সকালের রোদ ঠিক যেন মেঘের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বসন্তের স্পর্শ, গাছের পাতাগুলোতে রোদের কিরণ খেলা করছে। ইশান ক্লাসে বসে, তার হাতে একটি খোলা বই, আর চোখ যেন পাতায় আটকে নেই—দূরে তাকিয়ে আছে। তার নির্লিপ্ত চোখে কেউ সহজেই হারিয়ে যেতে পারে।
নন্দিনী দূর থেকে তাকিয়ে থাকে। ইশান যেন সবার থেকে আলাদা। বন্ধুবান্ধবের আড্ডায় নেই, মজা করা তো দূরে থাক—সে যেন নিজের মধ্যে গুটিয়ে থাকা এক মানুষ।
ক্লাস শুরু হয়, কিন্তু নন্দিনীর মন যেন অন্য কোথাও। ইশানের প্রতিটি নড়াচড়া তার চোখ এড়িয়ে যায় না। ক্লাস শেষে নন্দিনী সাহস করে ইশানের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
“তুমি কি আমাদের গ্রুপের সঙ্গে ক্যান্টিনে যাচ্ছ?”
ইশান একটু চমকে তাকায়।
“আমি? না… আমি একটু কাজ আছে। তুমি যাও।”
নন্দিনী তার চুপচাপ উত্তর শুনে থেমে যায় না।
“তুমি সবসময় একা থাকো কেন? একা একা থাকতে কি ভালো লাগে?”
ইশান মৃদু হেসে উত্তর দেয়,
“সবাই একা একা থাকার অর্থ বোঝে না। আমি একা থাকতে পছন্দ করি।”
নন্দিনী অবাক হয়। তার মতো মিশুক একজন মানুষ এরকম উত্তর সহজে মেনে নিতে পারে না। তবু সে ইশানের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য নতুন উপায় খুঁজতে থাকে।
দিন কয়েকের মধ্যে, নন্দিনী আরও সাহসী হয়ে ওঠে। ক্লাসের পর ইশানের কাছে গিয়ে বলে,
“চলো, আজ একটা কফি খাই। আমি দাওয়াত দিচ্ছি।”
ইশান প্রথমে একটু দ্বিধায় পড়ে। তারপর, কিছু না ভেবে বলে,
“ঠিক আছে। কিন্তু বেশি সময় নেই।”
কফি শপে গিয়ে নন্দিনী ইশানের অল্প কথা বলা স্বভাব নিয়ে মজা করতে শুরু করে।
“তুমি জানো, আমি যদি তোমার মতো চুপ থাকতাম, তাহলে কেউ আমাকে এক মিনিটেও সহ্য করতে পারত না!”
ইশান তার চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলে,
“তুমি যেমন আছো, সেটা অনেক ভালো। সবাইকে চুপ থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই।”
নন্দিনী আবার হেসে ফেলে। এই হাসি যেন ইশানের শান্ত জীবনে এক ধরনের আলো নিয়ে আসে।
ইশান আর নন্দিনী কফি শপে বসে। ইশান ধীরে ধীরে তার চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে, আর নন্দিনী তার সামনে বসে কথা বলছে। যদিও বেশিরভাগ সময় কথাগুলো একতরফা।
নন্দিনী হঠাৎই মুচকি হেসে বলে,
“তুমি জানো, আমি তোমার একটা নাম দিয়েছি?”
ইশান তার কফি কাপ নামিয়ে বলে,
“নাম? আমার নামে কি সমস্যা ছিল?”
“না, না, তোমার আসল নাম নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। তবে তোমার স্বভাবের জন্য এই নামটা বেশি মানায়,” বলে নন্দিনী তার ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে রাখে।
ইশান এক ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“কী নাম?”
নন্দিনী চোখ বড় বড় করে বলে,
“মিস্টার সাইলেন্ট।”
ইশান প্রথমে বিস্মিত হয়, তারপর একটু হেসে ফেলে। নন্দিনীর হাসির উচ্ছ্বাস যেন কফি শপের পুরো পরিবেশটাই বদলে দেয়।
“তুমি খুবই অদ্ভুত, জানো? সবাই এত কথা বলে, আর তুমি যেন একদম উল্টো। তাই তোমার জন্য এই নাম।”
ইশান একটু হেসে বলে,
“তাহলে আমি তোমাকে ‘মিস চ্যাটারবক্স’ বলতে পারি।”
নন্দিনী হেসে বলে,
“একদম ঠিক বলেছ। কিন্তু একটা কথা আছে, তুমি যদি এত চুপচাপ থাকো, তাহলে তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করাটা আরও চ্যালেঞ্জিং হবে।”
“তুমি যদি সেটা উপভোগ করো, তবে আমার কোনো আপত্তি নেই,” ইশান মৃদু হেসে উত্তর দেয়।
এভাবেই সময় গড়াতে থাকে। নন্দিনী আর ইশানের মধ্যে এক অদ্ভুত সম্পর্ক তৈরি হয়। নন্দিনী যেমন ইশানকে তার নীরবতা থেকে বের করে আনতে চায়, তেমনি ইশান নন্দিনীর চাঞ্চল্যপূর্ণ জীবনযাপনকে প্রশান্তির সঙ্গে গ্রহণ করে।
একদিন ক্লাসের পরে, নন্দিনী আবার ইশানের কাছে এসে বলে,
“তুমি কি জানো, সবাই বলে তুমি আমার জন্যই একটু একটু করে বদলাচ্ছ?”
