রহস্যময় বাংলা চটি উপন্যাস লেখক তমাল মজুমদার …
তিনি জীবন ধারার রাস টানতে চেস্টা করলেন… কিন্তু ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গেছে… বয়স তাকে অসমর্থ করে তুলেছে. জমিদারীতে তখন আয় এর চাইতে ব্যায় বেশি.
তাই বোধ হয় তিনি ছেলের নাম এ একটা উপদেশ… কবিতা আকারে লিখে ছেলের হাতে দিলেন. এটাই সেই কবিতা… বা ছড়া. কবিতাটা দিয়ে ছেলে কে বললেন… যদি কোনদিন বিপদে পরো.. এটা কে মন দিয়ে পড়ো… বিপদ থেকে উদ্ধার এর পথ খুজে পাবে এর ভিতর. কিন্তু জমিদারী রক্তও শরীরে রয়েছে…
প্রথম বয়সে আমার ঠাকুরদার বাবা ও বেশ কিছু টাকা উড়িয়ে দিলেন বাবুয়ানিতে. কিন্তু তিনি শিক্ষার আলোর পথ দেখেছিলেন. সেই যুগেও আমার ঠাকুরদার বাবা বি.এ পাস করেছিলেন.
বাইরের সমাজে মিশে তিনি সম্পত্তির কদর করতে শিখলেন. দেওয়া কবিতাটাও হয়তো তার শুভ বুদ্ধির জাগরণ ঘটিয়েছিল. তিনি চেস্টা করে গেছেন পরিবারকে বাঁচিয়ে তোলার. কিন্তু কথায় বলে এক পুরুষ পর পর ভালো আর খারাপ গুণ বংশ ধারাতে প্রকাশ পায়.
আমার ঠাকুরদার ভিতরও শসিশেখর এর খারাপ গুণ গুলো পুরো মাত্রায় প্রকাশ পেলো. আমার ঠাকুরদার নাম অলকেস রায়চৌধুরী. সারা জীবন সংসার সম্পর্কে উদাসীন.
ভোগ বিলাস এ ডুবে থাকলেন যৌবন এ. চন্দ্রনাথ এর বয়স হয়েছে… তিনি ছেলে কে বাগে আনতে পারলেন না. দারিদ্রও এসে হানা দিতে শুরু করলো পরিবার এ. ভালো পরিবার দেখে ছেলের বিয়ে দিলেন চন্দ্রনাথ… এক ছেলে এবং এক মেয়ে হলো তার… নিখিলেস ও সর্বানী… মানে আমার বাবা ও আমার পিসি. তন্ময় হয়ে শুনতে শুনতে তমালের বুকের উপর শুয়েই পড়েছে কুহেলি…
তমাল তার চুল গুলো নিয়ে বিলি কাটছে… কিন্তু পুর্ণ মনোযোগ গার্গির দিকে… গার্গি বলে চলেছে…. চন্দ্রনাথ ও একদিন তার ছেলে কে ডেকে ভাবর দেওয়া কবিতা আর একই উপদেশ ছেলে অলকেস কে দিয়ে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে গেলেন.
শসিশেখর যেমন পরন্ত বেলায় এসে অনুতাপ করেছিলেন… অলকেস এর ভিতর ও সেটা দেখা দিলো. তিনি লক্ষ্য করলেন এক পুরুষ পর পর বংশগতিতে গুণ এর প্রবাহ তার ছেলের বেলায় খাটলো না.
তার ছেলে মানে আমার বাবা ও জমিদার বংশের সমস্ত দোশ গুলো ধারণ করলেন… চন্দ্রনাথ এর গুণ বা শিক্ষা… কোনোটাই পেলেন না আমার বাবা. তার অকরমন্নতায় সংসার এর লক্ষ্মী পরিবার ছেড়ে চলে গেলেন.. আর দারিদ্রের অতলে তলিয়ে গেলাম আমরা. অলকেস চেস্টা করেছিলেন পরিবার কে শৃংখলায় বাধতে…
তাই শেষ বয়সে তিনি বেশ কঠোর এবং রাগী হয়ে পড়েছিলেন. আমার পিসি সর্বানী এই সময় একজন নিচু জাত এর ছেলের প্রেমে পড়েন. বাড়ি থেকে পালিয়ে তাকে বিয়েও করেন.
