Kamdever Bangla Choti Uponyash – 38th part
পথিক পথ চলে,চলাই তার ধর্ম।খানা খন্দ চড়াই উৎরাই ভেঙ্গে চলতে থাকে।অন্তরালে এক বাজিকর সুতো ধরে বসে থাকে কখনো ডাইনে কখনো বায়ে সুতোর টানে গতি নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে।এক সময় দু-বেলা খাওয়া জুটতো না নিয়মিত সেই রত্নাকরের হাতে এখন অনেকটাকা।সপ্তাহে অন্তত দু-দিন হাতে কাজ থাকে।কোনো কোনোদিন দুটো কেসও করতে হয়।
আম্মাজীর ইচ্ছে নয় তার বাচ্চা এত ধকল নেয়।সেদিন সবাই অবাক হয়ে পরস্পর মুখ চাওয়া চাওয়ি করেছিল যেদিন রত্নাকর চ্যারিটি ফাণ্ডে এক হাজার টাকা দিল।সবাই কিছু না কিছু দিয়েছে রত্নাকর কিছু দিতে পারেনি মনে মনে একটা খেদ ছিল।আড়চোখে দেখে বুঝেছে উমাদার মনে কিছু প্রশ্ন চুলবুল করছে ।রত্নাকর তার আগেই বলল,আমি জানি তোরা ভাবছিস এত টাকা কোথায় পেল?
নানা প্রশ্নে জেরবার করে রতিকে অপমান করার জন্য জিভ চুলকাচ্ছে,তাই না?
–ফালতু কথা বলছিস কেন?তোকে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করেছে?বঙ্কা ঝাঝের সঙ্গে বলল।
উমাদা প্রশ্ন করার ভরসা পায়না।অন্য প্রসঙ্গে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,তুই কি লেখালিখি ছেড়ে দিয়েছিস?
চায়ে চুমুক দিতে গিয়ে বিষম খায়,চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসে।কেউ বুঝতে পারল না চোখে কেন জল এল।হেসে বলল,তুমি কিযে বলো,না লিখলে আমি বাচব?
আবার মিথ্যে কথা বলল।গত তিনমাস এক লাইন লেখেনি শুধু সোসাইটি আর ইলাজ নিয়ে পড়েছিল।নানা ভাষা নানা ধর্ম নানা বয়স–কোন বাছ বিচার করেনি।রোবটের মত হয়ে গেছে।চেহারায় জেল্লা এসেছে,পকেটে টাকা থাকলে শরীর মন ভাল থাকে।মিলনে এখন আর সুখ পায়না।রত্নাকর উপলব্ধি করেছে যেখানে ভালবাসা নেই সেখানে শারীরি মিলন নিরস নিষ্প্রাণ।
তাদের বাড়ীটা চারতলা অবধি ঢালাই হয়ে গেছে।ব্রিক ওয়ার্ক শুরু হয়েছে।আলপনা বৌদি নাকি মাঝে মাঝে আসে।বঙ্কার কাছে শুনেছে,সুদীপ নাকি তনিমার সঙ্গে প্রেম কেটে যাবার পর পারমিতার পিছনে ঘুর ঘুর করছিল।একদিন বাস থেকে নেমে বাসায় ফিরছিল পারমিতা।সুদীপ জিজ্ঞেস করল,কোথায় গেছিল?পারমিতা বলল,জানা কি খুব জরুরী? সুদীপ বলল,তুমি খুব বিরক্ত হয়েছো মনে হচ্ছে?
