Site icon Bangla Choti Kahini

প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর- ১৫

প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর- ১৪

রাতের খাবারের পর ল্যাপটপের সামনে বসল ওরা। রাত জাগতে হতে পারে ভেবে নির্জন রিসেপশনে বলে একটা ফ্লাক্সে কফি আনিয়ে নিয়েছে; সাথে হালকা কিছু খাবার। দশটা বাজে কেবল- ঢাকায় থাকলে হয়তো এতক্ষণে বাইরে থেকে ফিরত নির্জন। কিন্তু এখানে দশটা মানে অনেক রাত। জেলা কিংবা উপজেলা শহরগুলো রাত দশটার মধ্যেই শুনশান হয়ে যায়- রাস্তায় কুকুর ডাকে। এখন হয়তো চিত্র পাল্টেছে কিছুটা, কিন্তু এই পাহাড়ি জায়গায় তার প্রভাব পড়েনি।

রুপা বলল, “কীভাবে কী করব এখন?”
এখন বেশ উৎফুল্ল লাগছে রুপাকে- কিছুক্ষণ আগের আর্থস্যাটারিং অর্গাজমের প্রভাবেই হয়তো- মুখে ফিরে এসেছে স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা, চোখদুটোয় প্রত্যাবর্তন করেছে সহজ কৌতূহল।
নির্জন বলল, “গুগোলের সার্চবারে ‘খুন’ লিখে সার্চ করতে হবে। কয়েক হাজার রেজাল্ট পাব এতে। কিন্তু ঘাবড়াবার প্রয়োজন নেই!”
“তাহলে?”

“আমাদের প্রয়োজন ‘ফিরে এসো, চাকা” কাব্যের তারিখগুলোতে আর কোন খুন হয়েছে কিনা সেটা জানা। আমরা শুধু সেই তারিখের খবরগুলোই পড়ব। সার্চ রেজাল্ট এলে আমরা নিউজ অপশনে ক্লিক করব। তারপর “টুলসে” ক্লিক করলেই নির্দিষ্ট তারিখের খবর পাওয়ার অপশন চলে আসবে। সেখানে সাল আর তারিখ বসিয়ে দিলেই সেই দিনে কোন খুন হয়েছে কিনা সারাদেশে, জানা যাবে। দাঁড়াও তোমাকে দেখাচ্ছি!”

নির্জন ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ এর সবগুলো খুন সম্পর্কিত খবর বের করল সার্চ করে।
রুপা বলল, “প্রতিদিন সারাদেশে কম তো খুন হয় না। ঐ তারিখগুলোতে আরো অনেক খুব হতে পারে। আমাদের কিলারের খুন কিনা সেটা বুঝব কী করে?”

বিরক্ত হলো নির্জন এই প্রশ্নে। বলল, “এতক্ষণ কী বোঝালাম তোমাকে তাহলে? এমও- মোডাস অপারেন্ডি মিলিয়ে। ২১ সেপ্টেম্বর ধরো ঢাকা কিংবা রংপুরে কুপিয়ে এক গৃহবধূকে হত্যা করেছে স্বামী কিংবা স্বামীকে স্ত্রী- এটা তো আমাদের কেইসে রিলেভেন্ট নয়। আমাদের কিলারের হত্যার স্টাইলের সাথে মিললেই তবে সেটাকে পড়ব!”
“তবুও তো কম নিউজ পড়তে হবে না!”, বলল রুপা। “কতগুলো কবিতা আছে, কতগুলো তারিখ আর শুধু এবছরের খবর খুঁজলে তো হবে না। হয়তো গত দশবছরের খবর ঘাঁটতে হবে!”

নির্জন হাসল। বলল, “ইনভেস্টিগেশন তো শুধু সাসপেক্টের উপর নজর রাখা নয়, রুপা। পেপারওয়ার্কও ইনভেস্টিগেশনের অংশ। আর কোন উপায় নেই- করতেই হবে। আর ভাবো, আমরা এই কেইস ইন্টারনেটের যুগে না পেয়ে শার্লোক হোমস কিংবা ব্যোমকেশের যুগে পেলে কী হতো! তখন তো আর একটা ক্লিকেই সব খবরের কাগজের নিউজ সামনে চলে আসত না। পত্রিকা অফিসে বসে প্রত্যেকটা দিনের খবর ঘাঁটতে হতো!”
“আর সে দায়িত্ব আমাকে দিলে আমি সেদিনই ইস্তফাপত্র দিয়ে দিতাম আপনাকে!”, বলল রুপা শক্ত মুখে।

স্যাঁতস্যাঁতে দেয়ালে লেপ্টে থাকা ময়লা শামুকের গতিরে রাত গড়িয়ে চলতে লাগল। বর্ষার অঝোর বৃষ্টির পর যেভাবে টিপটিপ করে আকাশ কাঁদে, সেভাবেই শিশির ঝরছে বাইরে। এতক্ষণ করিডোরে মাঝেমাঝেই সার্ভিস বয়দের পায়ের মৃদ্যু আওায়াজ আসছিল- এখন বন্ধ হয়েছে তাদের আসা-যাওয়াও। এঘরের স্থায়ী বাসিন্দা মোটা ধেড়ে টিকটিকিটা শুধু ভাবলেশহীন ঝুলে আছে দেয়ালে ঝুলন্ত টিকটিক করতে থাকা ঘড়িটার পাশে খাদ্যের আশায়। রুপা ও নির্জন তাকিয়ে ল্যাপটপের জ্বলজ্বলের স্ক্রিনের দিকে- চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে খবরের হেডলাইনগুলোর উপর। দেশে খুনের হার এতো বেশি, আগে ভাবেনি নির্জন। প্রতিদিনই প্রায় দেশের আনাচে কানাচে হত্যা কিংবা হত্যাচেষ্টা হয়েছে একাধিক জায়গায়। ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন আর বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ডের কারণ দাম্প্যত্যকলহ অথবা জমি সংক্রান্ত বিরোধ যার সঙ্গে এই কেইসের দূরতম সম্পর্কও নেই।

