Site icon Bangla Choti Kahini

জন্মদিনের উপহার পর্ব-২

পর্ব-২
তাই সাইলেন্ট মোডেই রাখা ছিল। সেটা খতম করে লাঞ্চে বসতে গিয়ে বেশ দেরী হয়ে গেল। খাবার সময় মোবাইলটা চেক করতে গিয়েই একটা মেসেজ চোখে পড়ল, বনানীর তরফ থেকে-
-“কি গো প্রাঞ্জল? অনেকক্ষণ ধরে তোমায় কল করছি পাচ্ছি না কোথায় থাকো যে দরকারের সময় পাওয়া যায় না? কতগুলো মিসড কল হয়েছে সেটা দ্যাখো?, আর ফ্রি হয়ে একটা কল করো, জরুরী দরকার আছে…”
ও জরুরী দরকার আছে বলছে মানে কেস জন্ডিস। না জানি অভি গান্ডুটা, আবার কি ক্যাঁচাল করেছে কে জানে? অগত্যা কল করতেই হল।
-“হ্যাঁ বলো প্রাঞ্জল! কেমন আছো?”
-“ভালো, আর তুমি?”
-“আমিও ঠিক-ঠাক্‌…”
-“আর তিনি?”
-“আছেন, তিনিও আছেন তাঁর মতো…” বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল বনানী।
-“এনি প্রবলেম ডার্লিং…”
-“তা জেনে তুমি কি করবে শুনি? তোমার তো শুধু কাজ আর কাজ। তার বাইরে তো তোমার বনানীর জন্য তো সময়ই হয় না, তাই না? সেই যে সেদিন আমাকে ইঞ্জেকশন দিতে এসেছিলে সেটাই তোমার সাথে আমার শেষ দেখা। তারপর আর পাত্তা নেই।”
-“আরে বনানী জানোই তো?”
-“আচ্ছা বলতো ফোনটা কি জন্য করেছিলাম?…”
-“আজব ব্যাপার!!! সেটা তো বলবে তুমি, আমি তো শুধু শুনব।”
-“বেশ শোনো তবে!!!…”
-“হা-হা-হা! আমি কা-আ-আ-ন পেতে রই… বল তবে!!!”
-“হা-হা-হা!!!, ভেরি ফানি!!! মহাশয় আপনার যদি ফাজলামি করা শেষ হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে আমি কি একটু আপনার কিমতি সময় পেতে পারি? নয়তো কেস খেতে খুব একটা…”
-“তোমার জন্য ডার্লিং কিমতি সময় কি বস্ত্ত? জান ভি হাজ়ির হ্যায়!!! তাছাড়া!!!”
-“তাছাড়া!?”
-”তাছাড়া ফর ইয়োর কাইন্ড ইনফরমেশন ম্যাম, শকুনের শাপে যে গরু মরে না ম্যাডাম!!!”
-”মানে ইউ মিন টু সে আমি শকুন অ্যাঁ আমি শকুন? আমি শকুন হলে তুমি? তুমি কি?”
-”তা আপনি যেটা ভাবছেন ম্যাম সেটাই না হয়…”
-“হাউ ফানি?!… আবার ফাজলামো তুমি আর শুধরোবে না ঠিক করেছো তাই না গো?!!! আচ্ছা শোনো আজকের তারিখ টা মনে আছে কি?”
-“কি গো? ওহ্‌!!! আরে ছাড়ো তো! বুড়ো হয়ে গেছি!!! বুড়োদের আর এসব!!!”
-“বুড়ো মানে? কে বুড়ো? তোমাকে যে বুড়ো বলে সে বুড়ো!!!
-”ওহ রিয়েলি!?”
-“হ্যাঁ তা নয় তো কি? এক্সপেরিয়েন্স ম্যাটারস্‌ বসস!!! এক্সপেরিয়েন্স ম্যাটারস্‌!!! মিন হোয়াইল হ্যাপি বার্থ-ডে ডিয়ার!!!
-“থ্যাঙ্ক ইউ ডার্লিং!!!”
-“উঁহু শুকনো থ্যাঙ্ক ইউ তে যে আর কাজ চলবে না ডিয়ার…”
-“এই মেরেছে তাহলে?”
-“তাহলে আর কি? আজ… আজ উই এক্সপেক্ট ইউ, আমার বাড়িতে…”
-“এই কেলো করেছে!!! আজই?!!!”