অলকেস রেগে গিয়ে তাকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিতও করেন. কিছুদিন পরে তাদের এক সন্তান হয়… আমার পিসতুতো দাদা… সৃজন. একটা আক্সিডেংটে পিসি পিষেমসাই দুজনই মারা পড়েন…
সৃজনদার বয়স তখন ১২ কি ১৩. ঠাকুরদা ভেঙ্গে পড়েন মেয়ের মৃত্যুতে. সম্পত্তি থেকে বঞ্চিতও করলেও সৃজনদাকে বাড়িতে আশ্রয় দেন. সেই থেকে সে এই বাড়ি তেই আছে. আমার বাবা মা এর ২টি সন্তান…
আমার দাদা অম্বরিস রয়চৌধুরী আর আমি. দাদা বছর ৫ এক হলো বিয়ে করেছেন. কিন্তু সংসার এ তার ও মন নেই. ভিষণ বোড মেজজি… আর মদ গাঁজা জুআ কোনো কিছুই বাদ নেই তার.
আমরা আস্তে আস্তে সমাজ-স্তর এর সর্বোচ্ছ শিখর থেকে সরবো-নিম্নও স্তর এ এসে পৌচ্চেছি তমাল দা… জানি না কিভাবে চলবে এর পরে. পড়াশুনা করে নিজের পায়ে দাড়াবো… টাকার অভাবে সেটাও শেষ করতে পারবো না বোধ হয়…. এই পর্যন্ত বলে গার্গি একটু থামল…
তমাল ও কুহেলি ও চুপ থেকে তাকে সময় দিলো গুছিয়ে নিতে. তারপর তমাল বলল… তারপর কী হলো গার্গি? কবিতাটা তোমাকে কবে দিলেন তোমার ঠাকুরদা?
গার্গি বলল…. কলেজ হোস্টেলে থেকেই খবর পেলাম ঠাকুরদা ভিষণ অসুস্থ. আমি চলে এলাম. শেষ দিকে ঠাকুরদা প্রায় কাউকেই সহ্য করতে পারছিলেন না… একমাত্র আমি ছাড়া. আমাকে ভিষণ ভালোবাসতেন তিনি. আমি গেলেই উনি কাছে টেনে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন. বলতেন তুই এ আমাদের বংশের এক মাত্র ভর্ষা…..
আমি পৌছে দেখলাম তিনি ভিষণ অসুস্থ. তিনি বললেন গার্গি বাদে সবাই একটু বাইরে যাও… আমার সাথে দিদিভাই এর একটু কথা আছে. অনিচ্ছা সত্বেও সবাই বেরিয়ে গেলো.
আমাকে বললেন দরজা লাগিয়ে দিতে. তারপর চাবি দিয়ে সিন্দুক খুলতে বললেন. ভিতরে টাকা পয়সা কিছুই ছিল না… ছিল একটা উইল… আর একটা খামে ওই কবিতাটা.
আমাকে বললেন… দিদিভাই… আমি চললাম… কিছুই দিয়ে যেতে পারলাম না তোদের. বাড়িটায় এক মাত্র সম্বল… সেটা তোর দাদা কেই দিয়ে গেলাম. তবে এই একটা জিনিস অনেক পুরুষ ধরে চলে আসছে আমাদের বংশে. জানি না এটাতে তোর কিছু লাভ হবে কী না.
তবে তোকে এটা দিয়ে গেলাম. তুই লেখা পড়া শিখেছিস… তুই হয়তো এই জিনিসটার উদ্দেশ্য আর নির্দেশ বুঝতে পারবি. আমার মনে হয়… কিছু একটা ব্যাপার আছে এটার ভিতর.. তাই তোকে দিয়ে গেলাম…. বলে খামটা তিনি আমার হাতে তুলে দিলেন… আর বললেন এটা যেন হাত ছাড়া না করি…
দুদিন পরে ঠাকুরদা মারা গেলেন. তমাল প্রশ্নও করলো… আর কে কে জানে খাঁ তার কথা? গার্গি বলল… সবাই জানে. ঠাকুরদা বেঁচে থাকতে কেউ কিছু বলল না… কিন্তু তিনি চলে যেতেই সবাই আমাকে চেপে ধরলো… কী দিয়ে গেছেন আমাকে ঠাকুর দা? আমি খামটা তাদের হাতে তুলে দিলাম.
