মধ্য তিরিশের যুবতী সুন্দরী এক ভদ্র মহিলা ভেতর থেকে দরজা খুলে হাসি মুখে আমাদের সব্বাইকে এক উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন।
-“আরে… আসুন আসুন… কি সৌভাগ্য আমার!!! পরিমল বাবুর সাথে আমার ফোনে কথা হয়েছিল আগেই…”
-“নমস্কার!!! আমিই পরিমল, পরিমল দত্ত…”-বাবা বললেন।
-“নমস্কার!!! আমি মিনাক্ষী…মিনাক্ষী সরকার…”
-“আসুন আসুন,আপনারা আসুন সবাই আমার সাথে…”-বলতে বলতে উনি আমাদের সবাইকে ড্রয়িংরুমে নিয়ে এলেন।
-“বসুন সবাই এখানে… আসলে ছোট বাড়ী তো বুঝতেই পারছেন…”
-“বাড়ী ছোট তো কি হয়েছে? বাহঃ কি সুন্দর বেশ সাজানো গোছানো আমার তো দেখে বেশ পছন্দই হয়েছে…” আমার মা বললেন।
বাড়ীটা সত্যিই বেশ সাজানো গোছানো বুঝলি… আমার বাবা ওনার সঙ্গে আমার পরিবারের সকলকে আলাপ করিয়ে দিলেন।
-“আচ্ছা আপনারা একটু বসুন বুঝলেন আমি আবার ওদিকটা একটু দেখে আসি… আসলে আমি একা মানুষ তো। বুঝতেই পারছেন সব কিছু আমাকে একা হাতেই সামলাতে হয়… ওদের বাবা থাকলে তো আর কোনও অসুবিধেই ছিল না… তিন বছর আগে উনি আচমকা চলে যেতেই সব দায়–দায়িত্ব এসে পড়ল আমার ঘাড়ে… তবে হ্যাঁ যদিও মেয়েরা আমার খুবই ভালো। খুব বাধ্যও বটে। আমার সুখ সুবিধের ওপর সর্বদা বেশ কড়া নজর ওদের… তবুও আমি তো মা… ওদের জন্য চিন্তা তো একটা হয়েই… তাই না।??? একটু বসুন আপনারা আমি এক্ষুণি আসছি”-বলেই উনি ভেতরে চলে গেলেন।
ওদের বাড়ীতে ঢুকেই না আমার মনের মধ্যে কেন জানিনা একটা চাপা টেনশন হচ্ছিল। এখানে ঢোকার পর থেকেই হাতে–পায়ে আমার কেমন যেন একটা আড়ষ্ঠ–আড়ষ্ঠ ভাব। আমি না পুরো যেন একটা জ্যান্ত মূর্তির মতো বসে আছি। এক্কেবারেনট নড়ন–চড়ন, আর আমার এই অবস্থা দেখে আমার ভাই–বোনগুলো আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে। তোরই মতো যা–তা বলছে।
খানিক বাদে দেখলাম ভদ্রমহিলা ফেরত এলেন সঙ্গে অপূর্ব সুন্দরী দুটো মেয়েকে নিয়ে। লাল টুকটুকে একটা শাড়ী আর হাল্কা কিছু গয়না পড়ে মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিল একজন। তার বাঁপাশেই আর একজন যমজ। ভদ্র মহিলা তার অন্য পাশে।মেয়ে দুটো যেমন ফর্শা তাদের গায়ের রঙ তেমনি চাবুক ফিগার পুরো ৩৬–২৮–৩৬, যেমন হরিণের মতো টানা–টানা চোখ, তেমনচোখা নাক আর মানানসই পাতলা ঠোঁট। মনে হয় এক্ষুনি র্যা ম্পে–এ নামিয়ে দিলে সঙ্গে সঙ্গে শো–স্টপার হয়ে যাবে।বয়স আন্দাজ ২৪ কি ২৫ হবে বোধহয়।আর সঙ্গে মিসেস সরকারও আর বাকী দুজনের হাতে চা–জলখাবারের ট্রে।
-“দাদাভাই তোর তো পুরো লটারী লেগে গেল রে…”-আমার কাঁধে ধাক্কা মেরে হাসতে হাসতে আমার বোনটা হঠাৎ ফিসফিসিয়ে উঠল।
-“এই চুপ্ কর্ তুই। এখান থেকে বেরিয়ে না খুব মার খাবি আমার হাতে। দাঁড়া আগে ভালো করে দেখতে দে তো দেখতে দে…”-চোখ পাকিয়ে ওকে ধমক দিয়ে বললাম আমি।
-“ওরে মুখটাবন্ধ কর্ রে দাদাভাই। না হলে মুখে না মাছি ঢুকে যাবে।
-“এই তুই চুপ করবি…”
-“ওরে আর বেশী দেখিস্ না। বেশী দেখলে না চোখ খারাপ হয়ে যাবে রে…”
-“চুপ–চুপ একদম চুপ…”
-“ওরে শুভ দৃষ্টিটার জন্যও তো কিছু বাঁচিয়ে রাখ্…”
আমি ওদের দিকে তাকিয়ে অল্প–অল্প হাসতে হাসতে সবার অলক্ষ্যে কাঁকণ মানে আমার বোনের থাইতে একটা হাল্কা চাপড় মেরে বললাম–
-“তুই আপাতত একটু চুপ কর্ প্লিজ়… তোকে আমি পরে দেখ্ছি…”
এদিকে ওনারা হাসি মুখে ট্রেগুলো আমাদের সামনের সেন্টার টেবিলটায় নামিয়ে রেখে বললেন–
-“নিন, আপনারা একটু… যৎ সামান্য আয়োজন আর কি… এই আমার বড় মেয়ে তৃণা। আর ও হল আমার ছোট মেয়ে তৃষা। তৃণা মা আমার!!! ট্রে–টা টেবিলে নামিয়ে রেখে গুরুজনদের সবাইকে প্রণাম করো…”
-“হ্যাঁ, মা!!!” তৃণা মুখে একটা মিষ্টি হাসি নিয়ে বড়দের সকলকে নমস্কার করে বলল।
প্রথমে ও আমার বাবাকে দিয়ে শুরু করল তারপর একে–একে সকল গুরুজনকে।
বাবা বললেন–
-“বাঃবেশ ভালো সংস্কার দেখ্ছি আপনার মেয়ের! ওর প্রণাম নিয়ে বললেন “বেঁচে থাকো মা বেঁচে থাকো আশীর্বাদ করি সুখী হও মা… খুব সুখী হও…”
-“বুঝতেই তো পারছেন মাথার ওপর তো ওদের বাবা নেই সব কিছু আমাকে একা হাতেই সামলাতে হয় হ্যাঁ–অ্যা, আমার মেয়েরা আমার যথেষ্ঠ খেয়াল রাখে। ওদের বাবার মৃত্যুটাকে আমাকে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করে আপ্রাণ। ওদের কাজ–কেরিয়ার সামলেও সবসময় ওরা দুই বোনই যতটা সম্ভব সাহায্য করে আমাকে…”বললেন মীনাক্ষী সরকার আমার হবু শ্বাশুড়ি।