-”ইয়েস স্যর আজই, কেন বললে শুনবো না। ভুলে যেও না আবার!!! তোমার আসা কিন্ত্ত চাই-ই চাই!!! না হলে মুঝসে বুড়া কোই নেহি হোগি তুমহারে লিয়ে, ইয়াদ রহে পাক্কা সাত সে সাড়ে সাত বাজে আ-জানা ইধার, মেরে ঘর মে…”
-“কিন্ত্ত কেন?”
-“কেনোর কোনও মানে নেই। আসতে বলেছি আসবে ব্যস…না হলে তোমার অফিসের দরজায় আমার গাড়ি পৌঁছে যাবে কিন্ত্ত!!!”
-“ওহ বনানী তুমি না মাঝে মধ্যে এমন বাচ্চাদের মতো করো যে, কিচ্ছু না বলার থাকে না জানো তো! আয়েঙ্গে মেরে সুইট-হার্ট, জ়রুর আয়েঙ্গে!!!”
-“থাক আর ঘটা করে আদিখ্যেতা না দেখালেও চলবে। শুধু এখানে এসে বডিটা ফেললেই চলবে, বাকিটা না হয় আমিই বুঝে নেব কি বল?।”
-“ওকে ডিয়ার… ফিকর নট্ তুমনে ক্যাহে দিয়া, সমঝো হম চলে আয়েঁ!!!”
-“ওহঃ প্রেম যেন উথলে উঠছে দেখছি। শায়েরী…এসো না তোমার শায়েরী বের করছি আমি…!!!”
আজ না গ্যাঁজাতে গিয়ে একটু বেশীই দেরী হয়ে গেল দেখছি। তাড়াতাড়ি না গেলে সত্যিই বোধহয় কপালে দুঃখ আছে। তাই লাঞ্চটা তাড়াতাড়ি শেষ করে কাজে বসলাম। একটা ভারী কাজের পরে একটু হাল্কা-ফুল্কা কাজ নিলাম। জুনিয়রদের ছোট খাটো টেকনিক্যাল সমস্যা মেটাতে থাকলাম। তারপর ঠিক সন্ধ্যে সওয়া ছ’টা নাগাদ অফিস থেকে পাতলা হয়ে গেলাম। একটা ক্যাব ধরে সোজা পৌঁছে গেলাম ওদের বাড়ি।
কলিং বেল বাজিয়ে ঝাড়া ১০ মিনিট ধরে অপেক্ষা করলাম। কিন্ত্ত কারোর পাত্তা নেই। জানেন? আমি দাঁড়িয়ে আছি, বারে বারে বেল বাজাচ্ছি কিন্ত্ত কেউ না আসছে না দরজাটা খুলতে। ভাবছি ওকে কল করবো নাকি ফিরে যাবো? ফিরে যাবো কিনা। এবার বেলটা বাজিয়ে আরও মিনিট পাঁচেক ওয়েট করলাম। কিন্ত্ত না এবারেও কারোর আসার পাত্তা নেই। ধুর ভাল্লাগছে না আর। তাই মোটামুটি খানিক অধৈর্য হয়েই দরজায় নক করলাম।
ও-মা!!! দরজাটা দেখি ভেতর থেকে খোলা। যাই হোক ঢুকে পড়লাম আর বনানীকে ডাকতে ডাকতে। তখনও বোধহয় চমকের কিছু বাকি ছিল আমার জন্য। ঘুটঘুটে অন্ধকার বাড়ী। কিন্ত্ত লিভিং রুমে পা-দিতেই হঠাৎ করে আমাকে তাক করে চোখ ধাঁধানো ফোকাস লাইট জ্বলে উঠল তারপরে এক এক করে জ্বলে উঠলো ঘরের সব আলো। আলো জ্বলতেই শুধু দেখতে পেলাম ঘর ভর্ত্তি লোক গিজগিজ করছে যারা শুধু আমার দিকেই চেয়ে আছে। সবমিলিয়ে আমার কাছে এ এক অদ্ভুতুড়ে পরিস্থিতি আর চমকের তখনও বোধহয় কিছু বাকি ছিল জানেন? সামনে ঘরের মধ্যম প্রান্ত থেকে এক পরিচিত মহিলা কন্ঠ ভেসে আসে-
-“সো লেডিজ় অ্যান্ড জেন্টেলমেন প্লিজ় ওয়েলকাম আওয়ার গেস্ট অব অনর, দ্য বার্থ-ডে বয় মিঃ প্রাঞ্জল বাগচী…”
