দশম অধ্যায়: নন্দিনীর দুশ্চিন্তা এবং ইশানের সংকোচ
নন্দিনী মাধুরীর সঙ্গে দেখা করার পর থেকেই তার মনের মধ্যে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। মাধুরীকে দেখে সে বুঝতে পারে, তিনি ইশানের জীবনে কতটা গভীরভাবে প্রভাব রেখেছেন। কিন্তু সেই ভালোবাসা যে কতটা কঠিন এবং অসম্ভব, তা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
একদিন নন্দিনী ইশানকে একান্তে ডেকে বলে,
“ইশান, আমি মাধুরীকে দেখে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। কিন্তু একটা কথা বুঝি না—তুমি তাকে নিয়ে এত কিছু ভাব, অথচ তিনি তা জানেন না। তুমি কি ভেবেছ, এই অনুভূতি লুকিয়ে রাখা কতদিন সম্ভব?”
ইশান মাথা নিচু করে বলে,
“আমি জানি না। তবে আমি যা করি, সেটা সঠিক কি না, তাও বুঝি না। আমি শুধু চাই না, তিনি কষ্ট পান।”
“কিন্তু এটা কি তার প্রতি সঠিক হচ্ছে? তিনি যদি জানেন, তুমি তাকে কতটা ভালোবাসো, তাহলে হয়তো তিনি নিজেই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।”
ইশান কিছু বলেনি। তবে তার মনে দ্বিধার ঝড় যেন আরও তীব্র হয়ে ওঠে।
—
মাধুরীর উপলব্ধি
অন্যদিকে, মাধুরী নন্দিনীর আচরণে কিছুটা অস্বাভাবিকতা লক্ষ করে। নন্দিনী তাকে প্রায়ই ফোন করে খবর নেয়, তার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করে।
“নন্দিনী খুব ভালো মেয়ে। তবে সে কেন আমার সঙ্গে এতটা আন্তরিক হচ্ছে?” মাধুরী একদিন নিজেই ভাবতে থাকে।
এক সন্ধ্যায় নন্দিনী মাধুরীর বাড়িতে যায়। গল্পের ফাঁকে মাধুরী জিজ্ঞেস করে,
“নন্দিনী, তুমি কি কিছু বলতে চাও? আমি তোমার চোখে কিছু খুঁজে পাচ্ছি, যা তুমি লুকানোর চেষ্টা করছ।”
নন্দিনী এক মুহূর্ত থেমে বলে,
“আসলে, আমি শুধু আপনার সম্পর্কে জানতে চাই। ইশান আপনার জন্য কতটা গুরুত্ব রাখে, তা বুঝতে পারি। আপনাকে দেখে মনে হয়, আপনি তার জীবনে মা এবং বন্ধুর মতো।”
মাধুরী একটু হাসে।
“ইশান আমার একমাত্র সন্তান, আমরা একমাত্র আশার আলো। সে সত্যিই আমাকে অনেক সম্মান করে। আমি তার জন্য গর্বিত।”
নন্দিনী কিছু বলে না। তবে তার মনে একটাই কথা,
“আপনি যা ভাবছেন, সেটা হয়তো ঠিক, তবে ইশানের মনের ভাব পুরোপুরি আপনি বুঝতে পারছেন না।”
নন্দিনীর প্রতিজ্ঞা
নন্দিনী মাধুরীর সঙ্গে প্রতিদিন আরও বেশি সময় কাটাতে থাকে। সে বুঝতে পারে, মাধুরী এবং ইশানের সম্পর্ক যতটা গভীর, ততটাই জটিল।
“ইশান যা অনুভব করে, সেটা ঠিক। কিন্তু সমাজের এই ভীতিকর দেয়াল ভাঙতে হলে সাহস দরকার। আমি ইশানের পাশে থাকব এবং তাকে সেই সাহস জোগাব।”
নন্দিনী ইশানের সামনে এসে বলে,
“তুমি যদি নিজে থেকে কিছু না করো, তাহলে আমি মাধুরীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলব।”
ইশান চমকে যায়।
“তুমি এটা করবে না, নন্দিনী। আমি চাই না, তার সামনে এই বিষয়টি আসুক।”
“তাহলে তুমি নিজে বলো। এটা তোমার ভালোবাসা, ইশান। যদি সাহস না পাও, তবে সেই ভালোবাসাকে মানাও না।”
নন্দিনীর চ্যালেঞ্জ ইশানের মনে গভীর আলোড়ন তোলে। একদিকে তার মনের গভীর ভালোবাসা, অন্যদিকে মাধুরীর প্রতি তার অগাধ শ্রদ্ধা। এসবের মধ্যে নিজের অনুভূতিগুলোকে প্রকাশ করা তার কাছে প্রায় অসম্ভব মনে হয়।
কিন্তু নন্দিনীর জেদ এবং অকপট কথাগুলো ইশানকে ভাবতে বাধ্য করে।
“আমার অনুভূতিগুলোকে এভাবে চেপে রাখা কি মাধুরীর প্রতি অবিচার? তিনি যদি জানেন, তবে হয়তো আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর হতে পারে। অথবা… হয়তো সব কিছু শেষ হয়ে যেতে পারে। আমি কী করব?”
