জীবন গুলো চলতে লাগলো ওভাবেই। সাগ্নিক রূপার করাল গ্রাস থেকে নিজেকে মুক্ত করলো। শুধু রূপা নয়, বহ্নিতার থেকেও একটা দূরত্ব তৈরী করতে সক্ষম হলো। যদিও বহ্নিতার কাতর আকুতি সাগ্নিক উপেক্ষা করতে পারবে না। তবুও, নিজে থেকে বহ্নিতার কাছে না যাবার সিদ্ধান্তে অটল রইলো। পাওলা বৌদি সাগ্নিকের চিরকালের ফ্যান্টাসি। যেদিন থেকে দেখেছে, পাওলাকে ধ্যান জ্ঞান মেনেছে। কিন্তু রিতুকে ভালোবেসে তার সাথে সংসারধর্ম শুরু করবার সিদ্ধান্ত নেওয়া সাগ্নিক পাওলাকেও শুধুমাত্র ফ্যান্টাসিতেই সীমাবদ্ধ রাখবার সিদ্ধান্ত নিলো। সাগ্নিকের সমস্যা হচ্ছে আইসাকে নিয়ে। আইসা ভীষণই অন্যরকম। এমন একটা ব্যক্তিত্ব যে ডাকলে না গিয়ে থাকা যায় না।
আইসা যদিও তাকে অন্যভাবে ট্রিট করে এটাও একটা কারণ। অবশ্য ইদানীং আইসা জুলফিকারকে নিয়ে বেশ থ্রীলড। সাগ্নিক উপভোগ করে সেটা। সে সবার থেকে মুক্ত হয়ে রিতুকে নিয়ে সুখে থাকতে চায়। জুলফিকার এর সাথে বন্ধুত্বটাও বেশ বেরেছে সাগ্নিকের। দু’জনে একসাথে সময় কাটায়। বেশ উপভোগ করে ব্যাপার টা। রূপার সাথে মিশে জুলফিকার বেশ ভালোই ইনকামও করছে। তাতে পরিবার সচ্ছল হয়েছে জুলফিকারের। সাগ্নিক আনন্দ পায় জুলফিকারকে হেল্প করে। ভালো লাগে সাহায্য করতে।
আজ সে কারো সাহায্য পেয়েই তো এখানে এসেছে। বাপ্পাদার কথা মনে পরে। বড্ড ভালো মানুষ বাপ্পাদা। ইদানীং পাওলা বৌদির সাথে সম্পর্ক ভালো চলছে না। বুঝতে পারে সাগ্নিক। পাওলাও বেশ এড়িয়ে চলে সাগ্নিককে। হয়তো সাগ্নিকের ব্যাভিচারিতা সম্পর্কে জেনেছে। নয়তো কদিন খুব চা পান বা টিফিনের জন্য জোর করতো। ইদানীং করে না। আইসা আবার সাগ্নিকের জন্য ম্যানুফ্যাকচারিং সুপারভাইজার ট্রেনি পদের তদ্বির করছে। সে চায় সাগ্নিক একটা স্টেবল লাইফ লিড করুক।
দিনগুলো জুলফিকার এরও বেশ কাটছে। রূপা শা জুলফিকারকে ইচ্ছেমতো খাটাচ্ছেন। টাকার জন্য দুপুরে জুলফিকার এক্সট্রা শিফট করবে বলে নার্গিসের কাছে মাঝে মাঝে পারমিশন নেয়। আর সেই সময়টা দেয় রূপার ক্লায়েন্টদের। রূপাকে পার্সেন্টেজ দিয়ে ক্লায়েন্ট প্রতি হাজার তিনেক টাকা টেকে জুলফিকার এর। বখশিশ যদি কিছু পায় তো সেটা আলাদা। বাড়ি ফিরে গর্ব করে শ পাঁচেক টাকা এক্সট্রা শিফট এর ইনকাম হিসেবে নার্গিসের হাতে দিলে নার্গিসও খুশী হয়। তার বর তাকে সুখে রাখতে এতো খাটে ভেবে কৃতজ্ঞচিত্তে জুলফিকার এর সেবা করে। হাত-পা টিপে দেয় মাঝে মাঝে। জুলফিকার এর ফ্যান্টাসি পূরণ করে। নিজের ফ্যান্টাসি পূরণ করে। বেশ সুখে দিন কাটছে ওদের।
নার্গিস- আমাদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে ভাবা উচিত।
জুলফিকার- ভবিষ্যৎ?