ইশান তার বই বন্ধ করে বলে,
“আমার বদলানোর কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। তবে তোমার সঙ্গে সময় কাটানো মন্দ নয়।”
নন্দিনী খুশি হয়ে বলে,
“এটাই তো সবচেয়ে বড় কথা! মিস্টার সাইলেন্ট যদি একটু একটু কথা বলা শুরু করে, তবে সেটাই আমার বিজয়।”
ইশান তার শান্ত চোখে নন্দিনীর দিকে তাকায়। নন্দিনীর মিষ্টি হাসি আর চঞ্চলতা যেন তার নির্লিপ্ত জীবনে রঙ এনে দিচ্ছে। কিন্তু তার মনের গভীরে কোথাও যেন একটা অদ্ভুত শূন্যতা থেকে যায়, যার কথা সে নন্দিনীকে কখনো বলে না।
এক সন্ধ্যার কথা। ক্লাসের পরে পুরো ক্যাম্পাসটা যেন একটু বেশিই নির্জন। নন্দিনী ইশানের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
“আজ একটু হাঁটতে বের হবে? ক্যান্টিনে বসে থাকাটা বিরক্তিকর হয়ে গেছে।”
ইশান প্রথমে একটু থমকে যায়।
“এই সময়ে?”
“হ্যাঁ! সন্ধ্যার বাতাসে হাঁটলে মাথাটা অনেক হালকা লাগে। তুমি তো এমনিতেই চুপচাপ মানুষ, তোমার তো এটা বেশ উপভোগ করার কথা!”
ইশান একটু মুচকি হেসে বলে,
“তোমার সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর মানে হলো আরও বেশি কথা শুনতে হবে।”
“ঠিক ধরেছ,” নন্দিনী হেসে ওঠে।
তারা ক্যাম্পাসের বাগানে হাঁটতে শুরু করে। নন্দিনী মাটির দিকে তাকিয়ে শুকনো পাতা নিয়ে খেলতে খেলতে বলে,
“ইশান, তুমি কখনো কারও খুব কাছের হওনি, তাই না?”
ইশান প্রশ্নটা শুনে থেমে যায়। তার চোখের কোণায় যেন এক ধরনের অস্বস্তি।
“আমার জীবনে এরকম কেউ ছিল না, যাকে আমি খুব কাছের মনে করেছি। হয়তো আমি এটাই ঠিক মনে করি।”
নন্দিনী থেমে বলে,
“তাহলে কি তোমার কাছে বন্ধুত্বের কোনো মূল্য নেই?”
ইশান সরাসরি চোখে তাকিয়ে বলে,
“মূল্য আছে। কিন্তু আমি আমার পৃথিবীটা সবসময় ছোট রাখতে চাই। তুমি যদি সেটা মেনে নিতে পারো, তাহলে আমাদের বন্ধুত্ব টিকে থাকবে।”
নন্দিনী গভীরভাবে তার কথা শোনে। সে জানে, ইশানের ভেতরে একটা গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে, যা তার একাকিত্বকে জন্ম দিয়েছে।
পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে নন্দিনী ধীরে ধীরে ইশানের মন জয় করার জন্য নানা কিছু করে। কখনো ক্যান্টিনে খাবার অর্ডার করে তার টেবিলে রেখে দেয়, কখনো ক্লাসের নোটগুলো ইশানের জন্য সুন্দর করে লিখে দেয়।
একদিন, ইশান যখন লাইব্রেরিতে বসে, নন্দিনী হঠাৎ হাজির হয়ে বলে,
“আজ আর পড়াশোনা নয়। চলো, একটা জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি।”
“কোথায়?” ইশান কিছুটা অবাক হয়।
“সারপ্রাইজ! চলো।”
নন্দিনী ইশানকে ক্যাম্পাসের পাশের একটা নির্জন পার্কে নিয়ে যায়। পার্কের মাঝখানে একটা পুরোনো বেঞ্চে বসে, সে বলে,
“তুমি জানো, এখানে বসে আমি কতবার ভেবেছি, তোমার মতো নির্লিপ্ত মানুষকে কীভাবে একটু খুশি করা যায়?”
