আমি বেরিয়ে গেলাম। বাসার নিচে গিয়ে গলির মুখে দাঁড়িয়ে কানে দিলাম ফোনটা। এই জায়গাটায় লোকসমাগম নেই। একটা সিগারেট ধরালাম।
মা জয়ার সম্পর্কে খুটিনাটি জিজ্ঞেস করছেন। তার ফ্যামিলির কথা।
মা- “তুমি তাহলে একা থাকো স্টেটসে?”
জয়া- “জ্বি”
মা- “রাজীবের সাথে তোমার কি কিছু চলছে?”
জয়া – একটু থতমত খেয়ে আমতা আমতা করে বলল, “না তো। আমরা জাস্ট ফ্রেন্ডস৷ ও আমাকে কিছু কাজে হেল্প করেছে ওর অ্যাসাইনমেন্টের জন্য। এই আর কি। আর কিছু না।”
মা- “আমার ছেলেটা একটু আবেগী। আমি দেখেছি ও কিভাবে তোমার দিকে তাকায়। তুমি বয়সে ওর থেকে অনেক বড়। এই বয়সে মেয়েদের প্রতি আকর্ষণ আসাই স্বাভাবিক। আর তুমিও দেখতে ভারী সুন্দরী।”
জয়া- কোন উত্তর নেই।
মা- “কিন্তু সব সম্পর্ক সব সময় ঠিক না। তুমি তো ম্যাচিউরড তুমি বোঝ।”
জয়া- “আপনি যেমন ভাবছেন অমন না…”
মা- “এখন না, কিন্তু হতেও তো পারে। তোমাকে একটা গল্প বলি, তখন আমার আর রাজীবের বাবার বিয়ের ছয় কি সাত বছর চলে। কোন বাচ্চাকাচ্চা নেই। আমি একটা সন্তানের জন্য অস্থির হয়ে গিয়েছিলাম। রাজীবের বাবা আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। ডাক্তার চেকআপ যা করার করে বলল, আমি কোনদিনও মা হতে পারব না। শুনে দুজনেই ভেঙ্গে পড়লাম। রাজীবের বাবার মত মানুষ হয় না। সেইই আমাকে সামলে নিল। আমি বললাম, আরেকটা বিয়ে করে নাও। মানুষটা রাজি হল না। আমাদের প্রেমের বিয়ে ছিল না। আমাকে তো দেখতেই পাচ্ছো, আমি কোন বিশ্ব সুন্দরী না। তবুও রাজীবের বাবা কিছুতেই রাজী হল না। আমাদের পরিবার জানতে পারল। রাজীবের বাবাকে আমার নিজের মা বললেন, তুমি আরেকটা বিয়ে কর৷ রাজীবের বাবা তাকে বললেন, গেট লস্ট। সেদিন আমি কনফিউজড হয়ে গিয়েছিলাম যে মায়ের অপমানে কষ্ট পাব, না রাজীবের বাবার ব্যাপারে খুশি হব। লোকটা আমাকে পাগলের মতই ভালোবাসে। ওর পরিবারের অত্যাচারেই রাজীবের বাবা আমাকে নিয়ে আলাদা হয়ে গেল। আমরা একটা ছেলেকে রাস্তা থেকে নিয়ে এলাম। পাচ ছয় বছর বয়স। টোকাই গোছের ছেলে। কি যে আদরটা তাকে আমি করলাম! যতটুকু সাধ্যে কুলিয়েছে করেছি। নিজের সন্তানকে এর চেয়ে বেশি করতাম না হয়ত। রাজীবের বাবাও অফিস থেকে তাড়াতাড়ি চলে আসত ওই ছেলেটার সাথে সময় কাটানোর জন্য। কিন্তু এক মাসের মাথায় ছেলেটা আমাদের বাসায় চুরি করে পালিয়ে যায়।”
জয়া- “তারপর।”
মা- “রাজীবের বাবা আর দত্তক নিতে রাজি হল না। আমাকে বিদেশে নিয়ে গেল, পীর ফকির ঝাড়ফুক, বড় বড় ডাক্তার, কিছুই বাদ দিল না সে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। এভাবেই আরও কয়েক বছর কেটে গেল। সত্যি বলতে বাচ্চা নিয়ে রাজীবের বাবা মাথা ঘামাত না। আমিই অস্থির হয়ে গিয়েছিলাম মা হবার জন্য। রোজ স্রষ্টার কাছে কাদতাম একটা সন্তানের জন্য। একদিন রাজীবের বাবা অফিস থেকে ফিরে এসে বললেন, তার অফিসের এক কলিগ, উনাকে আমিও চিনি। বহুবার আমাদের বাড়িতে এসেছেন। মনোয়ার হোসেন নাম। উনার ভাগ্নিকে নাকি গুন্ডারা তুলে নিয়ে গিয়েছে, তিনদিন আটকে রেখে…” মা থামল।
জয়া- কোন কথা বলল না।