মাধুরীর জীবনের গল্পটা সহজ ছিল না। ইশানের বাবা যখন আকস্মিক দুর্ঘটনায় মারা যান, তখন ছোট্ট ইশানকে মাধুরী নিজের কাছে আঁকড়ে ধরে রাখেন।
“ইশান আমার একমাত্র সন্তান। ইশান তার স্মৃতির জীবন্ত অংশ,” মাধুরী প্রায়ই একাকী এসব ভাবতেন।
কিন্তু বয়স এবং অভিজ্ঞতা মাধুরীকে বাস্তববাদী করে তুলেছে। তিনি জানেন, সমাজের চোখে তার এবং ইশানের সম্পর্ক কখনোই সহজভাবে গৃহীত হবে না।
এদিকে নন্দিনী বুঝতে পারে, ইশান সাহস করে এগোতে পারছে না। সে একদিন মাধুরীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সিদ্ধান্ত নেয়।
“মাধুরী আন্টি, আপনি কি কখনো ভেবেছেন, ইশানের জীবনে আপনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ?” নন্দিনী সরাসরি প্রশ্ন করে।
মাধুরী একটু থমকে যান।
“তুমি হঠাৎ এ কথা বলছ কেন, নন্দিনী?”
“কারণ, আমি চাই আপনি জানুন। ইশান আপনাকে যা ভাবেন, তা একজন সাধারণ মা বা অভিভাবকের চেয়ে অনেক বেশি। আমি জানি, এটা বলা সহজ নয়, কিন্তু সত্যি লুকিয়ে রাখাও তো ঠিক নয়।”
মাধুরী স্তব্ধ হয়ে যান। তার মনে যেন ঢেউ খেলে যায়।
“তুমি যা বলছ, সেটা কি সত্যি? কিন্তু আমি তো কখনো এমন কিছু লক্ষ করিনি…”
“তবুও, আপনি ভাবুন। ইশানের জন্য এটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, সেটা একবার বুঝতে চেষ্টা করুন।”
নন্দিনীর এই পদক্ষেপ ইশানকে সাহস দেয়। সে মাধুরীর সামনে গিয়ে ধীরে ধীরে বলে,
“আপনি আমার জীবনের সবকিছু। কিন্তু শুধু মা নয়… আরও অনেক বেশি। আমি জানি, এটা বলা ঠিক নয়। কিন্তু আমি আর নিজের অনুভূতিগুলোকে লুকিয়ে রাখতে পারছি না।”
মাধুরী কিছুক্ষণ চুপ থেকে ইশানের দিকে তাকিয়ে থাকেন। তার চোখে জল জমে।
“ইশান, তুমি কি জানো, তুমি কী বলছ? আমি তোমার কাছে সবসময় একজন অভিভাবক ছিলাম। তুমি আমাকে এমনভাবে দেখ, সেটা আমি কখনো ভাবিনি।”
“আমি জানি। কিন্তু আমি আমার মনের কথা বলতে বাধ্য হলাম। কারণ, আপনাকে ছাড়া আমার জীবন শূন্য।”
মাধুরী এক গভীর চিন্তায় ডুবে যান। একদিকে ইশানের প্রতি তার ভালোবাসা, অন্যদিকে সমাজের বিধি-নিষেধ। তিনি বুঝতে পারেন, এই সম্পর্ক সহজ হবে না। কিন্তু ইশানের সাহস তাকে একটি নতুন দিক নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে।
“তুমি আমাকে সময় দাও, ইশান। আমি এই অনুভূতিগুলো নিয়ে ভাবতে চাই। আমার জন্যও এটা সহজ নয়,” মাধুরী অবশেষে বলেন।
দ্বাদশ অধ্যায়: মাধুরীর একাকী রাত এবং ইশানের প্রতিচ্ছবি
