রহস্যময় বাংলা চটি উপন্যাস লেখক তমাল মজুমদার …
তমাল বলল… মাঝ রাত এর আগে একটা জিনিস একটু পরীক্ষা করে নিতে চাই. শালিনী জিজ্ঞেস করলো… কী জিনিস বসস?
তমাল বলল… ঘোড়াটা বাঁ দিকে ঘোরে কী না?
গার্গি আর কুহেলি এক সাথে বলল… কিভাবে ঘুরবে? কাল রাত এই তো ভুল করে বাঁ দিকে ঘোরাবার চেস্টা করেছিলাম?
তমাল মাথা নেড়ে বলল… জানি… তবুও একবার নিশ্চিন্ত হতে চাই. যতদূর বুঝতে পারছি… বিখ্যাত কোনো প্রযুক্তিবিধকে দিয়ে একটা জটিল টেক্নালজী ব্যবহার করা হয়েছে ঘোড়াটার ভিতর.
একবার ডান দিকে ঘরানোর পরে বাঁ দিকের ল্যকটা খুলেও যেতে পারে. মনে করে দেখো… সূত্রে বলা আছে ” ডাইনে এবং বাঁ এ ঘুরে… সঠিক লক্ষ্যে পৌছে যাও”. বাকি তিনজনই এবার যুক্তিটা মেনে নিলো. আবার সেই বাঁশটা নিয়ে আসা হলো.
ঘোড়ার পায়েরফেক সেটা ঢুকিয়ে ৪ জনে দুটো দল এ ভাগ হয়ে বাঁশ এর দুপ্রান্তে বিপরীত মুখী চাপ দিয়ে ঘোরাবার চেস্টা করলো. কিন্তু ঘোড়া এক চুলও ঘূরলো না. অনেক রকম ভাবে জোড় খাটিয়ে তমাল নিশ্চিত হলো… কোনো মতেই ঘোড়া সম্ভব না.
তারা ফিরে এসে মাটিতে বসে পড়লো. তমাল চিৎ হয়ে শুয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে ঘন ঘন ধোয়া ছাড়তে লাগলো. বাকিরা চুপ করে তাকে চিন্তা করার সুযোগ দিলো. তমালকে গভীর ভাবে চিন্তা করতে দেখে শালিনী ছোট করে একবার তমালের বাড়াটারপর গার্গি আর কুহেলির দিকে তাকিয়ে নিলো.
তারপর একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আপন মনেই দুপাশে মাথা নারল. তমাল তার নিঃশ্বাস ছাড়ার শব্দ পেয়ে তাকিয়ে একটু মুচকি হাঁসল. তারপর উঠে পরে বলল… চলো.
সবাই তমালের পিছন পিছন সেই গর্তের মুখের কাছে এলো. তারপর তমালের নির্দেশে ৪জন মিলে ছোট পাথরটা টেনে সরিয়ে গর্তের মুখটা খুলে ফেলল. গার্গি আর কুহেলি কে বাইরে রেখে দুটো টর্চ নিয়ে তমাল আর শালিনী নেমে গেলো নীচে.
দুজনে সেই কলসী খোদাই করা পাথর তার সামনে গিয়ে দাড়ালো. অনেকখন ধরে খুতিয়ে পরীক্ষা করলো তমাল. সে ধারণা করলো এটা কোনো আল্গা পাথর বা টাইল… যেটা বসানো আছে. পকেট থেকে নাইফটা বের করে পাথরটার চারপাশের সিমেংট গুলো খুঁছে তোলার চেস্টা করলো সে.
কিছুক্ষন খোঁছা খুঁছির পরে হতাশ হলো তমাল. তার ভুরু দুটো কুচকে গেলো. সে পরে থাকা একটা পাথর টুকরো দিয়ে আঘাত করলো পাথরটার উপরে… শব্দই বলে দিলো.. নিরেট পাথর এটা… ফাঁপা নয় পিছনে.
শালিনী বলল… ব্যাপার কী বসস? কোনো সিমেংট বা সুর্কী তো নেই চারপাশে… তাহলে পাথরটা আটকে আছে কিভাবে দেয়ালে?
তমাল বলল… আমি ও ঠিক সেটাই ভাবছি শালী. রহস্যটারর পরতে পরতে আরও রহস্য… এত জটিল কেস আগে পেয়েছি বলে তো মনে হয় না.