ইশান একটু হাসে।
“তুমি তাহলে আমার মন খুশি করার প্রকল্পে আছো?”
“অবশ্যই!” নন্দিনী হেসে বলে। “তুমি আমার ‘মিস্টার সাইলেন্ট’, আর তোমার হাসি আমার বিজয়।”
তাদের এই নির্জন সময়ে ইশানের মুখে এক ঝলক শান্তি দেখা দেয়। নন্দিনীর এই প্রাণবন্ত উপস্থিতি তার নির্জন জগতে যেন একটু একটু করে আলো ঢুকিয়ে দিচ্ছে।
দ্বিতীয় অধ্যায়: সম্পর্কের দোলাচল
এক সন্ধ্যার কথা। ক্লাসের পরে পুরো ক্যাম্পাসটা যেন একটু বেশিই নির্জন। নন্দিনী ইশানের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
“আজ একটু হাঁটতে বের হবে? ক্যান্টিনে বসে থাকাটা বিরক্তিকর হয়ে গেছে।”
ইশান প্রথমে একটু থমকে যায়।
“এই সময়ে?”
“হ্যাঁ! সন্ধ্যার বাতাসে হাঁটলে মাথাটা অনেক হালকা লাগে। তুমি তো এমনিতেই চুপচাপ মানুষ, তোমার তো এটা বেশ উপভোগ করার কথা!”
ইশান একটু মুচকি হেসে বলে,
“তোমার সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর মানে হলো আরও বেশি কথা শুনতে হবে।”
“ঠিক ধরেছ,” নন্দিনী হেসে ওঠে।
তারা ক্যাম্পাসের বাগানে হাঁটতে শুরু করে। নন্দিনী মাটির দিকে তাকিয়ে শুকনো পাতা নিয়ে খেলতে খেলতে বলে,
“ইশান, তুমি কখনো কারও খুব কাছের হওনি, তাই না?”
ইশান প্রশ্নটা শুনে থেমে যায়। তার চোখের কোণায় যেন এক ধরনের অস্বস্তি।
“আমার জীবনে এরকম কেউ ছিল না, যাকে আমি খুব কাছের মনে করেছি। হয়তো আমি এটাই ঠিক মনে করি।”
নন্দিনী থেমে বলে,
“তাহলে কি তোমার কাছে বন্ধুত্বের কোনো মূল্য নেই?”
ইশান সরাসরি চোখে তাকিয়ে বলে,
“মূল্য আছে। কিন্তু আমি আমার পৃথিবীটা সবসময় ছোট রাখতে চাই। তুমি যদি সেটা মেনে নিতে পারো, তাহলে আমাদের বন্ধুত্ব টিকে থাকবে।”
নন্দিনী গভীরভাবে তার কথা শোনে। সে জানে, ইশানের ভেতরে একটা গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে, যা তার একাকিত্বকে জন্ম দিয়েছে।
পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে নন্দিনী ধীরে ধীরে ইশানের মন জয় করার জন্য নানা কিছু করে। কখনো ক্যান্টিনে খাবার অর্ডার করে তার টেবিলে রেখে দেয়, কখনো ক্লাসের নোটগুলো ইশানের জন্য সুন্দর করে লিখে দেয়।
একদিন, ইশান যখন লাইব্রেরিতে বসে, নন্দিনী হঠাৎ হাজির হয়ে বলে,
“আজ আর পড়াশোনা নয়। চলো, একটা জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি।”
“কোথায়?” ইশান কিছুটা অবাক হয়।
“সারপ্রাইজ! চলো।”
নন্দিনী ইশানকে ক্যাম্পাসের পাশের একটা নির্জন পার্কে নিয়ে যায়। পার্কের মাঝখানে একটা পুরোনো বেঞ্চে বসে, সে বলে,
“তুমি জানো, এখানে বসে আমি কতবার ভেবেছি, তোমার মতো নির্লিপ্ত মানুষকে কীভাবে একটু খুশি করা যায়?”
ইশান একটু হাসে।
“তুমি তাহলে আমার মন খুশি করার প্রকল্পে আছো?”
