Site icon Bangla Choti Kahini

নিষিদ্ধ প্রেম পর্ব ২

আগের পর্ব

বাড়িতে তো এসে পড়লো কিন্তু বড্ডো মন খারাপ হতে লাগলো আজকে থেকে অয়নকে এই ৪ দেয়ালের মধ্যে বন্দি থাকতে হবে এখন থেকে আর দেখা হবে না বন্ধুদের সাথে মাঠে খেলতে যাওয়া হবে না। এই সব ভাবতে ভাবতেই অয়ন বেল বাজালো। সূর্যদা আবার অফিসে চলে গেছে খাওয়া দাওয়া করে, নিজের অফিসে চলে গিয়েছে। বেল বাজানোর কিছুক্ষন পর দরজা খুলে দিলো সঙ্গীতা বৌদি। সঙ্গীতাকে দেখে অয়নের অবস্থা খারাপ হবার জোগার। শুধু একটা নাইটি পড়া অয়নের বাবা থাকতে একটা সালোয়ার কামিজ পড়ে ছিলো এখন নাইটিতে দেখে অয়ন চিনতেই পারছে না এইটা সঙ্গীতা কিনা। অয়নের ইচ্ছা করছিলো এখনই সংগীতাকে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু সেটা ও পারলো না। নিজের ইচ্ছাকে দমিয়ে রেখে ও ঘরে ঢুকলো,
সঙ্গীতা জিজ্ঞেস করলো,
“কাকাবাবুকে কি ট্রেন এ বসিয়ে দিয়েছো?”

অয়ন শুধু হ্যা বললো। আর কিছু না বলে ঘরে চলে গেলো। অয়নের মনে হয়ে সুন্দরীদের সামনে বেশি থাকতে নেই এতে সুন্দরীদের দেখার নেশার লেগে যায়। অয়ন নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। তারপর সারাদিনের ধকল কাটাতে বিছানাতে একটু গাটা এলিয়ে দিতে কখন যে চোখ লেগে যায় সেটা বলা যায় না। উঠে দেখে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি করে ধরমড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়ে অয়ন। সময়টা এখন খুব কঠিন এখন থেকে একটুও সময় নষ্ট করা যাবে না ওকে পড়তে হবে। যাই হোক ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে বই গুলো গুছিয়ে ও পড়তে বসে পড়ে। বারান্দার দরজা খোলা বাতাস আসছে মৃদু। পড়তে বেশ ভালোই লাগছে। এইভাবে কতক্ষন পড়ার পর ওর সামনে চায়ের কাপ রাখলো সঙ্গীতা। অয়ন ওর টেবিলে রাখা হাতকে ফলো করে হাতের মালকিনের মুখের দিকে তাকালো অয়ন। তাকাতেই দেখলো সুন্দর একটি মুচকি হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সঙ্গীতা। ওকে অয়ন আরেকটা দফা প্রেমের সাগরে পড়লো। অয়ন তাড়াতাড়ি করে চোখ সরিয়ে ফেললো। অয়ন জিজ্ঞেস করলো,
“ধন্যবাদ বৌদি। এই চায়ের কহিব দরকারি ছিলো। আপনি দাঁড়িয়ে কেন বসুন না।”
“বলছো বসতে?”
“আরে আপনাদের ঘরই তো আপনারা আসবেন বসবেন নাতো কে আসবে?”
“ঠিক আছে তোমার কথা রাখলাম। ”

সঙ্গীতা বসে পড়লো খাটে। এই সময়ের মধ্যে অয়নও চায়ে চুমুক দিয়েছে। অয়নের চাটা খুব ভালো লেগেছে তাই বললো,
“খুব ভাল হয়েছে বৌদি চাটা এইভাবেই বানিয়ে খাওয়াতে থাকলে আর আমার বাইরের চা ভালো লাগবে না।”
“ভালো লাগবে বাইরের চা তোমার?”
এই কথা শুনে অয়ন কিছুটা অবাক হলো, আর বললো,
“কেন?”
“কারণ এই চা আর তুমি খেতে পারবে না।”

এই কথা শুনে অয়নের আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা ও সাথে সাথে জিজ্ঞেস করলো,
“কেন বৌদি আমি কি করলাম?”
“তুমি আমাকে আপনি আপনি করছো যা আমার একদম পছন্দ না। আমাকে তুমি বলতে হবে তাহলে চা পাবে।”
“কিন্তু বৌদি আপনি তো বড়ো।”
“আরে রাখো তো তোমার বড়ো কতই বা বড়ো হবো বেশি বড়ো হবো না। তুমি আমাকে তুমি বলবে।”

অয়ন বেচারা আর কিছু বলতে পারলো না সঙ্গীতার মুখের ওপর।  শুধু বললো,
“ঠিক আছে বৌদি। তুমি করে বলবো।”
“এইতো গুড বয় এখন মন দিয়ে পড়াশোনা করো আমি যাই।”