শালিনীও বলল… না… পাইনি এর আগে. পরাজিতো সৈনিক এর মতো বাইরে বেরিয়ে এলো দুজনে. তাদের মুখ দেখেই বুঝে গেলো গার্গি আর কুহেলি… কী হলো? খারাপ কিছু? বলল কুহেলি.
তমাল বলল… খুব খারাপ. সকাল থেকে যেটা ভেবেছিলাম মীল্লো না সেটা. পাথরটা কে খসাতেই পারলাম না.
গার্গি বলল.. খুব শক্ত করে আটকানো বুঝি? ভেঙ্গে ফেললে হয় না?
তমাল বলল… না.. নিরেট পাথর… ভাঙ্গাও সম্ভব না. হয়তো আমরা ভুল দিকে চিন্তা করছি… এটা হয়তো সঠিক দিক নয়.
কুহেলি বলল খোলা.. ভাঙ্গা.. ঠেলে সরানো… কিছুই করা গেলো না?
এত জোরে চমকে উঠে কুহেলির দিকে তাকলো তমাল… যে তার কাঁধের ব্যাথাটা টন টন করে উঠলো. সে বলল… কী বললে তুমি? ঠেলে সরানো? ওয়াও ! ইউ আরে ব্রিলিযেংট কুহেলি… জাস্ট অমেজ়িংগ… না তোমাকে আমার সহকারী বানতেই হবে… আলগোছে… খেলার ছলে এমন সব কথা বলো… যে রহস্যের জটই খুলে যায়. প্রথমে বাংলা ব্যাকারণ এর আ-কার… আর এবার ঠেলে সরানো !
এই রহস্যটার অর্ধেক তুমি এ সমাধান করলে কুহেলি… ওটাই হবে… এক মাত্র ঠেলে সরানো যাবে পাথরটাকে… আর কিছুই হতে পারে না… থ্যাঙ্কস.. তোমাকে অনেক অনেক থ্যাঙ্কস… বলেই তার গালে চকাস করে একটা চুমু খেলো তমাল…. চাঁদ এর আলোর নীচে না থাকলে তার গাল দুটো লজ্জায় লাল হয়ে ওটা সবাই দেখতে পেত.
তমাল বলল সবাই নীচে চলো এবার… আমাদের দুজনে কাজ হবে না… ৪ জনের শক্তিই লাগবে মনে হচ্ছে. সিরি দিয়ে সাবধানে নেমে এলো তারা. তারপর পাথরটাতে হাত লাগিয়ে গায়ের সব জোড় দিয়ে ঠেলতে শুরু করলো চারজনে.
প্রথমে কিছুই হলো না… তারপর হঠাৎ নড়ে উঠলো পাথরটা. একটু একটু করে সরে যেতে লাগলো পিছন দিকে. উত্তেজনায় দম বন্ধ হবার মতো অবস্থা চারজনের. ততক্ষন পর্যন্ত তারা পাথরটাকে ঠেলতে লাগলো যতক্ষন সেটা পুরোপুরি থেমে না যায়.
একটা ২ফুট/২ফুট চারকোনা গর্ত তৈরী হলো দেয়ালে. ভিতরে টর্চ মারটেই নীচের দিকে আর একটা গর্ত দেখা গেলো. তার ভিতরে একটা ধাতব চাকা দেখা গেলো… অনেকটা গাড়ির স্টিয়ারিংগ হুইল এর মতো দেখতে.
তমাল টর্চ দুটো গার্গি আর কুহেলিকে ধরিয়ে দিয়ে শালিনীকে নিয়ে স্টিয়ারিংগটা ঘোরাতে চেস্টা করলো. অনেক দিন পরে থাকার জন্য চাকাটা খুব জমে গেছে. এদিকে ওদিকে ঘুরিয়ে চাপ দিতে দিতে এক সময় একটু একটু করে ঘুরতে শুরু করলো চাকা.
গার্গি আর কুহেলি নিজেদের কৌতুলকে সামলে না রাখতে পেরে প্রায় শালিনী আর তমালের ঘারের উপর হুমরী খেয়ে পড়েছে. ঘোরাতে ঘোরাতে হঠাৎ একটা যান্ত্রিক “ক্লিক” শব্দ করে থেমে গেলো হুইলটা.