“অবশ্যই!” নন্দিনী হেসে বলে। “তুমি আমার ‘মিস্টার সাইলেন্ট’, আর তোমার হাসি আমার বিজয়।”
তাদের এই নির্জন সময়ে ইশানের মুখে এক ঝলক শান্তি দেখা দেয়। নন্দিনীর এই প্রাণবন্ত উপস্থিতি তার নির্জন জগতে যেন একটু একটু করে আলো ঢুকিয়ে দিচ্ছে।
চতুর্থ অধ্যায়: ইশানের মনস্তত্ত্বের জটিলতা
শীতের সকালের কথা। ক্যাম্পাসের গেট দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নন্দিনী দেখতে পায়, ইশান লাইব্রেরির সামনে বসে বই পড়ছে। তার চোখে এক ধরনের গভীরতা। নন্দিনী কাছে গিয়ে বলে,
“তুমি কি জানো, তুমি সবসময় এইভাবে বই পড়লে কেউ তোমাকে বোরিং ভাবতে পারে?”
ইশান বই থেকে চোখ তুলে তাকায়।
“তুমি তো আমাকে ইতিমধ্যে ‘মিস্টার সাইলেন্ট’ বলেছ, বোরিং বলা আরও একটা নাম হবে। তাতে সমস্যা নেই।”
নন্দিনী হাসতে হাসতে বলে,
“না, এটা মেনে নেওয়া যাবে না। তুমি আমার জন্য একটু আলাদা। আর আলাদা মানুষদের ‘বোরিং’ বলা ঠিক না।”
ইশান কিছু বলে না। নন্দিনী তার পাশে বসে। চারদিকে শীতের হালকা কুয়াশা। নন্দিনী চুপচাপ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে, তারপর বলে,
“ইশান, আমি জানি তোমার ভেতরে অনেক কিছু লুকানো আছে। কিন্তু তুমি জানো, আমি লুকানো জিনিস বের করার খেলায় খুব ভালো।”
ইশান মৃদু হেসে বলে,
“তোমার এই খেলার ফলাফল কী হবে, সেটা তুমি জানো না।”
“তাহলে দেখাই যাক, আমার এই খেলা কতটা মজার হতে পারে,” বলে নন্দিনী সেদিন থেকে ইশানের মনের জটিল আবেগগুলোর সন্ধান করা শুরু করে।
রাত গভীর। জানালার বাইরে শীতল হাওয়ার শব্দ কানে ভেসে আসে। ইশান বিছানায় শুয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার চোখে ঘুম নেই। নন্দিনীর কথা মনের গভীরে বারবার প্রতিধ্বনিত হয়।
“নন্দিনী… এত প্রাণবন্ত কেন ও? আমার মতো একজন নির্লিপ্ত আর নীরব মানুষের সঙ্গে কেন এতটা আন্তরিক হতে চায়?” ইশান দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
তার মনে পড়ে, কীভাবে নন্দিনী তাকে ‘মিস্টার সাইলেন্ট’ বলে ক্ষেপাতো। সেই মিষ্টি হাসি, যা কোনো কঠিন মনকেও নরম করে দিতে পারে। “আমার মতো একজন মানুষ, যে সবসময় নিজের ভেতরেই ডুবে থাকে, তার পাশে থাকার মতো শক্তি ওর কোথা থেকে আসে?”
ইশান গভীরভাবে ভাবে, “আমি জানি, ও আমাকে বদলানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু কেন? ও কি জানে, আমি বদলাতে চাই না? নাকি আমি নিজেই বুঝি না যে ওর সঙ্গ আমার জন্য কতটা জরুরি হয়ে উঠেছে?”
তার ভেতরে দ্বন্দ্ব কাজ করে। নন্দিনীর প্রতি যে অদ্ভুত এক টান অনুভব করছে, সেটি কি বন্ধুত্বের বাইরে কিছু? সে নিজেকে প্রশ্ন করে। “এই অনুভূতিগুলো যদি বন্ধুত্বের বাইরে হয়, তবে আমি কি সেটা মেনে নিতে পারি? আমি কি নন্দিনীকে এভাবে ভাবার অধিকার রাখি?”
ইশান জানালার দিকে তাকায়। চাঁদের আলো ঘরের ভেতর ঢুকে এক ধরণের প্রশান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু তার মন অস্থির। “নন্দিনী আমার জীবনের একঘেয়েমি ভেঙেছে। আমার মনে এক অন্যরকম রঙ এনেছে। ও ছাড়া আমি কি আবার সেই পুরোনো নিঃসঙ্গতায় ফিরে যাব?”