মা- “মেয়েটা প্রেগন্যান্ট হয়ে যায়। আন্ডারএইজড সদ্য কিশোরী মেয়ে। সামনে তার গোটা জীবন পড়ে আছে। একটা অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনায় নিশ্চয়ই তার জীবনটা নষ্ট হতে দেওয়া যায় না। বাচ্চাটাকে অ্যাবোরশন করানোও সম্ভব হয়নি। মনোয়ার ভাই মেয়েটাকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। আমিই রাজীবের বাবাকে প্রস্তাবটা দেই। রাজীবের বাবা বলেন মনোয়ার ভাইকে। উনার রাজী না হবার কোন কারণ ছিল না। ঠিক হয় জন্মের পর বাচ্চাটাকে আমাদের দিয়ে দেবেন উনি। যথা সময়ে বাচ্চাটা জন্ম নেয়। আমি আর রাজীবের বাবা বাচ্চাটাকে নিয়ে আসি। ওর মা তখন গভীর ঘুমে অচেতন। জয়া তোমার কাছে কি গল্পটা পরিচিত লাগছে?”
জয়া-…
মা- “ছেলেটাকে আমার কোলে দিলেন মনোয়ার ভাই। আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। মনে হল এক টুকরো স্বর্গ যেন আমার কোলে। যেন আমারই সন্তান ভুল করে অন্য কোথাও জন্ম নিয়ে ফেলেছিল এখন ফিরে এসেছে। বাচ্চার মায়ের সাথে একবার দেখা করতে চাইলাম। কিন্তু বাচ্চার মা তখন গভীর ঘুমে অচেতন। আমি শুধু একবার তার কপালে হাত রেখেছিলাম। ধন্যবাদ জানানোর কোন ভাষা আমার জানা ছিল না।”
জয়া-…
মা- “মনোয়ার ভাই প্রায়ই এসে বাচ্চাটা দেখে যেতেন। ওর সাথে খেলতেন। আমার ভয় হত উনি কি বাচ্চাটাকে আমার কাছ থেকে নিয়ে যাবেন কি না। কিন্তু তা কখনো করেননি তিনি। ওনার কাছেই জানতে পেরেছিলাম যে বাচ্চাটার মা আমেরিকা চলে গেছে পড়তে। সেদিন বিয়েতে তোমাকে দেখামাত্রই আমি চিনে ফেলি৷ আমি দেখেছি কিভাবে তোমরা পরস্পরের দিকে তাকাও। আমি দুনিয়া উজার করা ভালোবাসা পেয়েছি রাজীবের বাবার কাছ থেকে। আমি প্রেমিকের চোখ চিনি। রাজীব খুব আবেগী ছেলে। আমি খুব যত্নে ওকে বড় করেছি। কোন ইচ্ছা অপূর্ণ রাখিনি। যদি পরিস্থিতি এমন না হত তাহলে হয়ত আমি এই আবদারেও রাজি হয়ে যেতাম। জয়া আমি চাইনা আমার ছেলেটা জানুক আমি ওর আসল মা নই। আমি মিথ্যার ইট গেথে ওর চারপাশে একটা সত্যের দূর্গ বানিয়েছি৷ নিয়তি ওকে আর তোমাকে মিলিয়ে দিয়েছে৷ আমি তোমাকে জোর করব না৷ শুধু অনুরোধ করছি। তুমি চলে যাও। ওর জীবন থেকে একদম চলে যাও। প্লীজ।” ফোপানোর শব্দ শোনা গেল৷ মা কাদছে।
আধখাওয়া সিগারেটটা পড়ে গেল আমার হাত থেকে। নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না আমার। মোবাইলটা ডিজকানেক্ট করে পকেটে রাখলাম। আর শোনার দরকার নেই আমার।
তীব্র তপ্ত রোদ মাথায় নিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। জয়ার সাথে প্রতিটা মুহুর্ত চোখে ভাসছে। মনে হচ্ছে আমার চারপাশের সব কিছু যেন মোমের মত গলে যাচ্ছে৷ গোটা দুনিয়াটা মুহুর্তে যেন নেই হয়ে গেল আমার। তীব্র এক যন্ত্রণা খুবলে খেতে শুরু করল আমাকে ভেতর থেকে। এরপর আমার আর কিছুই মনে নেই।
মাগরিবের আজানের সাথে সাথে আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম সংসদ ভবনের সামনে। অবচেতন মনেই হেটে প্রায় ছয়মাইলের বেশি পথ চলে এসেছি। তীব্র এক আতংক গ্রাস করল আমাকে সাথে সাথে। দ্রুত রওনা হলাম বাড়ির পথে।
দরজা খুলে দিল মা। জয়া নেই। আমি জানতাম থাকবে না৷ মুখে হাসি নিয়ে প্রশ্ন করলাম, “জয়া কোথায় মা?”
