অবিনাশবাবু – ছেলে ও বৌমার আদরের সংসার – পর্ব ১

প্রথম ভাগ। অবিনাশবাবু ফ্রান্সে

অবিনাশ বাবু বেশ কিছুদিন হল, ছেলের বাড়ি ফ্রান্সে বেরাতে এসেছেন। অবিনাশ বাবুর এক ছেলে অমিত, ইঞ্জিনীরিং পাশ করে ফ্রান্সে চাকরী পেয়ে চলে আসে। গত দশ বছর যাবদ ফ্রান্সেই আছে। অবিনাশ বাবু বহুদিন হল, বিপত্নীক, কলকাতায় একা একা থাকে। ছেলে অমিত বহুবার বাবাকে ফ্রান্সে ওর নিজের কাছে নিয়ে আসতে চেয়েছে। কিন্তু অবিনাশ বাবু আসেন নি। বলে তোর ওখানে গিয়ে কি করব? তুই রোজ অফিস চলে যাবি, আর আমি ঘরে একা একা বসে থাকব। বরং এখানে থাকলে আমার বন্ধু-বান্ধব্দের সাথে আড্ডা মারা যায়। অবিনাশ বাবুর বয়স এখন মধ্য পঞ্চাশ, এইসবে ইচ্ছা অবসর নিয়েছেন। একা একা আর কাড় জন্য রোজগার করবেন?

আবিনাশ বাবুর ছেলের বয়স এখন আঠাশ। গত বছর একজন ফরাসী মেয়েকে বিয়ে করেছে, নাম জেসিকা। জেসিকার মা অবশ্য বাঙালি বাবা ফ্রেঞ্চ। অবিনাশবাবু শুনেছিলেন, জেসিকার মা ছোট বেলা থকেই ফ্রান্স-এ বসবাস করেন। জেসিকার মা বাঙালি হওয়াতে জেসিকা খুব ভালই বাংলা কথা বলতে পারে। অবশ্য বাংলা টোন টা একটু আলাদা। ওইটাই হওয়া স্বাভাবিক। অবিনাশের সাথে ভিডিও কল এ কথা বার্তা হয়েছে। জেসিকা দেখতে খুব সুন্দরী। ইংরাজি ভালই বলতে পারে। জেসিকার মায়ের ছবিও দেখেছেন। ভদ্রমহিলা বাঙালি হলেও দেখতে বেদেশি দের মতোই। কেউ বলে না দিলে বা বাংলা ভাষায় কথা না বললে বঝা যাবে না উনি বাঙালি। তবে বহুদিন ধরে বাইরে বসবাস করার জন্য তারা হাবেভাবে বেদেশি দের মতোই।

ছেলে আর ছেলের বৌ দুইজনেই এক অফিসে কাজ করে। এই বছর দুইজনেই খুব জিদ ধরেছে যে অবিনাশ বাবুকে ফ্রান্সে আসতেই হবে আর ওদের সাথে থাকতে হবে। এইবার আর না করতে পারেননি। সত্যি কথা বলতে অবসর নেওয়ার পর আর একা একা থাকতে ভালই লাগছিল না। তাই অবিনাশ বাবু ভিসা নিয়ে ছেলের বাড়ি চলেই এলেন। ছেলের সুন্দর একটা দোতলা বাড়ি কিনেছে, বাড়ীর পেছনে একটা লন ও সুইমিং পুল আছে। ঝা চকচকে বাড়ি। সুন্দর আসবাব পত্র। দেখে বোঝাই যায়, অবিনাশ বাবুর ছেলে অমিতের ইনকাম খুব ভালোই। অবিনাশবাবুকে কাছে পেয়ে অমিত আর ওর বৌ জেসিকাও খুব খুশি। বিদেশী হলে কি হবে, অবিনাশ বাবুর খুবি ভালো লেগেছে নিজের বউমাকে। আসার পর থেকে খুব খেয়াল রাখছে অবিনাশ বাবুর। অবিনাশবাবুর বেশ ভালই লাগছে।