নার্গিস- হমমম। ছোট্ট জুলফিকার বা ছোট্ট নার্গিসের ব্যাপারে।
জুলফিকার- উমমমমম। ভালো বলেছো। তবে আর কিছুদিন যাক। আরও কিছু টাকা চাই।
নার্গিস- কেনো?
জুলফিকার- অনেক সময় ডেলিভারিতে সমস্যা হয়। অনেক টাকা লাগে। আমি সেটা রেডি করে মাঠে নামতে চাই।
নার্গিস- আর যদি সমস্যা না হয়? নেগেটিভ কেনো ভাবছো আগেই?
জুলফিকার- না হলে ওটা সেভিংস।
নার্গিস- ওকে বাবু।
নার্গিস জুলফিকারকে কপালে একটা লম্বা কিস করলো। নার্গিস ইদানীং জুলফিকারকে বেশী ভালোবাসে। আইসা পারভিন নামের মেয়েটিকে সেও ফেসবুকে লুকিয়ে দেখে। বেশ একটা ক্যারেক্টার আছে মহিলাটির মধ্যে। জুলফিকার চোখ বন্ধ করে হয়তো তাকে ফ্যান্টাসাইজ করে মাঝে মাঝে। নার্গিস এতে পাপের কিছু দেখে না। সেও তো করে ওই নিগ্রো গুলোকে। এখন তারও নিগ্রো কালেকশন বেরেছে। মাঝে মাঝে কাকে ছেড়ে কাকে ভাববে বুঝে পায় না। ধ্যাৎ! কিসব ভাবছে। নিজেই লজ্জা পায় নার্গিস। গত কয়েকমাস বেশ সুখে আছে তারা দু’জন। এভাবে যেন ওদের জীবনগুলো কাটে!
রিতুর চেহারা দিনদিন আরও ফুলে ফেঁপে উঠছে। বাপ্পাদা তো ছিলোই। সাথে ইদানীং অরূপদা জুটেছে। অরূপদা বিপত্নীক। ফলে খাই টাও বেশী। শ্রীতমাদির সাথেও বেশ জুটিটা জমে উঠেছে রিতুর। শ্রীতমার যদিও স্বামী সক্ষম পুরুষ। কিন্তু অর্থাভাবে বাইরে কাজ করে। একটি মেয়ে আছে, তাকেও এক উকিলবাবুর বাড়িতে তার বাচ্চার দেখাশোনার কাজে ঢুকিয়ে দিয়েছে শ্রীতমা। অরূপদাই সাহায্য করেছে। আর শ্রীতমা অরূপদার ফার্মহাউসের কেয়ারটেকার। রান্নার হাতও ভালো। শ্রীতমা মাঝে মাঝে রিতুর রুমে ঘুরতে আসে।
শ্রীতমা- তুই তো তবু তোর ছেলেটাকে পড়াচ্ছিস রিতু। আমি আর পারলাম না রে।
রিতু- বাপ্পাদা যথেষ্ট হেল্প করে। আর আমি একজনকে ভালোবাসি।
শ্রীতমা- কাকে?
রিতু- সাগ্নিক নাম ওর।
শ্রীতমা- কি করে?
রিতু- এই দুধের ব্যবসা।
শ্রীতমা- কার দুধ? তোর?
রিতু- ধ্যাৎ তুমি না শ্রীতমাদি।
শ্রীতমা- আচ্ছা বল।
রিতু- ও খুব সাপোর্ট করে। উৎসাহ দেয় প্রতিনিয়ত।
শ্রীতমা- আর বিছানায় কেমন?
রিতু- ওকে পেলে সব্বাইকে ভুলে যাবে। বাপ্পাদা আর অরূপদা মিলে যা সুখ দেবে, তার ডবল দেবে।
শ্রীতমা- ইসসসসস রিতু। তুই কি ভাগ্যবতী রে।
শ্রীতমার চোখে মুখে কাম ফুটে উঠেছে ততক্ষণে।
শ্রীতমা- তাহলে ওরকম একটা ভালোবাসার মানুষ থাকতে তুই বাপ্পাদার সাথে ভিরলি কিভাবে? পুরনো প্রেম?