“তোর দেরি দেখে চলে গেছে। এতক্ষণ কোথায় ছিলি?”
“মঞ্জুদের বাসায়। ওরা কেউ তো বাসায় নাই। এতক্ষণ বসে বসে খামাখাই অপেক্ষা করলাম।”
“আহারে। ঘেমে গেছে আমার আব্বা। লেবুর শরবত বানিয়ে দেই?”
“দাও।”
“তুই কি আজ হলে যাবি?”
“হ্যা। কাল ক্লাস আছে তো।”
“আচ্ছা, রাতে খেয়ে যাস।”
“ঠিক আছে।”
অভিনয়টুকু করা জরুরি ছিল। মাকে জানতে দেওয়া যাবে না যে আমি সব জানি৷ জয়াকেও জানতে দেওয়া যাবে না। আমি কুশনের আড়াল থেকে মোবাইলটা বের করে নিলাম।
রাতের খাবারের পর হলে গেলাম না। চলে গেলাম জয়ার হোটেলে৷ নক করতেই দরজা খুলে দিল সে। গায়ে ড্রেসিং গাউন। হাতে ওয়াইনের গ্লাস৷ চোখ মুখ ফোলা ফোলা, লালচে। আমি দেখেও না দেখার ভান করলাম।
ওকে জড়িয়ে ধরতে গেলেও সে ছাড়িয়ে দিল। “আজ শরীরটা খারাপ আমার, রাজীব।”
“কি হয়েছে?” মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ ফেলে প্রশ্ন করলাম।
“পিরিয়ড। টু ব্যাড তাই না?” মুখে শুকনো হাসি ফোটাল সে।
“না না, ইটস ওকে। তা এখন মদ খাচ্ছো?”
“খেতে ইচ্ছে হল।” বলতে বলতে সোফায় গিয়ে বসল সে।
আমার বুক হু হু করে উঠল। আমি গিয়ে ওর পাশে বসলাম। “আমার টিকেটের টাইম চেঞ্জ হয়েছে রাজীব। একদিন আগেই যাচ্ছি আমি।”
“সেকি! কেন?”
“কাজ পড়ে গেছে একটা বেবি। কাল ভোরেই রওনা হতে হবে।”
“ওহ।” আমি মাথা নিচু করে বসে রইলাম।
“রাজীব, খুব ভাল করে পড়াশোনা করবে, বুঝলে?”
আমি মাথা নাড়ি।
“মেক মি প্রাউড।”
“ইয়েস ম্যাম।”
“তোমার পেশায় এই কথা বলে লাভ নেই বাট সেইফ থাকবে। ডোন্ট মেক অ্যানি মিস্টেক। ইউ হ্যাভ টু লিভ।”
আমি আবার মাথা নাড়ি। বহু কষ্টে চোখের পানি আটকে রাখতে হচ্ছে আমাকে। মাথা নিচু করে বসে রইলাম।
“উই আর নট মেন্ট টু বি টুগেদার। এইটাই সত্য। ইউ হ্যাভ টু অ্যান্ড মাস্ট এনজয় ইয়োর লাইফ। চমৎকার একটা মেয়ের সাথে প্রেম করবে। তোমার কাছাকাছি বয়সের। অ্যান্ড মেক বিউটিফুল বেবিজ…”
আমার চোখ থেকে টুপ করে এক ফোটা অশ্রু ঝড়ে পড়ল আমার কোলের ওপর৷
“চেষ্টা করো আমাকে ভুলে যেতে, কেমন?”