দুইজনে সকাল সকাল অফিসে চলে যায় আর সন্ধ্যে নাগাদ একসাথে বাড়ি ফেরে। মাঝে মাঝে বউমা জেসিকা আগে আগেই ফিরে আসে। তখন অনেকক্ষণ ধরে অবিনাশ বাবু আর জেসিকা গল্প করতে থাকে। অবিনাশ বাবুর মুখে, কলকাতার গল্প শোনে। শনিবার আর রবিবার দুইজনের ছুটি থাকে। ওই সময় সবাই মিলে কোথাও না কোথাও বেরাতে যায়। অবিনাশ বাবুর বৌমা বিদেশী হওয়াতে একটু খলামেলা পোশাক-আশাক পরে। বাড়ীতে জেসিকা একটা ছোট প্যান্ট আর টপ পরে। জেসিকার চেহারা একজন মডেলের মতো। যেমন পাছা তেমনি বুকের গড়ন। যদিও বউমা, তুবুও অবিনাশবাবু যেন চোখ ফেরাতে পারেন না। মাঝে মাঝে অবিনাশবাবুর মনে হয়েছে, বউমা আর ছেলে ভালই তবে কেন জানি, অবিনাশ বাবু আসাতে ওদের মধ্যে কিছুটা আড়ষ্টতা আছে। অবিনাশবাবু চিন্তা ধারায় খুবি আধুনিক। তবুও কোথাও তার মনে হয়েছে, হয়তো তিনি না থাকলে, জেসিকা আর অমিত নিজেদের মধ্যে খোলা মেলা ভাবে থাকতে পারত। ওর জন্য হয়তো সব সময় থাকতে পাচ্ছে না।

অবিনাশ বাবুর খুব বলতেও ইচ্ছে করছিলো ওদের যে, তোরা যেমন ছিলিস আমার আসার আগে তেমন থাকিস। আমাকে দেখে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। আমি তো বাবা। তুবু এইটা বলতেও পারছিলেন না। একদিন এই ধারনাটা আরও পরিস্কার হল, যেদিন না চাওয়াতেই অবিনাশ বাবু অমিত আর জেসিকার মধ্যে কথোপকথন শুনতে পেলেন। জেসেকি অমিতকে বলছে, তোমার বাবা খুবি ভালো মানুষ, আমার খুবি ভালো লাগে। উনি বয়স্ক হলেও চিন্তা ধারা খুবি আধুনিক। কিন্তু কিছু মনে কর না, ওনার এখানে এতদিন থাকাতে আমার একটু চলা ফেরায় অসুবিধা হচ্ছে। তুমি জান, আমি ঘরে একটু খোলামেলা থাকতে ভালবাসি। উনি এসে পরায় আমি সেইটা থাকতে পাচ্ছি না।

শুধুই মনে হচ্ছে বাবা যদি কিছু মনে করেন। তাছাড়া আমরা আগে সারা ঘরেই সেক্স করতাম, এখন তাও করতে পাচ্ছি না। তুমি জান আমি খোলামেলা সেক্স করতে ভালবাসি, শুধু ঘুমের আগে বিছানায় নয়। রান্না ঘরে, লিভিং রুমে, সুইমিং পুলে। এখন সেইটাও বন্ধ। জেসিকার এই কথা শুনে অমিত বলল, সে তো আমিও বুঝতে পারছি, কিন্তু বাবাকে কি বলব? তাছাড়া সত্যি কথা বলতে আমরা জোর করেছি বলেই বাবা এখানে এসেছেন। না হলে তো আসতেই চাইছিল না। এখন কি বলব, তোমার আসায় আমাদের চলাফেরায় অসুবিধা হচ্ছে?এই কথার উত্তরে জেসিকা বলল, আমি বলছি না যে উনি চলে যান। কিন্তু বুঝতেও পারছি না। ওনাকে আমার খুবি ভালো লাগে। বাবার এখানে থাকাতে আমার কোন অসুবিধা নেই। উনি বরাবর আমাদের সাথেই থেকে যেতে পারেন। কিন্তু সত্যি ভালো হত, যদি আমারা আমাদের নিজেদের মতোন করে চলতে পারতাম আর উনিও আমাদের সাথে থাকতেন। ওদের এই কথাবার্তা অবিনাশ বাবুকে দ্বিধায় ফেলে দিলো। সত্যি তো, সবে একবছর বিয়ে হয়েছে, কতো আনন্দ ফুর্তি করবে,তা না অবিনাশ বাবু ওদের সাথে সব সময় থেকে ওদের অসুবিধার কারণ হচ্ছে। অবিনাশ বাবু স্থির করল, উনি চলেই যাবেন। ওদের উপর রাগ করে নয়, খুশি মনেই।