পারমিতা বলল,বুঝেছো তাহলে?সুদীপ ক্ষেপে গিয়ে বলল,রতির সঙ্গে কথা বললে তো বিরক্তি হয় না?পারমিতা দাঁড়িয়ে পড়ে পিছন ফিরে হাসল বলল,রতির কথা কেন? তুলনা হয় সমানে সমানে।বঙ্কার কাছে এই গল্প শুনে গ্লানিতে ভরে যায় মন।পারমিতা জানেনা যে রতিকে ও চিনতো সেই রতি আর নেই।এই গোলোকধাধা থেকে কোনোদিন বেরোতে পারবে রত্নাকর ভাবে না।সোসাইটির সঙ্গে ওতপ্রোত জড়িয়ে গেছে রত্নাকরের জীবন।আম্মাজীর হাতে তার জীয়ন কাঠি। বেরিয়ে আসার সামান্যতম ছিদ্র তার নজরে পড়েনা।কিভাবে অবিশ্বাস্য বাক নিল রত্নাকরের জীবন মুহূর্তাকাল আগেও কল্পনা করতে পারেনি।
পরীক্ষার রেজাল্ট বেরিয়েছে।বন্ধু-বান্ধব সবাই পাস করেছে।সুদীপ একটা বিষয়ে ব্যাক।বঙ্কাও পাস করেছে।এত ঝামেলার পর অনার্স বজায় রেখেছে রত্নাকর,সবাই বলাবলি করছে।
একদিন পঞ্চাদার দোকানে আড্ডা দিচ্ছে এমন সময় সবাইকে অবাক করে পারমিতা রাস্তা থেকে তাকে ইশারা করে ডাকল।রত্নাকর উঠে কাছে যেতে বলল,রতি আমি খুশি হয়েছি।রত্নাকরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে এক মুহূর্ত না দাড়িয়ে হনহন করে চলে গেল।বিমর্ষ মুখে দোকানে ফিরে আসতে লক্ষ্য করল সবাই রুদ্ধশ্বাসে তাকে দেখছে কিন্তু কেউ কোনো প্রশ্ন করল না।রত্নাকর এক কোনে বসে তর্জনী দিয়ে টেবিলে আঁক কাটতে কাটতে ভাবতে থাকে নিজেই নিজের জীবনটাকে নষ্ট করে ফেললাম।নুনের পুতুলের মত সাগরের জল মাপতে গিয়ে নিজেই হারিয়ে গেলাম সাগরে।
বঙ্কা সান্ত্বনা দিল,রতি কি ভাবছিস ফালতু,ওর কথায় কিছু মনে করিস না মেয়েটা খুব ফাটুশ।ওর কথা ছাড়তো, সুদীপকেও একদিন যা-তা বলেছিল।
রত্নাকর ম্লান হাসে।ওরা জানেনা পারমিতা কি বলেছে আর কেনই বা তার মন খারাপ? কালকেই সোসাইটিতে ডেট আছে।পারমিতা জানতে পারলে মুখটা কেমন হবে ভেবে শিউরে ওঠে।
উমানাথ চ্যারিটি থেকে মুখ ব্যাজার করে ফিরল।বেলাবৌদি প্রস্তাব দিয়েছিল,কৃতি ছাত্রদের সম্বর্ধনা দেওয়া হোক চ্যারিটির পক্ষ থেকে।শরদিন্দু ব্যানার্জি আপত্তি করলেন। বিষয়টা চ্যারিটির সঙ্গে মিলছে না।
শুভ জিজ্ঞেস করল,ডাক্তারবাবু এসেছিলেন?
–কোথায় কলে গেছিলেন,যাবার পথে ঘণ্টা খানেক কাটিয়ে গেলেন।
–উনি একা বললেই ত হবেনা।হিমেশ বলল।
–সকলে ডাক্তারবাবুর কথায় তাল দিল।বলল শুধু কৃতি নয় দুস্থ এবং কৃতি হতে হবে। উমাদা কথাটা বলে বলল,ছাড় ওসব।সবাইকে অভিনন্দন, চা বল।সুদীপকে দেখছি না।
–রেজাল্ট বেরোবার পর থেকেই দোকানে আসছেনা।
–তাহলে আমাদেরই একদিন ওর বাসায় যেতে হয়।উমাদা বলল।এত ভেঙ্গে পড়ার মত কি হল?
মোবাইল বাজতে রত্নাকর দেখল স্ক্রিনে আর এস।মোবাইল কানে লাগিয়ে বাইরে বেরিয়ে বলল,হ্যালো?
–আনন্দ?
–বলছি বলুন।
–কাল দুটো পেশেণ্ট হলে অসুবিধে হবে?
