রহস্যময় বাংলা চটি উপন্যাস লেখক তমাল মজুমদার …
তমাল বলল… চলো… এবার ঘোড়ার বাপও ঘুরবে বা দিকে. সিরি দিয়ে উঠতে উঠতে তমাল বলল… বুঝলে শালিনী… এই কবিতা তার বিশেসত্ব হচ্ছে প্রত্যেক লাইন এর অর্থ একাধিক বার ভাবতে হবে.. দুটো বা তিনটে সূত্র লুকানো প্রত্যেকটা লাইনে. উফফফ ধন্য তুমি চন্দ্রনাথ ! বেঁচে থাকলে তোমাকে ভারত-রত্নও দেবার জন্য সুপারিস করতাম !
বাঁশ এর উপর ১..২…৩ বলে এক সাথে সবাই মিলে চাপ দিতেই ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দে বাঁ দিকে ঘুরতে শুরু করলো ঘোড়া. হই হই করে উঠলো সবাই. ঘড়িতে তখন ১২টা বেজে ৫ মিনিট হয়েছে. ঘোড়াটা এবার আগের মতো ৯০ ডিগ্রী ঘূরলো না.
চাঁদ এর সঙ্গে একটা নির্দিস্টো কোন তৈরী করে ঘোড়া বন্ধ করলো ঘোড়া. ওরা চারজন একটু পিছিয়ে এসে ছায়াটা লক্ষ্য করলো… আর উত্তেজিত হয়ে উঠলো. এবারে কলসির মতো নয়… ঘোড়ার মাথা আর দুটো ছড়ানো কান মিলে একফালি চাঁদ এর মতো ছায়া তৈরী করেছে. ঠিক মনে হচ্ছে যেন আকাশ এর চাঁদ এর একটা প্রতিছবি পড়েছে মাটিতে.. আকাশেরটা রূপালী আর মাটিরটা কালো.
তমাল আগের দিনের মতো একটা লাঠি দিয়ে ছায়াটার চারদিকে একটা বৃত্তও একে দিলো.
তারপর কোদাল দিয়ে নুরী পাথর সরাতে শুরু করলো. এর পর সব কিছু যেন গত রাত এর রিপীট টেলিকাস্ট হচ্ছে.. বড়ো চৌকো পাথর বেরলো… তমাল জানে কী করতে হবে.. চারজন মিলে পাথর সরিয়ে নীচে ছোট চারকোণা পাথর পেলো.. সেটাকে সরিয়ে একটা গর্ত-মুখ পাওয়া গেলো… এখানেও ধাপে ধাপে সিরি নেমে গেছে. তমাল জানে সে রহস্যের শেষ পর্যায় পৌছে গেছে… তাই কাল রাত এর ভুল আজ আর করলো না.
মিনিট ৩০ অপেক্ষা করে কাগজ জ্বালিয়ে অক্সিজন লেভাইল পরীক্ষা করে বাইরে গার্গি আর শালিনীকে রেখে কুহেলিকে নিয়ে নীচে নেমে গেলো. শালিনী আর গার্গিকে রাখার কারণ.. শালিনী কে আনআর্মড কমব্যাটে হারানো সোজা নয়… আর গার্গি স্থানিয়ও কেউ হলে ঠিক চিনতে পারবে.
বেশ কিছুক্ষণ হলো তমাল আর কুহেলি নীচে নেমেছে… তাদের উঠে আসতে দেরি হচ্ছে দেখে ভিতরে ভিতরে অস্থির হয়ে উঠলো শালিনী আর গার্গি. কিছুক্ষণ পরে উঠে এলো তমাল… শালিনী বলল… কী হলো বসস? পেলেন কিছু?
তমাল বলল… না.. এখনো পাইনি…তবে বুঝতে পেরেছি কোথায় আছে. কোদালটা দাও তো… কোদাল নিয়ে তমাল আবার নীচে নিয়ে গেলো… আবার অস্থির ভাবে অপেক্ষা করতে লাগলো গার্গি আর শালিনী. নীচে নেমে তমাল আর কুহেলি প্রথমে কিছুই দেখতে পেলো না. আগের তার মতই একটা রূম এটাও… তবে একদম ফাঁকা.