ইশান এক গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তার চোখে ঘুম আসে না। মনের ভেতর নন্দিনীর হাসিমুখ আর চঞ্চল কথাগুলো ঘুরপাক খেতে থাকে।
বন্ধুত্ব থেকে আরও এক ধাপ
ইশান তার জীবন নিয়ে সবসময় নির্লিপ্ত ছিল। কিন্তু নন্দিনীর সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত যেন তার ভেতরের সত্তাকে নাড়া দিতে থাকে। নন্দিনীর প্রাণবন্ত হাসি, অকপট কথা, আর ইশানকে বদলানোর অবিরাম চেষ্টা ইশানের ভেতরে অদ্ভুত এক অনুভূতি তৈরি করে।
একদিন ক্যাম্পাসের বেঞ্চে বসে নন্দিনী বলে,
“তুমি জানো, ইশান, আমি তোমার সাইলেন্ট জগৎটা ভেঙে ফেলতে চাই। আমি চাই তুমি আর এই নীরবতায় বন্দি থাকবে না।”
ইশান কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর বলে,
“তুমি কি জানো, নীরবতার মধ্যেও অনেক কথা লুকিয়ে থাকে? আমার কথা না বলার মানে এই নয় যে আমি অনুভব করি না।”
নন্দিনী গভীরভাবে তার চোখে তাকায়।
“তাহলে আমাকে সেগুলো শোনাও। আমি শুনতে চাই।”
ইশান কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। তার মনের গভীরে যে অনুভূতির ঝড় চলছে, সেটি নন্দিনীকে বলতে সে এখনও প্রস্তুত নয়।
ইশান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তার চোখ নদীর পানির দিকে, যেন সে নিজের কথাগুলো জলে ফেলে দিতে চায়।
“তুমি জানো, আমার জীবনে খুব কম মানুষই ছিল, যাদের আমি সত্যিই বিশ্বাস করেছি। আর তাদের অনেকেই আমাকে ভুল বুঝেছে। তাই আমি চুপ থাকতে শিখেছি।”
নন্দিনী তার কথাগুলো গভীর মনোযোগে শোনে।
“তুমি চুপ থাকলেও আমি জানি, তোমার ভেতরে অনেক আবেগ লুকিয়ে আছে। কিন্তু তুমি আমাকে সেটা বলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছো না।”
ইশান মৃদু হাসে। “তুমি হয়তো ঠিকই বলেছ। তবে তুমি যদি সত্যিই আমার পাশে থাকতে পারো, তাহলে হয়তো একদিন সব কথা বলব।”
—
ষষ্ঠ অধ্যায়: বন্ধুত্বের গভীরতা এবং লুকানো সত্যের প্রথম আভাস
নন্দিনী ইশানের মনের গভীরে ঢোকার চেষ্টা করলেও ইশান এখনো পুরোপুরি নিজের কথা বলতে প্রস্তুত নয়। তবে ধীরে ধীরে নন্দিনীর সঙ্গে তার বন্ধুত্ব গভীর হয়ে উঠছে।
একদিন বিকেলে ক্যাম্পাসের খোলা প্রাঙ্গণে তারা বসে। সূর্যের আলো নরম হয়ে এসেছে। নন্দিনী চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলে,
“ইশান, তুমি কি কখনো কারও প্রতি এমন কিছু অনুভব করেছ, যেটা কাউকে বলা যায় না?”
ইশান কিছুক্ষণ চুপ থাকে। তারপর বলে,
“হয়তো করেছি। তবে সেটা কাউকে বলার মতো সাহস পাইনি।”
নন্দিনী হেসে বলে,
“তুমি বলবে না, সেটা জানি। কিন্তু আমি ঠিক বের করব।”
ইশান তার দিকে তাকায়। নন্দিনীর চোখে গভীর প্রত্যয়ের ছাপ।
“তুমি যদি জানো, সেটা হয়তো তোমার ধারণার বাইরে যাবে,” ইশান মৃদু গলায় বলে।
“অতটা নিশ্চিত হবে না,” বলে নন্দিনী তার পাশে আরো কাছে সরে আসে।
—
ইশানের একাকী রাত এবং মাধুরীর প্রতি অনুভূতি
সেদিন রাতে ইশান আবার শুয়ে থাকে। তার মনের মধ্যে সেই চিরচেনা মুখটা ভেসে ওঠে—মাধুরী।
“তোমাকে কি বলার কোনো উপায় আছে, মাধুরী? তুমি তো জানোই না, আমার এই ছোট্ট জীবনের সবচেয়ে বড় জায়গাটা তোমার দখলে। কিন্তু আমি কীভাবে বলব?”
ইশানের চোখে জল এসে পড়ে। সে ভাবতে থাকে, “তুমি আমাকে এত বছর ধরে আগলে রেখেছ, নিজের মতো করে ভালোবেসেছ। কিন্তু আমি তোমার সেই স্নেহময় ভালোবাসার বাইরে গিয়ে কিছু অনুভব করেছি। এটা কি ঠিক?”