এই বলে কোমর দুলাতে দুলাতে সঙ্গীতা চলে গেলো। এইটা হয়তো আপনার ভালোবাসার মানুষ বা আপনি যে নারীকে চান তার শক্তি। যে কথা অন্য কেও বললেও আপনি শুনতেন না, কিন্তু আপনি আপনার জীবনের সেই বিশেষ নারীটির কথা শুনে সেই কাজ করে করেন। অদ্ভুত এক ক্ষমতা। অন্য কেও হাজার বললেও কখনো তাকে আপনি ছাড়া অন্য কিছু বলে সংবোধন করতো না, কিন্তু সঙ্গীতার একটা কথায় সঙ্গীতাকে তুমি বলতে রাজি হয়ে গেলো। এই সব ভাবছিলো।

এর মধ্যে দেখলো অলরেডি রাত ৮টা বাজছে। অয়ন আবার পড়ার মধ্যে ডুব দিলো। সূর্য আসলো অফিসে থেকে রাত ৯:৩০ এ আর ও যায় সকাল ১০ টায়। কাজের চাপ কম থাকলে ঘরে এসে খেয়ে যায়। আজকে সূর্য সঙ্গীতা আর অয়ন এক সাথে খেতে বসলো। খেতে বসে নানান কথা হলো সূর্য গ্রামের দিন গুলোর কথা ভেবে স্মৃতিচারণ করলো। আর নিজের কাটানো সময় নিয়ে বললো। অয়ন ও নানান কথা বললো, এর মাঝেই সূর্য বলে উঠলো,
“অয়ন তোর তো বই লাগবে না পড়ার জন্য তুই না হয় একদিন সময় করে নিয়ে চল যাই বই গুলো কিনে নিয়ে আসবো, কি বলিস।”
“হ্যা দাদা তাহলে খুব ভালো হয়। ”
“আচ্ছা আমি যেইদিন তোর সময় হবে আমাকে বলিস আমি যাবো তোর সাথে।”

এইভাবে নানান কথায় রাতের খাবার খেলো ওরা। খাবার শেষ করে অয়ন ওর ঘরে এসেছে পড়লো। আর পড়তে শুরু করলো। সঙ্গীতা আর অয়নও খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো। এই বাসাটা একেবারে নিরব কোনো বাচ্চা কাচ্চা না হওয়ার জন্য এই বাড়িতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে মনেই হয় না কোনো মানুষ বসবাস করে। আজকে অয়নের ঘুম আসছে না। আসবেই বা কি করে গ্রামের টিনের ঐ ঘরটা বৃষ্টির শব্দ বাতাসের শব্দ রাতে জোনাকি পোকার মেলা আর ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক শুনে যে অভ্যস্ত তার কি ইট পাথরের জায়গায় ভালো লাগবে। কিন্তু কিছু করার নেই মানুষ পরিবর্তনশীল মানুষ বদলায়, ক্ষনে ক্ষনে বদলায় পেটের তাড়নায় না হয় অন্য কিছুর তাড়নায় কিন্তু বদলায় অয়নকেও বদলাতে হবে ওর স্বপ্নের জন্য

। পড়তে পড়তে মাথা ব্যাথা করতে শুরু করেছে অয়নের তাই আর বেশি না ভেবে বেলকনির দিকে পা বাড়ালো। যদি সেখানে গিয়েএকটু ভালো লাগে। রাত তখন প্রায় ২:৩০ এখনও দূরে গাড়ি চলার শব্দ ভেসে আসছে কিন্তু এইখানে অনেকটা শান্ত বলা যায়। বেলকোনিতে একটা চেয়ার পাতা আছে বসার জন্য। সেখানে গিয়েছিলাম বসলো, অয়ন। অয়ন দেখলো গোলাপ গাছে ফুল ধরতে শুরু করেছে কয়েকদিনের মধ্যেই একটা সুন্দর গোলাপ ফুল ফুটবে। এই বেলকনি অন্য অনেক বেলকনির থেকে আলাদা এইখানে অনেক গাছ লাগানো। এলোভেরা, গোলাপ, আর কয়েকটা ছোট ছোট গাছ লাগিয়েছে বৌদি। বৌদির লাগানো ফুল গাছের কথা ভাবছিলো অয়ন। কিন্তু যখন ওর মাথায় বৌদি আসে তখন ও কিছুটা অবস হয়ে যায়। ও আর কিছু ভাবতেই পারে না।