রাত গভীর। মাধুরী নিজের ঘরে একা বসে আছে। জানালার পাশে রাখা চেয়ারে হেলান দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। শীতল বাতাস তার চুলের ভেজা ডগাগুলোকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, যেন রাতের আকাশও তার মতোই অস্থির।
ইশানের কথা সে ভুলতে পারছে না।
“ও আজ যা বলল… সেটা কি সত্যি? নাকি আমি ভুল শুনেছি?”
তার মনের মধ্যে ইশানের সেই সাহসী স্বীকারোক্তি বারবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
“আপনি আমার জীবনের সবকিছু। কিন্তু শুধু মা নয়… আরও অনেক বেশি।”
মাধুরী চোখ বন্ধ করে গভীরভাবে শ্বাস নেয়। ইশানের চেহারা, তার চোখের গভীরতা, তার কণ্ঠস্বর… সব কিছু যেন তার মনে স্পষ্ট হয়ে ভেসে উঠছে।
“ইশান আমার সন্তান। ওকে ছোট থেকে বড় করেছি। কিন্তু… কেন আজ ওর কথা শুনে আমার মনে অন্যরকম একটা অনুভূতি হলো?”
মাধুরী জানে, ইশানের এই কথা সমাজ মেনে নেবে না। তার নিজের মনও মেনে নিতে অস্বস্তি বোধ করছে, কারণ সে মা। কিন্তু সেই সঙ্গে সে এটাও অনুভব করছে, ইশানের প্রতি তার ভালোবাসা শুধুই অভিভাবকের মতো নয়।
“ইশান কি সত্যিই আমাকে এইভাবে দেখে? আমি কি তার যোগ্য? আর যদি যোগ্যও হই, তবে সমাজ কী বলবে? মানুষ কি আমাকে দোষ দেবে? ওর ভবিষ্যৎ কি নষ্ট হয়ে যাবে আমার জন্য?”
এই চিন্তাগুলো তাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। সে নিজের মনের অবস্থা বুঝতে পারছে না।
অন্যদিকে, ইশান নিজের ঘরে শুয়ে আছে। নন্দিনী এবং মাধুরীর সঙ্গে হওয়া কথাগুলো তার মাথায় ঘুরছে।
“আমি ঠিক করেছি তো? নন্দিনী ঠিকই বলেছিল। মাধুরীর প্রতি আমার এই অনুভূতি লুকিয়ে রাখা মানে তার সঙ্গে অবিচার করা। কিন্তু তিনি কি কখনো আমাকে সেইভাবে দেখবেন?”
তার মনে একটাই ভয়,
“যদি তিনি আমাকে ভুল বুঝেন? যদি আমাকে দূরে সরিয়ে দেন?”
ওদিকে নন্দিনী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে আর অপেক্ষা করবে না। ইশান এবং মাধুরী দু’জনেই যে একে অপরের প্রতি কিছু অনুভব করে, সেটা তার কাছে স্পষ্ট।
“সমাজের চিন্তা করলে জীবন চলবে না। আমি জানি, মাধুরী আন্টি এবং ইশান একসঙ্গে থাকলে দু’জনেই সুখী হবে। এখন শুধু ওদেরকে সেই সাহসটা দিতে হবে।”
পরদিন সকালে নন্দিনী ইশানকে ডেকে বলে,
“আজ মাধুরীর সঙ্গে আবার দেখা করতে হবে। আমি চাই, তুমি তাকে স্পষ্ট করে বোঝাও যে তুমি এই সম্পর্ক নিয়ে সিরিয়াস। শুধু ভালোবাসা বললে হবে না, তাকে বোঝাও যে তুমি ভবিষ্যতেও তার পাশে থাকতে চাও।”
ইশান দ্বিধায় পড়ে।
“তুমি কি বুঝতে পারছ, আমি কতটা ভয় পাচ্ছি?”