রিতু- না। নতুন। আসলে আমি নিজের প্রথমদিন সামলাতে পারিনি। তারপর থেকে দেখেছি সাগ্নিককে লুকিয়ে বাপ্পাদার সাথে বা ইদানীং অরূপদার সাথে এই নিষিদ্ধ যৌনতায় একটা অন্যরকম সুখ আছে।
শ্রীতমা- এটা মন্দ বলিস নি। অরূপদা তো সারাবছরই ভোগ করে। যখন আমার স্বামী বাড়ি ফেরে বছরে দুবার। অরূপদা আমায় ছুটি দেয় বরের আদর খাবার জন্য। বিশ্বাস কর ওই দিনগুলোতে অরূপদাকে পেতে খুব ইচ্ছে করে লুকিয়ে।
রিতু- নিষিদ্ধ যৌনতায় এক অদ্ভুত সুখ আছে। অদ্ভুত সুখ। বাপ্পাদার যে বউ আছে না? পাওলা। ওকে দেখলে তো পাগল হয়ে যাবে তুমি। একটা আইটেম। সব পুরুষের স্বপ্নের নারী। তবুও বাপ্পাদা আমার কাছে কেনো আসে? ওই নিষিদ্ধ যৌনতার সুখ নেবার জন্য।
শ্রীতমা- তা তোর ভালোবাসার মানুষটাকে একদিন পাঠিয়ে দে না আমার ঘরে। নিষিদ্ধ যৌনতায় ভাসিয়ে দিই।
রিতু- ও তো নিষিদ্ধ যৌনতার খনি গো শ্রীতমা দি। গোটা শিলিগুড়িতে দশ-বারো জনের সাথে পরকিয়া আছে। ইদানীং অবশ্য সব্বাইকে ছাড়ছে আস্তে আস্তে।
শ্রীতমা- কেনো?
রিতু- বিয়ে করে সংসারী হবে আমার সাথে।
শ্রীতমা- ইসসসসস। তুই আসলেই ভাগ্যবতী রে।
রিতু- জানিনা কি হবে শ্রীতমাদি। তবে সাগ্নিককে আমি যেমন চাই। তেমনি এই সুখটাও ছাড়তে পারবো না গো।
শ্রীতমা- তুই একটা………
পাওলা অপশন খুঁজছে। বাপ্পার সাথে সম্পর্কের এই পরিণতি সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে। একা থাকলে হয়তো কবেই সে মরে যেতো। কিন্তু মৃগাঙ্কীটার জন্য সেটাও পারবে না। শিলিগুড়িতে যে কয়েকজন ক্লোজ বান্ধবী রয়েছে, সবাই ব্যস্ত তাদের সংসারে। একমাত্র বহ্নিতা সময় দিতো। গত ৫-৬ মাসে বহ্নিতাও বোধহয় একটু ক্লান্ত। তার মধ্যে প্রথম বেবি নেবার প্ল্যান করছে বহ্নি। তাই ওকে অহেতুক চিন্তা দিতে চায় না পাওলা। মৃগাঙ্কী স্কুলে যাবার পর আরও একা হয়ে যায় সে। বাপ্পা যে শুধু তাকে ঝগড়ার জন্য অ্যাভয়েড করে তা নয়। অন্যকিছুও আছে এর পেছনে কারণ।
ঝগড়া তো তার সংসারে কতই হয়েছে। এরকম তো কখনও হয়ে যায়নি বাপ্পা! তাহলে এবার কেনো? বাপ্পা কি তবে লুকিয়ে কারোও প্রেমে পরলো? কার? রিতু নয়তো? লুকিয়ে রিতুর সাথে যদি প্রেম করে সে? কিন্তু সাগ্নিক তো রিতুকে ভালোবাসে। রিতুর মনেও সাগ্নিকের জন্য জায়গা আছে। তাহলে? সাগ্নিককে খবর পাঠাবে? ডেকে জিজ্ঞেস করবে? না না। সাগ্নিকের সব কথা বহ্নিতার কাছে শোনার পর ভরসা হয় না আর ইদানীং। বাবা-মা এর খারাপ সম্পর্কের ফল ভুগছে মৃগাঙ্কী৷ ইদানীং বড্ড চুপচাপ হয়ে গিয়েছে মেয়েটা। ওর জন্য কষ্ট হয় পাওলার। তবুও একটা সময় গিয়ে পাওলার মনে হয়, সাগ্নিকই পারে বাপ্পার সম্পর্কে তথ্য আনতে। সে নিযে তো আর নজর রাখতে পারবে না। কিন্তু যদি বিনিময়ে সাগ্নিক তাকে চায়?