শব্দটা কানে যেতেই নিজেদের অজান্তে হই হই করে উঠলো গার্গি আর কুহেলি… যেন মনে হলো… এই মাত্র ইন্ডিয়া ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনালে বিপক্ষ দলের লাস্ট উইকেটটা ফেলে দিলো. তমাল পকেট থেকে রুমাল বের করে ঘাম মুছতে মুছতে বলল… চলো উপরে যাওয়া যাক. আনন্দে প্রায় লাফাতে লাফাতে উপরে উঠে এলো সবাই.
তারপর সবাই মিলে ঘোড়াটা কে বা দিকে ঘরানোর জন্য চাপ দিলো… দিয়েই গেলো… দিয়েই গেলো. তারপর বুঝলো নরবে না ঘোড়া. মনে হলো যেন আকাশের চাঁদটা কে কপ করে কেউ গিলে ফেলে জগতটা কে অন্ধকারে ঢেকে দিলো… এমন অবস্থা হলো ওদের মুখের.
এতক্ষণ এর আনন্দ এবার সত্যি সত্যি গভীর হতাসয় তোলিয়ে গেলো.এক মাত্র তমাল ছাড়া বাকি তিনজন মাথায় হাত দিয়ে ঘোড়ার পায়ের নীচে বসে পড়লো. সময় বয়ে চলেছে… ১২টা বাজতে আর বেশি দেরি নেই… এখনই এই জটিল ধাঁধার সমাধান বের করতে না পারলে আবার ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে. ভিতরে ভিতরে ভিষণ অস্থির হয়ে উঠলো তমাল. পাইচারি করে বেড়াতে লাগলো সে.. কখনো মুখ আকাশের দিকে তুলে… কখনো বুকে ঘার গুজে. মাথার ভিতর ঝড় বয়ে চলেছে তার.
সময় নেই… বেশি সময় নেই হাতে… সমাধান তাকে পেতে হবে… এভাবে হেরে যেতে পারে না তমাল… জিততে তাকে হবেই… কিছুতে হারবে না সে….! বাকি তিনজন চুপ করে তমালের অস্থিরতা লক্ষ্য করছে… তমালের মাথার ভিতর দুটো লাইন আটকে যাওয়া কলের-গান এর মতো বার বার বেজেই চলেছে…. “উল্টো সোজা দুইই সঠিক… দুটো থেকেই শিক্ষা নাও/ ডাইনে এবং বাঁ এ ঘুরে… সঠিক লক্ষ্যে পৌছে যাও”. থমকে দাড়ালো তমাল.
তারপর শালিনী কে জিজ্ঞেস করলো… শালী… হুইলটা কোন দিকে ঘুরিয়েছিলাম আমরা?
শালিনী একটু চুপ করে ভেবে নিয়ে বলল… ডান দিক.
তমাল চেঁচিয়ে উঠলো… “ইয়েসসসস”. তারপর বিচ্ছীরড়ি ৩/৪টে গালাগলী দিলো.
গার্গির দিকে ফিরে বলল… তোমাদের পূর্বপুরুষ দের কী জিলিপির দোকান ছিল নাকি? পেছিয়ে পেছিয়ে রহস্যটাকে জিলিপি বানিয়ে ছেড়েছে একেবারে… চলো আবার নীচে. আজ জিলিপি খেয়ে হজম করেই ছাড়ব. আবার নেমে এলো তারা মাটির নীচের ঘরটায়.
হুইল এর কাছে গিয়ে আগের মতই শালিনী আর তমাল ঘোরাতে শুরু করলো… তবে এবার উল্টো দিকে. একবার ঘুরে যাওয়া প্যাচ গুলো সহজে ঘুরে চাকা আবার টাইট হলো… তমাল বুঝলো যতটা ঘুরিয়েছিল সেটা আবার উল্টো ঘোরানো হয়ে গেছে.. তারা বা দিকে ঘরানোর জন্য চাপ দিলো এবার… এবং হুইল ঘুরতে শুরু করলো… আস্তে আস্তে তমালের মুখটা হাঁসিতে ঝলমল করে উঠলো.. বাঁ দিকে কিছুক্ষণ ঘরানোর পরে আবার “ক্লিক” শব্দটা পাওয়া গেলো.