“ভয় পেতে থাকলে তুমি হারবে। ভালোবাসা সাহসীদের জন্য। তুমি যদি তাকে সত্যিই ভালোবাসো, তবে সাহস নিয়ে এগিয়ে যাও।”
ইশান বাড়িতে গিয়ে দেখে, মাধুরী বারান্দায় বসে আছেন। তার মুখে একধরনের অস্থিরতা। ইশান ধীরে ধীরে তার সামনে গিয়ে বসে।
“মা, আমি জানি, কাল রাতে আমার কথা শুনে আপনি অস্বস্তি বোধ করেছেন। কিন্তু আমার মন যা বলে, তা আপনার কাছে লুকানো ঠিক হবে না। আমি জানি, এটা বলা সহজ নয়। কিন্তু আমি আপনাকে ভালোবাসি। আর শুধু এই সমাজের জন্য সেটা ভুল বলে মেনে নিতে পারি না।”
মাধুরী চুপ করে থাকে। তার চোখে জল জমে।
“ইশান, তুমি যা বলছ, তা সহজ নয়। আমি জানি, তুমি সত্যি কথা বলছ। কিন্তু আমাদের এই সম্পর্ক মেনে নেওয়া কি সম্ভব?”
মাধুরীর সিদ্ধান্তের দ্বন্দ্ব
মাধুরী চুপচাপ বারান্দার চেয়ারে বসে আছেন। ইশানের শেষ কথাগুলো তার মনে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে।
“আমি আপনাকে ভালোবাসি। আর শুধু এই সমাজের জন্য সেটা ভুল বলে মেনে নিতে পারি না।”
তার চোখে জল জমে, কিন্তু সেটা আটকে রাখার চেষ্টা করে। নিজের হাত মুঠো করে রাখেন। মনে হচ্ছে, যেন ভেতরে কোনো ঝড় বইছে।
মাধুরীর একাকী ভাবনা
সন্ধ্যার দিকে মাধুরী নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে একবার দেখে নেন।
“এই আমি, যার চুলে অর্ধেক সাদা। বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। আর সে, যে এখনো নিজের ভবিষ্যতের পথে হাঁটতে শুরু করেছে। কীভাবে সম্ভব এই সম্পর্ক?”
মাধুরী নিজেকে নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েন। ইশানের প্রতি তার মনের গভীরে অন্যরকম একটি অনুভূতি যে জন্ম নিয়েছে, তা সে অস্বীকার করতে পারে না। কিন্তু সেটি স্বীকার করার সাহসও তার নেই।
“ইশান কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসে? নাকি তার এই অনুভূতি সাময়িক? আর যদি সত্যিই ভালোবাসে, তবে আমি কি তার যোগ্য?”
অন্যদিকে, ইশান নন্দিনীর কাছে গিয়ে নিজের অস্থিরতা প্রকাশ করে।
“নন্দিনী, আমি জানি না মাধুরী আমার কথা কীভাবে নিচ্ছে। তার চোখে আমি কি এখনো ছোট সেই ইশান, যে তার স্নেহে বড় হয়েছে?”
নন্দিনী ইশানের কাঁধে হাত রেখে বলে,
“তুমি এত অস্থির হলে হবে না। মাধুরী আন্টি সময় নিচ্ছেন কারণ তার নিজের মনের সঙ্গেও লড়াই চলছে। তুমি যদি সত্যিই তাকে ভালোবাসো, তবে ধৈর্য ধরো। তার বিশ্বাস অর্জন করো।”
পরের দিন সকালে, নন্দিনী মাধুরীর বাড়িতে যায়। মাধুরী তাকে দেখে একটু বিস্মিত হন।
“নন্দিনী! এত সকালে?”