“তুমি একা থেকো না। পাস্ট তো চলেই গেছে। এখন তোমাকেও লাইফ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।”
“ঠিকই বলেছো।”
“তোমাকে প্যাকিঙে হেল্প করব?”
“না। সব শেষ। জাস্ট এই গ্লাসটা শেষ করেই উঠব।”
এক চুমুকে গ্লাসটা খালি করল জয়া। মাত্রা ছাড়িয়ে খায়নি সে। আজ আর আমার সামনে পোশাক বদলালো না। ড্রেসিং রুমে চলে গেল। তৈরি হয়ে আসার পর হোটেলের গাড়িতে করেই আমরা রওনা হয়ে গেলাম এয়ারপোর্টে। ভেতরে ঢুকে লাউঞ্জে পাশাপাশি বসলাম আমরা। একটু পরই ইমিগ্রেশনে চলে যাবে সে। ব্যাগ থেকে ছোট্ট একটা র্যাপিং পেপারে মোড়া বাক্স বের করে আমার হাতে দিল সে৷ “কীপ ইট।”
আমি হাতে নিলাম। ভেতরে কি আছে আন্দাজ করতে পারছি। বললাম, “আমি তো কিছু আনিনি তোমার জন্য।”
“ইউ হ্যাভ অলরেডি গিভেন মি এনাফ।”
জয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল। “মাই বেবি। মাই সুইট বিউটিফুল এঞ্জেল। মাই সুইট বেবি।”
আমিও জড়িয়ে ধরে রাখলাম তাকে। আশেপাশে অনেকেই তাকিয়ে দেখছে৷ এয়ারপোর্টে এই দৃশ্য অস্বাভাবিক না। ধীরে ধীরে নিজেকে সামলে নিল জয়া। ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে পানি দিল। ফিরে এসে লাগেজের হাতলটা আমার কাছ থেকে নিয়ে নিল। “আমি যাই রাজীব। আর হয়ত দেখা হবে না। ভাল থেকো।”
“তুমিও ভাল থেকো, জয়িতা।”
জয়া হাসল। “শুধু আমার বাবা আমাকে জয়িতা বলতেন।”
জয়া হাটতে হাটতে চলে গেল ইমিগ্রেশনের ভেতর। বাইরে তখন পাখিরা ডাকতে শুরু করেছে। ভোর হচ্ছে। আমি জয়ার দেওয়া উপহারটা খুললাম, একটা ঘড়ি৷ ব্র্যান্ডের। দেখেই বোঝা যায় অনেক দামী। ডিজাইনটা খুব সুন্দর। অনেকটা অ্যান্টিক ধাঁচের৷ ডায়াল ঘুরিয়ে সময় ঠিক করে ঘড়িটা বাম হাতে পড়ে নিলাম আমি। তারপর হাঁটতে শুরু করলাম। আমি দরজা দিয়ে বের হবার একটু পরই সা সা শব্দে একটা বিমান রওনা হয়ে গেল টারম্যাক ছেড়ে। আশ্চর্য ব্যাপার। আমার মনে হল জয়িতা এখনও আমার হাতটা ধরেই আছে।
আমি আগের জীবনে ফিরে এলাম। মাথার ভেতর জয়িতার যে অংশটা আছে তাকে ধামাচাপা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করলাম। মাস দুই এভাবেই কাটল। হঠাৎ একদিন ক্লাস থেকে বের হয়েছি, বাইরের গেটে গার্ড একটা পেপার পড়ছে৷ খবরের কাগজের শেষের পাতায় বড় করে ছাপানো একটা ছবি। আমি ছো মেরে গার্ডের হাত থেকে সেটা কেড়ে নিলাম। “মামা করেন কি! করেন কি!” হাহাকার করে উঠল গার্ড।
‘পুলিৎজার পুরষ্কার জয়ী বাঙালী সাংবাদিকের আত্মহত্যা।
নিউ ইয়র্কের একটি ফ্ল্যাট থেকে জয়িতা ইব্রাহীম নামক একজন বাংলাদেশী সাংবাদিকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। জয়িতা ইব্রাহীমের বাড়ি বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায়। উনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে….’ দ্রুত পড়তে পড়তে নিচে নামলাম। ‘যুদ্ধকালীন সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য তাকে পুলিৎজার পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়। প্রায় চারদিন বিনা ছুটিতে অফিসে না যাওয়ায় এক সহকর্মী তার খোজ নিতে ফ্ল্যাটে আসেন৷ দূর্গন্ধ টের পেয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তিনি সাংবাদিকের লাশ আবিষ্কার করেন। আনুমানিক তিনদিন আগে তার মৃত্যু হয়েছিল। মৃত্যুর কারণ হিসেবে ঘুমের ওষুধের ওভারডোজের কথা জানিয়েছেন ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার। জয়িতা ইব্রাহীম তার মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই অ্যাকিউট ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন। উনি একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছেও নিয়মিত যেতেন বলে জানা গেছে। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন…।”
খবরের সাথে জয়ার একটা বড়সড় হাসিমুখের ছবি দেওয়া। আমি খবরের কাগজটা ফিরিয়ে দিলাম গার্ডকে। আজিজ পেছন থেকে ডাকল আমাকে, “দোস্ত চল আজ ক্লাসের পর কনসার্টে যামু।”
আমি জোর করে স্বাভাবিক করলাম চেহারা। মুখে হাসি ফোটালাম। তারপর ঘুরে তাকিয়ে বললাম, “কই কনসার্ট?”