তার মনে দ্বন্দ্বের ঝড় ওঠে।
“সমাজ আমাদের মেনে নেবে না। তুমি আমাকে কখনোই সেভাবে দেখনি। কিন্তু আমি কেন প্রতিদিন তোমার কথা ভাবি, কেন তোমার মুখটাকে সব সময় নিজের মনের মধ্যে আঁকা দেখি?”
নন্দিনীর মাধুরী সম্পর্কে প্রথম ধারণা
পরের দিন সকালে নন্দিনী যখন ইশানের পাশে বসে, তখন ইশানের মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।
“রাতে ঘুমাওনি?” নন্দিনী জিজ্ঞেস করে।
“কিছু ভাবছিলাম,” ইশান ছোট করে উত্তর দেয়।
নন্দিনী তাকে ক্ষুধি দিয়ে দেখে। “তোমার মনে একটা বোঝা কাজ করছে, সেটা আমি টের পাচ্ছি। তবে তুমি কি জানো, আমি সেটা ভাঙার জন্য এখানে আছি?”
ইশান কিছু বলে না।
“তোমার জীবনে কি এমন কেউ আছে, যাকে তুমি চাইলেও বলতে পার না?” নন্দিনী সরাসরি প্রশ্ন করে।
ইশান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
“হয়তো আছে। তবে সেটা বলার মতো সময় এখনো আসেনি।”
নন্দিনী হাল ছাড়ার মেয়ে নয়।
“ঠিক আছে, আমি অপেক্ষা করব। তবে একটা কথা মনে রেখো—আমি তোমার সাইলেন্ট জগৎটাকে ভেঙে দেব, যেভাবেই হোক।”
—
সপ্তম অধ্যায়: মাধুরীর ছায়া এবং নন্দিনীর কৌতূহল
ইশানের জীবন যেন ক্রমেই আরও জটিল হয়ে উঠছে। মনের গভীরে লুকানো অনুভূতি, নন্দিনীর অপরিসীম কৌতূহল, আর নিজের দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থার মধ্যে সে আটকে আছে।
সেদিন নন্দিনী ইশানের পাশে বসে একটি খোলা জায়গায় আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
“ইশান, আমি তোমার মতো একটা বিষয় বোঝার চেষ্টা করছি। তুমি এমন কেউ, যে খুব কম কথা বলে, কিন্তু গভীরভাবে অনুভব করে। তোমার ভেতরে অনেক কিছু লুকানো আছে, তাই না?”
ইশান একটু হেসে বলে,
“তুমি কিভাবে এমনটা বুঝলে?”
“কারণ, আমি তোমার চোখে দেখেছি। তোমার চোখ অনেক কথা বলে, যদিও তুমি তা মুখে বলো না।”
ইশান তার কথায় কোনো জবাব দেয় না। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।
—
নন্দিনীর পরিকল্পনা
পরের দিন ক্লাস শেষে নন্দিনী ইশানকে বলে,
“তুমি সবসময় এমন চুপচাপ কেন থাকো? তোমাকে একটু চমকে দেওয়ার জন্য কিছু একটা করতেই হবে।”
“আবার কোনো নতুন প্ল্যান?” ইশান জিজ্ঞেস করে।
“নিশ্চয়ই। আগামী শুক্রবার বিকেলে তুমি আমার সঙ্গে থাকবে। আমি তোমাকে একটা বিশেষ জায়গায় নিয়ে যাব।”
“কোথায়?”
“এটা এখনই বলব না। তবে একটা কথা বলে রাখি—সেটা এমন এক জায়গা, যেখানে তুমি কখনো ছিলে না। আর আমি নিশ্চিত, সেটা তোমার মনকে বদলে দেবে।”
মাধুরীর স্মৃতিতে ইশানের রাত
রাতে ইশান যখন নিজের ঘরে শুয়ে থাকে, তখন তার মনের মধ্যে মাধুরীর স্মৃতিগুলো ভেসে ওঠে। মাধুরীর সেই মমতাময়ী হাসি, তার চোখের গভীর মায়া—সব যেন ইশানের মনের ভেতর অগোছালো ঝড় তুলে দেয়।
“তুমি জানো না, মাধুরী, তোমার প্রতি আমার এই অনুভূতিগুলো কিভাবে লুকিয়ে রাখি। তোমাকে আমি কখনো বলতে পারব না। কারণ, তুমি আমাকে যে স্নেহ কর, সেটা আমি ভাঙতে চাই না। ইশান এক অজানা অপরাধবোধে ভোগে।
ইশান তার চিন্তা থামাতে চায়, কিন্তু পারে না।
পরবর্তী দিনের পরিকল্পনা
শুক্রবার বিকেলে নন্দিনী ইশানকে শহরের বাইরে একটা জায়গায় নিয়ে যায়। জায়গাটা নির্জন, তবে অসম্ভব সুন্দর। সেখানে বসে নন্দিনী ইশানকে বলে,
“তুমি যদি এখানকার পরিবেশে একটু মন খুলে বলতে পার, আমি তোমার পাশে থাকব।”
ইশান কিছুক্ষণ চুপ থাকে। তারপর বলে,
“তুমি কি কখনো এমন কাউকে ভালোবেসেছ, যাকে ভালোবাসাটা প্রকাশ করাই অসম্ভব?”