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তুমুল হাততালির বন্যা বয়ে গেল সারা ঘর জুড়ে। সত্যি ও আমাকে বলে কি? এই মেয়েটা বোধহয় কোনও দিনই আর শুধরোবে না জানেন? এতটা ভালো কি সত্যিই কেউ বাসতে পারে কাউকে, তাও আবার নিজের বরকে ছাড়া? সত্যি মেয়েটার আমার প্রতি এই পরিমাণ ভালোবাসা দেখে আমার এক এক সময় গুলিয়েই যায় ওর অরিজিনাল বরটা আসলে কে, অভি না কি আমি? ওর এই সব খামখেয়ালিপনা দেখে সত্যি বলতে কি মনে হয় জানেন? বড়লোকের খেয়াল আর পুরনো দেওয়াল। কখন যে কি হবে? কেউ জানে না। সত্যি! পয়সা থাকলে বোধহয় ভুতের বাপেরও শ্রাদ্ধ করা যায় তা ওদের দেখেই বোধহয় শেখা যায়।
তুমুল হাততালির মধ্যেও দেখলাম ও হাসতে হাসতে হাততালি দিতে দিতে এগিয়ে এলো আমার দিকে। এসে না আমার হাত ধরে নিয়ে গেল সেই সেন্টার টেবিলের সামনে যেখানে রাখা আছে সুদৃশ্য একটা কেক। আর তার পাশে একটা ছুরি। আমার হাতে সেই ছুরিটা ধরিয়ে দিয়ে বলল-
-“নাও!!! এবার কেকটা কাটো, মিঃ বার্থ ডে বয়!!!…”
-“সত্যিই বনানী তুমি না?!…অ্যাই অভি কোথায় তুই? এদিকে আয় না রে…” আমি অভিকে ডাকলাম নিজের কাছে।
-“হয়েছে তোমার বন্ধুও হাজির নাও আর আদিখ্যতা না করে এবার তো কেকটা কাটো…” পাশ থেকে বলল আমার বনি ডার্লিং।
পাশে গোটা হল দাঁড়িয়ে কোরাসে প্রত্যেকে হ্যাপি বার্থ-ডে টু ইউ গাইছে আর হাততালি দিচ্ছে। অন্যরকম একটা আবহ তৈরী হয়ে গেছে জানেন? যাই হোক জ্বলন্ত মোম বাতিটা ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে কেকটা কেটে প্রথম টুকরোটা আমি কেন জানিনা বনানীকেই খাওয়ালাম ও আমার হাত থেকে একটু খেল। তারপর সেই টুকরোর বাকি অংশটুকু দিলাম অভিকে। প্রত্যুত্তরে বনানী ওখান থেকে এক টুকরো কেটে আমাকে খাইয়ে দিল। তারপর কেকটা কেটে ট্রে-তে সাজিয়ে আমাকে নিয়ে সকলের সাথে গেল পরিচয় পর্ব সারতে। একবার অভি ওর নিজের লোকেদের সাথে নয়তো বনানী ওর পরিচিত লোকজনের সাথে পরিচয় করাতে লাগল। তবে এই পরিচয় পর্বের শেষ লগ্নে এসে বনানী আমাকে বিশেষ একজনের সাথে পরিচয় করালো। ওদের নাকি সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে আলাপ। উঁ…মোটামুটি আন্দাজ বছর ২৪ বয়স, লম্বায় ৫ফুটের একটু বেশীই হবে বোধহয়, গায়ের রং ফর্সা, মোটামুটি রোগাটে গড়নের সদ্য বিবাহিতা এক নব যুবতী। উনি ঘরের একটা কোনায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। বনানী ওনার কাছে আমাকে নিয়ে গেল বলল-
-“এসো প্রাঞ্জল এসো তোমাকে একজনের সাথে মিট করাই…”
-“এতক্ষণ ধরে হলো তো! উফ্‌ আবার কে? তুমি না আমাকে এবার পাগল করে দেবে দেখছি…”
-“আরে এসোই না! এই দ্যাখো ও হল কুহেলী, কুহেলী বড়াল আমার বন্ধু আর তাছাড়া…”
-“আর তাছাড়া?!”