পরিশিষ্ট:
প্রায় তিন বছর পরের কথা। রাত প্রায় দশটা। ময়মনসিংহের এক গলির ভেতর দুজন দাঁড়িয়ে আছে। একজনের গায়ে রেইনকোট, আরেকজনের মাথায় ছাতা। তীব্র বৃষ্টি হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব। দাঁড়িয়ে থাকা দুজনের একজন আমি। আরেকজন সেলিম মিয়া। সেলিম মিয়া পুলিশের ঘাঘু ইনফর্মার। স্থানীয় না হয়েও লোকাল নেটওয়ার্ক তার দারুণ। পুলিশে প্রচলিত আছে সেলিম মিয়াকে শুধু নাম বললে সে সেই লোকের চৌদ্দগুষ্ঠীকেও কবর থেকে তুলে নিয়ে আসতে পারে। আমি বললাম, “তুমি নিশ্চিত তো যে এই তিনজন?”
পান খাওয়া লাল দাঁত বের করে হাসল। “জ্বি ছোট সাহেব। পেরায় বাইশ বচ্ছর আগে এই তিনজনই হামিদ ইব্রাহীম সাবের মেয়েরে তুইলা নিয়া গেছিল। পরে উনারা এই পোলাগুলার থ্রেটে এলাকা ছাইড়া চইলা গেছিলেন। তিনজনই বড় বাপের পোলা। এর মধ্যে জাহাঙ্গীর সাব ব্যবসায়ী সমিতির পেসিডেন, ফারুক সাব ঢাকায় বড় ব্যবসা করেন। আর কামাল সাহেব তো নিজেই সামনে এমপি ইলেকশন করব।” শুদ্ধ আর আঞ্চলিক মেশানো ভাষায় সেলিম বলল। পকেট থেকে একতাড়া কাগজ বের করে এগিয়ে দিল সে। “এইখানে সব লেইখা আনছি।”
আমি কাগজটা রেইনকোটের ভেতরে ঢুকিয়ে একটা খাম বের করে সেলিমকে দিলাম। “নাও, যা চেয়েছিলে তার চেয়ে অনেক বেশি আছে।”
সেলিম বিগলিত হেসে খামটা পকেটে ঢুকিয়ে ফেলল। “আর কুনো খেদমত লাগবে ছোট সাহেব?”
কোন বড় সাহেবের অস্তিত্ব না থাকলেও প্রথম দিন থেকেই সেলিম আমাকে ছুডু সাব বা ছোট সাহেব বলে। কারণটা জিজ্ঞেস করিনি আর সেও বলেনি।
সেলিম যাওয়ার প্রায় পাচ মিনিট পরে বের হলাম আমি। এজেন্সি থেকে একটা ফেভার চেয়েছিলাম আমি। উনারা মানা করেননি। এজেন্সির একটা নিয়ম আছে। ট্রেনিং শেষে হাতে রক্ত লাগাতে হয়। আমি স্যারকে আমার পরিকল্পনা বলতেই উনি রাজি হয়ে যান।
আমার জন্মদাতার দিন গণনা এখন থেকেই শুরু।