–সময়ে কুলোলে দুটো-তিনটে আমার অসুবিধে নেই।
ওপাশ থেকে খিলখিল হাসি শোনা গেল।মনে হচ্ছে রাগিনী ম্যাম।আর কিছু বলবেন?
–খুব ব্যস্ত নাকি?
–না না বলুন।
–পেশেণ্টের সঙ্গে নিজের কথাও ভাবুন। আম্মাজীকে আবার এসব বলবেন না–।
–ঠিক আছে রাখছি?
–আমার সঙ্গে কথা বলতে বিরক্ত হচ্ছেন?
–না তা নয়,আমি এখন রাস্তায়।
ফোন রেখে দোকানে ঢুকতে বঙ্কা জিজ্ঞেস করে,কে রে?
–ফালতু ফোন,কে জানে কোথায় নম্বর পেল।
–অতক্ষন কথা বললি কেন?খিস্তি দিয়ে ছেড়ে দিবি তো।
–উমাদা আজ আসি,একটু লেখালিখি করার আছে।
বাস রাস্তায় এসে একটা ভাল হোটেলে ঢুকল।ফুটপাথের হোটেলে এখন খায়না।রুটী কসা মাংসের ফরমাস করে।হঠাৎ নজরে পড়ল কাউণ্টারের কাছে টিফিন ক্যারিয়ার হাতে দাঁড়িয়ে কৃষ্ণকলি ম্যাম।রত্নাকরের বুঝতে অসুবিধে হয়না ম্যাম এখান থেকে খাবার নিয়ে যান।একা মানুষ বাড়ীতে রান্নার পাট রাখেননি।টেবিলে খাবার দিতে খাওয়ায় মন দিল রত্নাকর।মহিলা সম্ভবত তাকে দেখেনি।না দেখাই ভাল,সোসাইটিতে যোগ দেবার পর থেকেই একটা স্বাতন্ত্র রক্ষা করে।বেশি লোকের সঙ্গে আলাপ পরিচয় এড়িয়ে চলে।খাওয়া শেষ হতে দেখল মহিলা কাউণ্টারে নেই।
মুখ ধুয়ে দাত খুচুনি নিয়ে কাউণ্টারে পয়সা মিটিয়ে অটো ধরার জন্য রাস্তায় এসে দাড়াল।
–তোমাকে কোথায় দেখেছি বলতো?
চমকে তাকিয়ে দেখল কৃষ্ণকলি ম্যাম।কোথায় দেখেছি,ন্যাকামী হচ্ছে?বাইরে তার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন।রত্নাকর চিন্তিতভাবে বলল,ঠিক মনে করতে পারছি না।
–তুমি সোসাইটিতে যাও?
পথে এসো।ধীরে ধীরে খোলস খুলছে।রত্নাকরের হঠাৎ যেন মনে পড়ে গেছে এমনভাবে বলল,ও হ্যা আপনি ওখানে ধ্যান করতে যান,তাই না?
–একদিন এসো না আমার কোয়ার্টারে,আলাপ করা যাবে।
–আমার অটো এসে গেছে।আসি?