ওরা সত্যি অবিনাশ বাবুকে ভালবাসেন। কিন্তু ওদের এই বয়েসে একটু ফ্রী স্পেস ও দরকার। সত্যি কথা বলতে বাইরে বাবা মায়ের সাথে ছেলে-মেয়েরা সংসার করে না। নিজেদের প্রাইভেট লাইফ থাকে। তুবুও তো জেসিকা ওকে আপন করে নিয়েছে। কি মিষ্টি মেয়ে। সেইদিন রাতের খাওয়ার টেবিলে অবিনাশবাবু কথাটা তুলল। ওদেরকে বলল, দেখো অনেকদিন হল, আমি তোমাদের সাথে আছি, আর ভালো লাগছে না, এইবার দেশে ফিরে যাই। আবার পরে আসব। হটাৎ করে অবিনাশ বাবুর এই চলে যাওয়ার কথা শুনে, অমিত আর জেসিকা দুজনেই ভাবল, নিশ্চয়ই বাবা কোন ভাবে ওদের আলোচনা শুনে ফেলেছেন। ওরা খুবি লজ্জিত হল। জেসিকা বলল, না বাবা তুমি যাবে না। কিছুতেই না। আমি জানি কেন তুমি চলে যেতে চাইছ? অবিনাশ বাবু বলল, না সত্যি আমার এখানে ভালো লাগছে না।

মিথ্যে করেই এই কথা বললেন। কারণ এই কয়দিনে অবিনাশ বাবুর ওদের সংসার ভালই লেগে গিয়েছিল। কিন্তু জেসিকা কিছুতেই তা বিশ্বাস করল না। শেষে বলল, ঠিক আচ্ছে তুমি যদি চলে যাও, তাহলে আর কোনোদিন তোমার সাথে আমি কথা বলব না। জেসিকার এই কথা শুনে অবিনাশ বাবুর চোখে জল চলে এল। উনি ভাবলেন সত্যি ভাগ্য করে এমন বিদেশী বউমা পেয়েছেন। দেশের মেয়ে হলেও এমন ভালোবাসা পেতেন না। উনি চোখের জল মুঝে বললেন, ঠিক আছে। আমি থাকব তোমাদের সাথে কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে। আমি আসার আগে তোমরা যেমন ভাবে থাকতে ঠিক তেমন ভাবেই তোমাদের থাকতে হবে। যেমন খোলামেলা নিজেদের মতোন করে ঠিক তেমন ভাবে। তোমাদের ভাবলে চলবে না যে আমি তোমাদের সাথে আছি। দেখো জেসিকা, অমিত জানে, আমি কিন্তু খুব পুরনো চিন্তা ভাবনার লোক নই। আমি জানি নিজেরা খুশি থাকলেই তোমরা আমাকে খুশি রাখতে পারবে। তাই আমার এই কথাটা রাখলেই আমি তোমাদের সাথে থাকব। অবিনাশ বাবুর এই কথা শুনে, জেসিকা আর অমিত নিজেদের মধ্যে মুখ চাওয়া-চাই করল আর হাসল। জেসিকা এসে অবিনাশ বাবুর গলা জরিয়ে বলল, আই লাভ ইয়উ বাবা। অবিনাশ বাবুও বলল, আই লাভ ইয়উ টু। এই বলে দুইজনেই হাসতে লাগল।