না না। তা কেনো হবে? সাগ্নিক তাকে ফ্যান্টাসি করে ঠিকই কিন্তু এতোটা সাহস বোধহয় সে করবে না কখনও। ঘড়ি দেখলো পাওলা। মেয়ের ফেরার সময় হয়েছে। স্নানে ঢুকলো সে। বাথরুমে সারা শরীর উলঙ্গ করে প্রতিদিন কাঁদে পাওলা। তার এই অপরূপ দেহবল্লরী এড়িয়ে বাপ্পা কিভাবে থাকছে? বাপ্পার চেহারাটা ক’মাসে বড্ড ঘেটেছে। তবুও বাপ্পাদাকে দেখে ভেতরটা সুড়সুড় করে ওঠে পাওলার। কিন্তু বাপ্পা ফিরেও চায় না।
মৃগাঙ্কী ফিরে খেয়ে ঘুমায়। সাগ্নিক পড়াতে আসবে। আজই ধরবে সে সাগ্নিককে।
পাওলা- সাগ্নিক কিছু কথা আছে। পড়া হলে বসে যেও।
সাগ্নিক- ঠিক আছে বৌদি।
সাগ্নিক- কি কথা?
পাওলা- তোমার মনে আছে গত বিবাহবার্ষিকীর কথা?
সাগ্নিক- হ্যাঁ কেনো?
পাওলা- সেদিন থেকে বাপ্পার সাথে আমার একটা দুরত্ব তৈরী হয়েছে। আজ ছ’মাস হতে চললো আমাদের দু’জনের মধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই।
সাগ্নিক- যোগাযোগ নেই মানে?
পাওলা- মানে আত্মার মিল নেই। মনের কথা বলা নেই। আবেগ নেই। আমার বা মৃগাঙ্কীর প্রতি সে পুরোপুরি উদাসীন।
সাগ্নিক- তাই নাকি? আমি জানতাম না তো বৌদি।
পাওলা- সত্যি বলছো? কিচ্ছু জানো না?
সাগ্নিক- কিচ্ছু না। তবে ইদানীং বাপ্পাদা খুব বেশী ড্রিঙ্ক করে। আর মাঝে মাঝেই আমাকে হোটেল সামলাতে হয়।
পাওলা- হোটেল সামলাতে হয়?
সাগ্নিক- হ্যাঁ। অরূপদা আসে। দু’জনে মিলে বেরিয়ে যায়। ফেরে যখন। ড্রিংক করে ফেরে। আমার ব্যাপারটা একটু খারাপ লাগে। কিন্তু বাপ্পাদা আমার ভগবান। তার সম্পর্কে কিছু ভাবা বা প্রশ্ন তোলা পাপ।
পাওলা- একটা উপকার করবে সাগ্নিক? সারাজীবন তোমার কাছে ঋণী থাকবো
সাগ্নিক- আমার সাধ্যের মধ্যে হলে অবশ্যই চেষ্টা করবো বৌদি। তোমার বা বাপ্পাদার জন্য আমি জীবন দিতে পারি।
পাওলা- আমার মনে হয় বাপ্পার কারো সাথে অ্যাফেয়ার চলছে। তুমি একটু গোয়েন্দাগিরি করতে পারবে?
সাগ্নিক- বাপ্পাদার?
পাওলা- হ্যাঁ। একদম গোপনে খোঁজ নিতে হবে। আমি খরচ দিয়ে দেবো।
সাগ্নিক- খরচ কিসের? তোমাকে, বাপ্পাদাকে, মৃগাঙ্কীকে আমি নিজের পরিবারের লোক মনে করি। তুমি চিন্তা কোরো না৷ সাতদিন সময় দাও।
পাওলা- তোমার রিতুর কি খবর।
সাগ্নিক- বিয়ে করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। হয়তো অগ্রহায়ণে।
পাওলা- বাহ্। ভালো লাগলো।
সাগ্নিক- আসছি বৌদি।
সাগ্নিক বেরিয়ে যাবার পরও পাওলা স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। সাগ্নিক রিতুকে বিয়ে করছে? তার মানে বাপ্পা আর রিতুর যে পরকিয়ার সম্পর্ক সে কল্পনা করেছিলো, সেটা ভুল? পাওলার নিজের ওপর রাগ হতে লাগলো। একবার ভাবলো সাগ্নিককে বলে দেয় খোঁজ নিতে হবে না৷ পরে ভাবলো নাহ খোঁজ নেওয়া যাক। কোথায় নিয়ে যায় অরূপ ওকে। সেটাও তো দেখা উচিত। অতিরিক্ত টেনশনে শরীর বেশী ক্লান্ত লাগে। পাওলা সোফায় শরীর এলিয়ে দিলো।
চলবে……
মতামত জানান ujaanmitra2020@gmail.com এ মেইল করে অথবা hangout এ মেসেজ করুন এই মেইল আইডিতেই। আপনাদের মেইল পেলে লেখার উৎসাহ আসে। পরিচয় গোপন থাকবে।