দাদা কবিতাটা দেখে বিদ্রুপ করলো. সৃজন দা মুখ বাঁকালো… শুধু বৌদির ভুরু কুচকে রইলো. তারপর উইলটা পড়া হলো. ঠাকুরদা উইল করে গেছেন… আমার স্থাবর ও অস্থাবর যাবতীয সম্পত্তির ভিতর শুধু মাত্র স্থাবর সম্পত্তি… এই বসতবাড়ি পাবে আমার একমাত্র পুত্র নিখিলেস এর পুত্র অম্বরিস.
আর আমার সমস্ত অস্থাবর এবং গচ্চিত সম্পত্তি পাবে নিখিলেস এর কন্যা গার্গি রায়চৌধুরী. আবার উল্লেখ যে একমাত্র গার্গি রায়চৌধুরী এর অধিকার থাকবে তার উপর… অন্য কারো নয়. সবাই অবাক হয়ে গেলো… অস্থাবর সম্পত্তি…
টাকা পয়সা যত সামান্নই আছে… সেগুলো উইল করে যাবার দরকার ছিল না… তবুও তিনি কেন উইল করলেন… এবং ২বার উল্লেখ করে গেলেন উইলে… কেউই বুঝতে পারছিল না.
দাদার ধারণা বুড়ো বয়সের ভিমরতি… নিজেকে নাকি ঠাকুরদা তখনও জমিদার ভেবে স্বপ্ন দেখতেন.. আর ভাবতেন তার সিন্দুক বোঝাই সোনা দানা মোহর… সেই কল্পনার ধ্যানেই আমাকে দিয়ে গেছেন.
বৌদি কিন্তু সন্দেহ করলো সেদিন সবাইকে বের করে দিয়ে ঠাকুরদা আমাকে কোনো দামী জিনিস বা তার হদিস দিয়ে গেছেন. প্রথমে আমার উপর চোট্পাট্.. তারপর ভয় দেখিয়ে কথা আদায়ের চেস্টা চলল…
লাভ হলো না দেখে এখন খুব ভালো ব্যবহার করে মন জয়ের চেস্টা করে চলেছেন. কিন্তু তমালদা বিশ্বাস করূন আমি কিছুই জানি না… কিছুই বুঝতে পারছি না… !
তমাল বলল… বলাই বাহুল্য়ো.. তুমি বুঝতে পারলে আমাকে ডাকতে না গার্গি. আচ্ছা এবার এসো দেখা যাক তোমার ঠাকুরদা তোমাকে কী দিয়ে গেছেন… খাম থেকে কাগজটা খুলে কোলের উপর স্বযত্নে মেলে ধরলো তমাল. তারপর জোরে জোরে পড়তে শুরু করলো….
“চন্দ্র-কথা” জীবনটাও চাঁদ এর মতো/ সামনে আলো পিছে ক্ষত/ যখন আলোয় বসতে থাকে, কেউ দেখেনা অন্ধকার/ হঠাৎ আঁধার ঘনায় যখন…. চতুর্দিকে বন্ধ দ্বার./ ভয় পেয়ো না অন্ধকারে/ ফুটবে আলো চন্দ্রহারে/ কানক প্রবায় বড় জীবন…. সঠিক শ্রম আর কাজে/ দুবার খুলে বাইরে এসো….
দাড়াও জগত মাঝে./ দৃষ্টি রেখো চতুর্পাশে/ কোথায় সুযোগ, কখন আসে/ অপেক্ষা আর ধৈর্য রেখো… ইন্দু-সম সহনশীল/ কামনে সে জোৎসনা পেতে… জমায় আলো তিল তিল./ মধ্য বয়স পথ দেখাবে/ কোথায় মাথা খুড়তে হবে/ সঠিক পথের সন্ধানেতে…. চক্রাকারে ঘুরছে হায় !/ আকার বারে… আকার কমে… সোলো-কলা পুর্ণ হয় !!/ পূর্ণিমা… আর অমনীসা/ একই শশির দুটি দশা/ উল্টো সোজা দুইই সঠিক… দুটো থেকেই শিক্ষা নাও/ ডাইনে এবং বাঁয়ে ঘুরে… সঠিক লক্ষ্যে পৌছে যাও !/ কবিতাটা পড়া শেষ হতেই কুহেলি বলল… বাবাহ! কী এটা?
এতো দেখি হিতপদেশ ! আমি তো ভাবলাম গুপ্তধন টন কিছু হবে. হা ! সারা জীবন বাবুগিরি করে শেষে এসে উপদেশ? তাও আবার উইল করে দিয়ে গেছে… আজব ব্যাপার সব.