“হ্যাঁ, আন্টি। আপনার সঙ্গে কথা বলতে এসেছি। ইশানের ব্যাপারে।”
মাধুরী তার হাতের বইটা রেখে বলে,
“ইশানের ব্যাপারে? কেন?”
“কারণ, ইশানের অনুভূতিগুলো আপনি বুঝতে পারছেন কি না, সেটা আমি জানতে চাই।”
মাধুরী নীরব হয়ে যান। কিছুক্ষণ পর বলেন,
“নন্দিনী, আমি বুঝতে পারছি, ইশান আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু তুমি কি বুঝতে পারছ আমি তার মা, ইশান আমার নিজের সন্তান, এই সম্পর্ক কতটা অসম্ভব?”
নন্দিনী সোজাসাপ্টা জবাব দেয়,
“অসম্ভব নয়, আন্টি। আপনি শুধু সমাজের ভয় পাচ্ছেন। কিন্তু যদি সমাজকে সরিয়ে রেখে ভাবেন, আপনি একজন নারী, ইশান একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ, আপনি কি সত্যিই ইশানের ভালোবাসা ফিরিয়ে দিতে চান না?”
মাধুরী চুপ করে থাকেন। তার চোখে জল জমে যায়।
মাধুরী নন্দিনীর সরাসরি প্রশ্নে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। তার কণ্ঠ কিছুটা কাঁপছিল।
“তুমি কি বোঝো, এই সম্পর্ক মানে কী? ইশানের ভবিষ্যৎ কি আমি নষ্ট করে দিতে পারি? আমি তার কাছে কতটা বড় দায়িত্ব, সেটা তুমি বুঝতে পারো?”
নন্দিনী হেসে বলে,
“আপনি জানেন না, ইশানের ভবিষ্যৎ কেবল আপনিই। সে আপনার জন্যই জীবনটা সুন্দরভাবে দেখতে চায়। আপনি যদি নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন, সে ভেঙে পড়বে।”
মাধুরী মাথা নিচু করে ফিসফিস করে বলল,
“তাহলে কি তুমি বলছ, আমি আমার বয়স, দায়িত্ব, আর সমাজের ভয় সবকিছু ভুলে গিয়ে তার পাশে দাঁড়াই?”
নন্দিনী দৃঢ়ভাবে উত্তর দিল,
“হ্যাঁ। আপনি যদি তাকে ভালোবাসেন, তবে সবকিছু ভুলে যান। সমাজ নিয়ে চিন্তা করবেন কেন? ইশান কারো দয়া চায় না। সে শুধু আপনাকে পাশে চায়।”
ইশান জানে, নন্দিনী মাধুরীর সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছে। সে বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে মাধুরীর বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। তার মনের মধ্যে একরাশ অস্থিরতা।
“নন্দিনী কি তাকে বোঝাতে পারবে? মাধুরী কি কখনো আমাকে সেইভাবে দেখবে?”
কিছুক্ষণ পর নন্দিনী ফিরে আসে। তার মুখে এক ধরনের আত্মবিশ্বাসের ঝলক।
“মাধুরী আন্টি এখনো দ্বিধায় আছেন, কিন্তু আমি জানি, তার মনের দেয়াল ধীরে ধীরে ভাঙছে। তুমি শুধু সময় দাও।”
ইশান এবার নন্দিনীকে বলে,
“আমি জানি, আমাদের সম্পর্ক মেনে নেওয়া সহজ হবে না। কিন্তু আমি মাধুরীর সঙ্গে থাকতেই চাই। আর যদি সেটা করার জন্য সমাজের সামনে দাঁড়াতে হয়, তবে তাই করব।”
নন্দিনী তাকে সমর্থন জানায়।
“তোমার এই সাহসটাই ওর দরকার, ইশান। ওকে বুঝিয়ে দাও যে তুমি এই লড়াইয়ে একা নয়, ওকেও সঙ্গে চাইছ।”