কুহেলি বলল… যাহ্ ! কিছুই তো নেই তমাল দা?
তমাল বলল… আছে.. অবস্যই আছে.. খুজতে হবে.
কুহেলি বলল… যদি আমাদের আগেই কেউ বের করে নিয়ে থাকে চুপিসারে?
তমাল হেঁসে বলল… আগের ঘর টায় না ঢুকে এ ঘরে ঢোকা সম্ভব না. যদি আগেই কেউ নিয়েই থাকতো তাহলে আগের ঘরে ওই মোহরের থলিটা রেখে গেলো কেন? খুব নির্লোভ চর বলছ? যুক্তিটা বুঝে মাথা নারল কুহেলি.
তমাল আবার বলল… আর দেয়াল এর পাথরটার কথা ভাবো… যেটার নীচে হুইল ছিল… সেটা একবার ঠেলে সরিয়ে দিলে আর আগের জায়গায় আনা যাবে না… ওয়িন টাইম ব্যবহার মেকানিজম. সেটা তো অক্ষতই ছিল. সুতরাং ভুল ভাল না ভেবে ভালো করে খোজো. টর্চ মেরে মেরে তমাল আর কুহেলি ঘরটা তন্ন তন্ন করে খুজতে লাগলো. কিন্তু কোথাও কিছু দেখতে পেলো না. ভিতরে ভিতরে হতাশা গ্রাস করতে শুরু করেছে তমাল কে… এমন সময় ছোট্ট একটা হোঁচট খেলো কুহেলি.
টর্চ মেরে ধুলোতে ঢাকা মেঝেতে তেমন কিছুই পেলো না যার সাথে হোঁচট লাগতে পরে. তমাল নিচু হয়ে ভালো করে দেখলো জায়গাটা… তারপর হাতের টর্চটা মাটিতে শুইয়ে দিলো. টর্চ এর আলো মেঝে বরাবর সোজা পড়তে তারা বুঝতে পারল… মেঝের মাঝখানটা উচু. তমালের মুখে হাঁসি ফুটে উঠলো… সে কুহেলি কে বলল… দাড়াও… আমি কোদালটা নিয়ে আসি… খুড়তে হবে….
কুহেলি বীর বীর করলো… ” কোথায় মাথা খুড়তে হবে”……
কোদাল এনে মেঝের মাঝখানে খুড়তে শুরু করলো… এক ফুট মতো খোড়া হতেই ঘটাং করে ধাতুতে ধাতুর বাড়ি খাবার আওয়াজ উঠলো. ইয়াহূঊঊো….!!! বলে এমন জোরে চেঁচিয়ে উঠলো কুহেলি যে উপর থেকে শালিনী আর গার্গিও শুনতে পেলো সেই চিৎকার. ওরাও বুঝতে পারল অবশেষে গুপ্তধন পাওয়া গেছে… দুজন দুজনকে আনন্দে জড়িয়ে ধরলো শালিনী আর গার্গি. খুব সাবধানে খুড়লো তমাল. একটা ছোট্ট বাধনো চৌবাচ্চার মতো জায়গা… মাটি দিয়ে বন্ধ করে রাখা ছিল.
আস্তে আস্তে মাটি সরিয়ে বেরলো দুটো পিতল এর কলসী… আর বড়ো একটা লোহার বাক্স. তমালের বুকের ভিতরটা এত কাঁপতে শুরু করেছিল যে ঠিক মতো কোদালও চালাতে পারছিল না. কলসী দুটো তবু দুজন মিলে উচু করতে পারল অনেক কস্টে… কিন্তু বাক্সটা নাড়তে পড়লো না তমাল আর কুহেলি.
একটা কলসী দুজনে ধরা ধরি করে উপরে নিয়ে এলো. তাদের কলসী নিয়ে উঠতে দেখে গার্গি আর শালিনী আনন্দে লাফতে লাগলো. তমাল ইসারায় তাদের চুপ করতে বলল… তারপর বলল… আরও আছে… চেঁচিও না… কেউ এসে পরলে বিপদ হয়ে যাবে.