নন্দিনী চমকে যায়। “তুমি কি বলতে চাও, তোমার জীবনে এমন কেউ আছে?”
ইশান সরাসরি কিছু বলে না। তবে তার চোখে মাধুরীর মুখচ্ছবির ছায়া স্পষ্ট।
ইশান এক মুহূর্ত থেমে নন্দিনীর চোখে তাকায়।
“তুমি এটা জানতে চাও কেন?”
“কারণ, আমি তোমার বন্ধু। আর বন্ধুর জীবনের এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমি জানব না, এটা হতে পারে না।”
ইশানের প্রতিরোধ এবং নন্দিনীর জেদ
ইশান একটু বিরক্ত সুরে বলে,
“সব কথা জানার প্রয়োজন নেই, নন্দিনী। কিছু কথা বলার জন্য সময় দরকার হয়।”
“সময়! আর কত সময় লাগবে? ইশান, তুমি জানো, আমি এত সহজে হাল ছাড়ি না। আমি জানবই।”
ইশান মৃদু হেসে বলে,
“তুমি সত্যিই আমার জীবন সহজ করে দাও না।”
“তোমার জীবন সহজ করার দায়িত্ব আমার। তাই আমাকে বলো, সেই মানুষটি কে?”
ইশান গভীরভাবে শ্বাস নেয়।
“তুমি যদি জানো, তবে হয়তো আমাকে আর দেখতে চাও না। কারণ, সে এমন একজন, যাকে ভালোবাসা সম্ভব নয়।”
নন্দিনী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
“তুমি জানো না, ভালোবাসার মধ্যে কোনো শর্ত নেই। কে সেই মানুষ? আমি জানতেই চাই।
মাধুরীর প্রতি ইশানের আবেগের আভাস
ইশান মৃদু কণ্ঠে বলে,
“সে একজন, যিনি আমার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে ছিলেন। আমাকে নিজের মতো গড়ে তুলেছেন। আমি তাকে মা বলে ডাকি।”
নন্দিনী অবাক হয়ে যায়।
“মা? কিন্তু তুমি কি…?”
“হ্যাঁ,” ইশান তার কথার মধ্যে ঢুকে বলে। “আমি জানি, এটা ভুল। কিন্তু আমার অনুভূতিগুলোকে অস্বীকার করতে পারি না। আমি চেষ্টা করেছি, কিন্তু তার প্রতি আমার ভালোবাসা এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, যা আমাকে প্রতিনিয়ত টেনে নিচ্ছে।”
নন্দিনী তার কথাগুলো শুনে কিছুক্ষণ চুপ থাকে। তারপর বলে,
“তুমি কখনো তার সামনে কিছু বলেছ?”
“না। আমি কখনো বলবও না। সে আমাকে শুধু একজন সন্তান হিসেবেই দেখে। আর আমি… আমি এটা বদলাতে চাই না।”
নন্দিনী কিছুক্ষণ চিন্তা করে। তারপর গভীর স্বরে বলে,
“ইশান, আমি জানি, এটা সহজ নয়। তবে আমি তোমার পাশে আছি। তোমার ভালোবাসাকে বুঝতে, তোমার জীবনের এই জটিলতাগুলোকে মিটিয়ে দিতে যা যা দরকার, আমি করব।”
ইশান মৃদু হেসে বলে,
“তুমি জানো না, তুমি কী নিয়ে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছ। এটা শুধু আমার জন্যই নয়, তোমার জন্যও কঠিন হয়ে উঠবে।”
“আমি জানি। কিন্তু আমি তোমাকে একা ছাড়ব না। আমি তোমার জীবনের এই অধ্যায়টা সহজ করার চেষ্টা করব।”
—
নবম অধ্যায়: মাধুরীর ছায়া এবং নন্দিনীর অনুসন্ধান
ইশানের মুখ থেকে মাধুরীর কথা শুনে নন্দিনী যেন নতুন একটি জগতের দরজা খুলে পেয়েছে। তার কৌতূহল আগের চেয়ে অনেক বেশি।
“মাধুরী! এত বড় ভূমিকা কারো জীবনে থাকতে পারে, অথচ সে নিজেও তা জানে না। এটা আমি মেনে নিতে পারি না,” মনে মনে বলে নন্দিনী।
পরের দিন নন্দিনী ইশানের সামনে এসে বলে,
“ইশান, আমি মাধুরী সম্পর্কে কিছু জানতে চাই। তিনি কেমন মানুষ?”