-“তাছাড়া ওর আরও একটা পরিচয় আছে…”
-“কি সেটা?!”
-“তোমার লেখার গুনমুগ্ধ এক পাঠিকা…তোমার ফ্যান!!!”
-“কুহেলী তুমি এতদিন ধরে যার দর্শন চাইছিলে এখন সে তোমার সামনে হাজির। তোমরা দুজনে আপাতত একটু কথা বল আমি না হয় ওদিকটা এবার একটু দেখে নিই কেমন?…”
বনানী চলে যাবার পরে দুজনে একে অন্যের দিকে শুধু তাকিয়েই বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেল। হুঁশ ফিরল ওর কথায়।
-“আপনিই তাহলে মিঃ প্রাঞ্জল বাগচী? ওয়ান অফ দ্য মোস্ট পপুলার অথর…”
-“মোস্ট পপুলার কিনা জানিনা তবে চেষ্টা করি সত্যি ঘটনা গুলোকে যতটা বাঙ্ময় করা যায় তা করে তোলার। কতটা পারি সেটা আমি জানি না।”
আপনি যা লেখেন তাতেই আমার অবস্থা না খারাপ হয়ে যায়। লোকলজ্জাতেও পড়ে যেতে হয় জানেন আপনার জন্য।”
-“কি রকম? কি রকম?”
-“আপনার লেখা পড়ে হিট খেয়ে গিয়ে আমারই এক মামী শ্বাশুড়ির প্রশ্নবাণের সামনে পড়ে গিয়েছিলাম।”
-“দুঃখিতঃ…”
-“কেন দুঃখ তো আপনার লাগার কথা নয় আপনি খামোখা কষ্ট পাচ্ছেন কেন?”
-”এই যে আপনি আপনার মামী শ্বাশুড়ির কাছে কেস খেলেন।”
-“হুম সেই সিচ্যুয়েশনটা কোনওভাবে সামলে নিয়েছিলাম ওনাকে একটা কাজে ব্যস্ত করে দিয়ে। তবুও আপনার লেখাগুলো না একটা মেয়েকে উত্তেজিত করার পক্ষে যথেষ্ট।”
-“আমার লেখা শুধু লেখা নয় এক একটা অভিজ্ঞতাকে লিপিবদ্ধ করা। কেন আমার লেখা আপনার ভাল্লাগে বুঝি?”
-“হুম খুউউউব!!! যখনই খুব লোনলি ফিল করি তখন আপনার লেখা আমার পাথেয় হয়ে ওঠে।”
-“কেন হঠাৎ একাকীত্বে ভোগেন কেন? আপনার বাড়ীতে ক’জন মেম্বার আপনারা?”
-“মাত্র দুটি প্রাণী আমি আর ও।”
-“উনি কি করেন শুনি?”
-“ও ডাক্তার…”
-“বেশ আর আপনি?”
-“হাউজ়-ওয়াইফ!!!”
-“হুম বুঝলাম!!! আচ্ছা আশে-পাশে প্রতিবেশীরা নেই বুঝি?”
-“তা আছে বৈকি…কিন্ত্ত এই জেট যুগে সকলে যে নিজের নিজের মতো করে ব্যস্ত আর তাই…”
-“বুঝলাম আর তাই অবসর সময়ে কথা বলে সময় কাটানোর মতো কাউকে পান না কি তাই তো?…”
-“নাহ…আর তাই এই মূহুর্তে সোশ্যাল মিডিয়াই আমার সুখ দুঃখের একমাত্র সঙ্গী!!!”
-“বেশ আর বনানীর সাথে আলাপ কিভাবে শুনি?”
-“সেই সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতেই বলতে পারেন।”
-“বেশ তারপর?”
এখন এ পর্যন্তই আবার দেখা হচ্ছে আগামী পর্বে। কেমন লাগছে বন্ধুরা জানাতে ভুলবেন না কিন্ত্ত? আমার মেল আইডিটা জানা আছে তো? আমার কোনও পাঠক যদি যৌন অতৃপ্তির শিকার হয়ে একাকিত্বে ভোগেন তারা চাইলে জানান আমাকে লাইভ অ্যান্ড এক্সক্লুসিভ অনলি অন es4sudden@gmail.com এ।

Exit mobile version