অনিচ্ছা সত্বেও গার্গি আর শালিনী নিজেদের সামলে নিলো. গর্তের মুখে ওদের দুজনকে দাড় করিয়ে রেখে তমাল আর কুহেলি কলসীটা তমালের ঘরে রেখে আবার ফিরে এলো. দ্বিতীয় কলসীটা ও একই ভাবে উপরে রেখে দরজায় তালা মেরে নেমে এলো কুহেলি আর তমাল.
এবার আর দুজনে হবে না…. গার্গি আর শালিনী কে নিয়ে চারজনে পাতাল ঘরে প্রবেশ করলো. এত বড়ো বাক্স দেখে শালিনী বলল… ঊহ গড ! এততও বড়ো? তারপর অনেক কস্টে ৪জন মিলে বাক্সটা টানতে টানতে দোতলায় তমালের ঘরে এনে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলো.
ধপাস্ করে বসে পড়লো তমাল… শালিনীকে বলল জানালা গুলো বন্ধ করে পর্দা টেনে দাও… আলো যেন বাইরে না যায়… বলে সে একটা সিগার ধরিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো. সবাই যখন কলসী আর বক্সের ভিতর কী আছে দেখার জন্য ছটফট করছে… তখন তমালকে আরাম করে শুয়ে নিশ্চিন্তে সিগারেট টানতে দেখে রেগে গেলো কুহেলি… বলল… এই তোমার বড্ড দোশ তমাল দা… আমরা মরে যাচ্ছি কৌতুহল এ… আর তুমি এখন শয়তানি শুরু করলে… ওঠো ওঠো… জলদি খোলো.
তমাল নিজের প্যান্ট এর বেল্ট খুলতে শুরু করতেই কুহেলি দৌড়ে এসে তার বুকে দমা দম কিল মারতে মারতে বলতে লাগলো… পাজি.. শয়তার… বদমাশ ! অন্য রা হেঁসে লুটপুটি হচ্ছে ওদের কান্ড দেখে.
তমাল বলল… ” অপেক্ষা আর ধৈর্য রেখো ইন্দু-সম সহনশীল/ কেমনে সে জোৎসনায় পেতে জমায় আলো টিল টিল”.
কুহেলি বলল… ইয়াড়কি রাখো… প্লীজ এবার কলসির মুখটা খোলো… আর অপেক্ষা করতে পারছি না.
তমাল উঠে এলো. কলসী দুটোর মুখ একটা ধাতুর ঢাকনা উপর গলা দিয়ে আটকানো. তমাল পকেট থেকে নাইফটা বের করে আস্তে আস্তে গলা সরিয়ে ফেলল. ঢাকনাটা তুলে ম্যাজিসিয়ান যেভাবে তার শেষ ট্রিক দেখায়… সেভাবে এক ঠেলায় কাত করে দিলো একটা কলসী.
জলতরঙ্গের মতো শব্দ করে ঝর্নার জলের মতো সোনালী ধারা তৈরী করে মেঝেতে গড়িয়ে নামতে লাগলো…. রাশি রাশি সোনার মোহর. পুরো কলসীটা উপুর করে দিতে একটা ছোট খাটো স্তুপ তৈরী হলো মোহরের. কেউ কোনো কথা বলতে পারছে না… মন্ত্রো মুগ্ধের মতো তাকিয়ে আছে ঝিক মিক করতে থাকা ১০০ বছরের পুরানো মোহর গুলোর দিকে.
দ্বিতীয় কলসীটাও ওই স্তুপ এর উপর উজাড় করে মোহরের পাহাড় বানিয়ে ফেলল তারা. এত সোনা এক সাথে দেখবে.. জীবনে কল্পনাতেও ভাবেনি ওরা চারজন. তমাল বলল… গার্গি… নাও… ” কানক প্রবায় বড় জীবন… সঠিক শ্রম আর কাজ এ “… অনেক শ্রম করেছ… তোমার দুঃখের দিন আজ থেকে শেষ. তবে এই শেষ না… এখনো আলো ফোটা বাকি. বুঝতে না পেরে সবাই তমালের দিকে তাকলো.