রত্নাকর অটোয় চেপে বসল।মুখ বাড়িয়ে পিছনে দেখল কৃষ্ণকলি তাকিয়ে আছেন। রত্নাকর হাত নাড়ল।কৃষ্ণকলির মুখে হাসি ফোটে,তিনিও হাত নাড়তে লাগলেন।
অটো ছুটে চলেছে সর্দারপাড়ার দিকে।তিন চার মাস আগে যখন খাওয়া জুটতোনা তখন বাড়ী যেতে বললে রত্নাকর মুহূর্ত বিলম্ব করতো না।এখন সে আর আগের মত নেই,তার এখন সোসাইটিতে অনেক খাতির।
ফ্লাটের সামনে আসতে ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়ল।ছুতোর মিস্ত্রীরা যথারীতি বিড়ী টানতে টানতে তাস খেলায় মগ্ন।রত্নাকর দোতলায় উঠে এল।তালা খুলে ঘরে ঢুকে হ্যারিকেন জ্বালল। কাল দুটো ইলাজ করার কথা বলল,কিন্তু রিপোর্টিং সময় কি সেই একই?এই ব্যাপারে তো কিছু বলেনি।সুইচ টিপে মোবাইলে সময় দেখল,সাড়ে-দশটা।উপন্যাস লেখা খাতাটা নিয়ে চোখ বোলাতে লাগল।
উমাদা বলছিল লেখালিখি ছেড়ে দিয়েছে কিনা?নতুন করে লেখা শুরু করবে ভাবছে।এবারের গল্পের নায়িকা কৃষ্ণকলি। মহিলার মনে অনেক বেদনা জমে আছে মনে হল।মহিলা অধ্যাপিকা, বিদুষী মনের চাহিদা অনেক বেশি। কেবল ধ্যান করেই মনে শান্তি আসেনা। চাহিদা থাকলেই বেদনা জমে।ময়নারা এদিক দিয়ে অনেক খুশি।মোবাইল বেজে উঠতে দেখল, অজানা নম্বর।এতরাতে আবার কে ফোন করল?মোবাইলে অনেক সুবিধে আবার ঝামেলাও কম নয়।কানে লাগাতে শুনতে পেল,শুয়ে পড়েছেন?
–কে বলছেন?
–হি-হি-হি রাগিনী।গলা শুনে বুঝতে পারছেন না?
–ও আপনি?আচ্ছা কাল কখন যেতে হবে?
–ঐ একটার সময়ে আসবেন।প্রথমে ভার্জিন তারপর একটু বিশ্রাম করে আরেকটা।
ভার্জিন?রত্নাকর অবাক হয়,তারমানে বেশি বয়স নয়।বিয়ের আগেই কেন এমন ইচ্ছে হল কে জানে?রাগিনীর তো তার নম্বর জানার কথা নয়,পেল কোথায়?
–আচ্ছা আপনি আমার নম্বর কোথায় পেলেন?
–হি-হি-হি ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়।আনন্দ আপনি আবার আম্মাজীকে বলবেন না যেন।বিশ্বাস করে আপনাকে বললাম।
— আমাকে বিশ্বাস করা যায় কেন মনে হল?
–লাইনে তো কমদিন হলনা।মুখ দেখে এটুকু অন্তত বুঝতে পারি।
–আমাকে ফোন করলেন কেন?
–এমনি।ইচ্ছে হল তাই।আমার সঙ্গে কথা বলতে ভাল লাগছে না?
–এখন শুয়ে পড়ুন।
–উপায় নেই–নাইট ডিউটি।একদিন ভাবছি আপনার সঙ্গে সিটিং করব।হি-হি-হি।
–ঠিক আছে,নাম রেজিস্ট্রি করুন।
–আনন্দ এত অহঙ্কার ভাল না।
–অহঙ্কার নয়, আমি নিয়মের কথা বললাম।
–নিয়মের বাইরেও অনেক কিছু হয়–।
–বুঝলাম না।
কয়েক মুহূর্ত নীরবতা তারপর বলল,থাক,গুড নাইট।
ফোন রেখে দিল।রাগিনী রাতে সিটিং করবে?প্রচুর ইনকাম মহিলার,শুনেছে হোল নাইট চার্জ অনেক বেশি। নিয়মের বাইরে অনেক কিছু–কি ইঙ্গিত করল রাগিনী?আম্মুর ব্যাপারে কিছু নয়তো?ঝামেলায় জড়াবো না বললেই হবেনা ঝামেলাই এসে জড়িয়ে ধরবে।পর মুহূর্তে রত্নাকর ভাবে সেতো একেবারেই উলঙ্গ হয়ে গেছে তার আবার ভয় কি? ইলাজের সময় লক্ষ্য করেছে রাগিনী বারবার ঢুকে দেখে।প্রথম প্রথম লজ্জা করত এখন সেসবের বালাই নেই।বয়স হলেও ফিগারটা এখনও ভাল রেখেছে।কেননা ফিগারটাই এখানে আসল।ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে।উপন্যাসটা মাথার কাছে সরিয়ে রেখে শুয়ে পড়ল রত্নাকর।