ইশান একটু দ্বিধায় পড়ে।
“তিনি আমার জন্য সবকিছু। তিনি এমন একজন মানুষ, যিনি আমাকে শূন্য থেকে তৈরি করেছেন। আমি যা কিছু অর্জন করেছি, সবই তার জন্য।”
“তাহলে কি তিনি তোমার কাছে শুধু একজন অভিভাবক?” নন্দিনী সরাসরি প্রশ্ন করে।
ইশান চুপ করে থাকে। তার চোখে দ্বিধার ছায়া।
নন্দিনী তার সামনে ইশানের চুপ থাকা দেখে সিদ্ধান্ত নেয়, সে নিজেই মাধুরীর সঙ্গে দেখা করবে।
“ইশান, তুমি যদি তোমার কথা বলতে না চাও, তবে ঠিক আছে। কিন্তু আমি তাকে নিজেই বুঝতে চাই।”
“নন্দিনী, এটা কি ঠিক হবে?”
“তুমি নিশ্চিন্ত থাকো। আমি তাকে কিছু বলব না। আমি শুধু জানতে চাই, এমন একজন মানুষ কেমন, যাকে তুমি এতটা ভালোবাসো।”
ইশান গভীর দৃষ্টিতে নন্দিনীর দিকে তাকায়।
“ঠিক আছে। তবে তুমি যা করবে, সেটা ভেবেচিন্তে করো। কারণ, আমি চাই না তোমার জন্য কোনো সমস্যা তৈরি হোক।”
নন্দিনী পরের সপ্তাহে মাধুরীর বাড়িতে যায়। মাধুরী তাকে আন্তরিকভাবে অভ্যর্থনা জানায়।
“তুমি নিশ্চয়ই ইশানের বন্ধু নন্দিনী?” মাধুরী তার দিকে মিষ্টি হেসে বলে।
“হ্যাঁ, আমি ইশানের খুব কাছের বন্ধু। আপনার কথা শুনেছি। তাই দেখা করতে এলাম,” নন্দিনী বলে।
মাধুরী সহজ স্বভাবের একজন মানুষ। তার হাসি আর ব্যক্তিত্বে এমন এক মায়া আছে, যা নন্দিনীকে মুগ্ধ করে।
“ইশান আমাকে তোমার কথা প্রায়ই বলে। সে তোমাকে খুব সম্মান করে। তোমার মতো বন্ধুরা সবসময় পাশে থাকুক, এটাই আমি চাই।”
নন্দিনী মাধুরীর কথা শুনে মুগ্ধ হয়।
“ইশান সত্যিই ভুল কিছু করেনি। তার এই ভালোবাসা আর মুগ্ধতার কারণ আমি এখন বুঝতে পারছি।”
নন্দিনী মাধুরীর সাথে পুরো একটা দিন কাটায়। মাধুরী সবকিছুই সে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে। ইশানের মতই নন্দিনী মাধুরীতে মুগ্ধ হয়ে যায়। মাধুরীর সঙ্গে দেখা করার পর নন্দিনী ইশানের কাছে ফিরে আসে।
“ইশান, আমি আজ তাকে দেখেছি। এখন আমি বুঝতে পারছি, কেন তুমি তাকে এতটা ভালোবাসো। তিনি সত্যিই অসাধারণ একজন মানুষ।”
ইশান কিছু বলেনি। তবে তার চোখে মাধুরীর প্রতি আরও গভীর শ্রদ্ধার আভাস ফুটে ওঠে।
“তুমি কী করবে?” নন্দিনী জিজ্ঞেস করে।
“আমি কিছু করব না। আমি তার কাছে যা আছি, তাই থাকব। আর কিছু করার অধিকার আমার নেই।”
নন্দিনী চুপ করে থাকে। তবে তার মনে একটাই সিদ্ধান্ত,
“আমি তাদের এই অসম্ভব ভালোবাসাকে বাস্তব করার জন্য লড়াই করব। ইশান এবং মাধুরীর জীবনে নতুন একটা অধ্যায় আনব।”
—