সঙ্গীতার হাসি গোলাপের পাপড়ির মত মিষ্টি, চোখ দুটি হরিণীর মত মনোমুগ্ধকর, আর চুলের ঝিরি নদীর মতই স্রোতস্বিনী, যা অয়নকে পাগল করে তোলে। তার সৌন্দর্য এতই অপরূপ যে, মনে হয় কোনো কবি তার সৌন্দর্য বর্ণনা করতে ব্যর্থ হয়ে যাবে। এই সব ভাবছিলো এক মনে অয়ন।অয়নের মন সারাক্ষণ সঙ্গীতার কথাই বলে। সেই থেকে যখন সঙ্গীতার সঙ্গে তার দেখা হয়েছে, তখন থেকেই তার হৃদয় সঙ্গীতার নামে লেখা। এই অনুভূতি ঠিক কি ভুল সেই দ্বন্দে অয়ন পড়তে চায় না, অয়ন শুধু এই মুহুর্তটাকে উপভোগ করতে চায়, কথায় আছে না,
“প্রেম করার চেয়ে প্রেম পড়ার মুহুর্তটা সব চেয়ে সুন্দর। ”
অয়ন ঐ মুহূর্তটাকে উপভোগ করছে। এর মাঝে,
এক মেয়েলি কণ্ঠ বলে উঠলো,
“এতো রাতে এইখানে বসে কি ভাবা হচ্ছে শুনি? পড়া কি শেষ?”

অয়ন নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসেছে দেখলো, স্লীভলেস নাইটি পড়া চুল গুলো খুলে দাঁড়িয়ে আছে এক অপ্সরা। তাড়াতাড়ি করে নিজেকে সামলে নিলো অয়ন। আর জবাব দিলো,
“এইতো একটু বোর লাগছিলো আর পড়াও শেষ তাই এইখানে এসে বসে আছি।”
“তা রাত তো অনেক হলো ঘুমাবে না?”
“হ্যা আসবো কিন্তু খুব একা লাগছে নিজেকে।”
এই কথা শুনে সঙ্গীতা বললো,

“তাড়িয়ে দিয়ো আমায়, নিশুতিরাতের তারা,
তাড়িয়ে দিও আকাশ, তাড়িয়ে দিও মেঘ,
আমারও খুব পা বাড়িয়ে, হারিয়ে যাবার তাড়া।

রাত্রি বলেই অন্ধকারে, আমার ভীষণ ভয়,
যদি ভুলে যাওয়া স্মৃতির সাথে হঠাৎ দেখা হয়,

মানুষ জানে, বাড়লে রাত্রি, মানুষ একা হয়!”

অয়ন মন্ত্রমুগ্ধের মতো সঙ্গীতার বলা লাইন গুলো শুনে গেলো। আহঃ কি মধুর শোনাচ্ছে ওর মুখে।
অয়ন বললো,
“বাহ্ বৌদি তুমি তো খুব সুন্দর আবৃত্তি করো। এই রকম আমি আর কখনো শুনিনি। ”
এই কথা শুনে সঙ্গীতা হেসে দিলো আর বললো,
“হয়েছে হয়েছে আমাকে আর পাম দিতে হবে না ফুলে যাবো।”
“সত্যি বলছি অনেক বৌদি অনেক সুন্দর হয়েছে।”
“আচ্ছা মানলাম।”
“আমি একটা প্রশ্ন করি?”
“হুম বলো?”
“রাত বাড়লে মানুষ একা হয়, তুমি কিভাবে একা হলে তোমার কাছে তো দাদা আছে।”

এই কথা শুনে সঙ্গীতার মুখটা মলিন হয়ে গেলো।
আর বললো,
“আমরা সবাই সুখে থাকার অভিনয় আমরা কেও সুখী নয় বুঝলে।এখন যাও যাও এইখানে বসে থাকতে হবে না। ঘুমাও গিয়ে আমিও ঘুমিয়ে পরি।”
অয়ন সঙ্গীতার কথায় কিছুটা আচ করতে পারল যে কিছু একটা আছে। কিন্তু আর কথা বাড়ালো না। অয়ন আর সঙ্গীতা দুইজন দুইজনকে শুভরাত্রি বলে নিজ রুমে চলে আসলো। অয়ন এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। অয়নের মনে প্রাণে শরীরের সব জায়গায় এখন শুধু সঙ্গীতা। এইসব ভাবতে ভাবতেই অয়ন ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।

অয়ন কি পারবে নিজের ভালোবাসার মানুষকে আপন করে নিতে। নিজের অনুভূতি কি বলতে পারবে?

চলবে

এই গল্প যদি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। যদি কোনো মতামত থাকে জানাতে ভুলবেন না। আমাকে ইমেইল করতে পারেন al3807596@gmail.com অথবা টেলিগ্রাম এ এসএমএস দিতে পারেন @Paradox78789 এই নামে। আপনাদের এসএমএস এ আমি উৎসাহ পাই। তাই আমাকে বেশি বেশি করে উৎসাহ দিবেন এই আশা করি।

Exit mobile version