রাত সাড়ে এগারোটায় যখন নির্জন প্রায় আশা ছেড়েই দিয়েছে আর ধরিয়েছে আরেকটা সিগারেট, তখন রুপা বলল, “এই খবরটা দেখুন। ২০১২ সালের ২৬ আগস্টের খবর-”

ক্লান্তিতে চোখ বুজেছিল নির্জন- চট করে তাকাল স্ক্রিনের দিকে, সিগারেটে টান দিয়ে পড়তে লাগল, “কাওরান বাজারের হোটেল গ্রাসল্যান্ড থেকে ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার, হোটেল ম্যানাজার ও দুই কর্মচারী আটক!”

নিউজটায় ক্লিক করল রুপা। দেশের একটা নির্ভরযোগ্য সংবাদ সংস্থার খবর, খবরের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ নেই কোন।
খবরটা নির্জনকে শুনিয়ে পড়তে লাগল রুপা।

“আজ ভোরে রাজধানীর কাওরানবাজার এলাকার হোটেল গ্রাসল্যান্ডে এক তরুণীর মৃতদেহ আবিষ্কার করে পুলিশ। খুনি সন্দেহে গ্রেফতার করা হয় হোটেলের ম্যানাজার কল্লোল গোমেজ ও শান্ত ইসলাম নামের এক কর্মচারীকে।
পুলিশের সূত্র থেকে জানা যায়, তরুণীকে হত্যার পর ম্যানাজার কল্লোল গোমেজ ও আব্দুর রহমানকে মাঝরাতে মৃতদেহটি সরাতে দেখে ডিউটিরত ট্রাফিক পুলিশ থানায় খবর দিলে তাদের হাতেনাতে ধরা হয়।

এ ব্যাপারে তেজগাঁও থানার ওসি (তদন্ত) মধুসূদন দত্ত জানান, “আমরা মাঝরাতে খবরটি পাই। হাতেনাতে ধরা হয়েছে তাদের। যদিও তারাই খুনটা করেছে কিনা সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত নই এখনো। তারা বলছে, গতকাল সন্ধ্যায় একজন এসে একটি রুম এক রাতের জন্য ভাড়া নেয়। মাঝরাতে সন্দেহ হলে ওরা রুমের ভেতরে ঢুকে মৃতদেহটি আবিষ্কার করে। ভয়ের চোটে তারা মৃতদেহটি সরানোর ব্যবস্থা করে। এটা তাদের বক্তব্য- সত্যটা হয়তো ফারদার ইনভেস্টিগেশনের পর জানতে পারব আমরা।”

তরুণীর হ্যান্ডব্যাগ থেকে পাওয়া আইডিকার্ড থেকে মেয়েটির পরিচয় জানতে পারে পুলিশ। নাম হালিমা সিদ্দিকা। সে ইডেন মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের অনার্স ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী।“
আরো একটি নিউজপোর্টাল এই মৃত্যুর খবর ছেপেছে “হোটেল গ্রাসল্যান্ডে ইডেল মহিলা কলেজ শিক্ষার্থীর নগ্ন মৃতদেহ উদ্ধার, আটক দুই!”

ক্লিকবেইট শিরোনাম জেনেও ক্লিক করল নির্জন। এখানে পাওয়া গেল কিছু নতুন তথ্য-
“ঢাকার কাওরান বাজার এলাকার হোটেল গ্রাসল্যান্ডে ইডেন কলেজের এক শিক্ষার্থীর নগ্ন মেতদেহ আবিষ্কার করে পুলিশ। আটক করে সন্দেহভাজন দুজন হোটেল কর্মচারীকে।

জানা যায়, মৃতার নাম হালিমা সিদ্দিকা (২১), সে ইডেন মহিলা কলেজের অনার্স ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তাকে গলাকেটে হত্যা করা হয়েছে হোটেল রুমে। হোটেলের দুই কর্মচারী মৃতদেহটি আবিষ্কার করে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করলে ধরা পড়ে যায় পুলিশের হাতে।

সন্দেহভাজন আটকৃতরা হলেন হোটেলের ম্যানাজার কল্লোক গোমেজ ও শান্ত ইসলাম। এ ব্যাপারে তেজগাঁও থানার ওসি জানান, “এ ধরণের ঘটনা অনভিপ্রেত। আমরা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। খুনি ধরা পড়বেই!”
নির্জন বলল, “এমও মিলে গেল যে!”
রুপা বলল, “আপনি নিশ্চিত হচ্ছেন কীভাবে যে এটা আমাদের কিলাররেই কাজ?”

নির্জন সিগারেটে টান দিয়ে বলল, “নিশ্চিত মোটেও নই তবে এই নিউজটা ইন্ট্রিগিং। এই পেইজটা সেইভ করে রাখো।“
সার্চবারে ফিরে গিয়ে অন্য একটা তারিখ বসাল রুপা, শুরু করল ২০১০ সাল থেকে।
রাত ভোর হওয়ার আগে মোট ৬ টা কেইস খুঁজে বের করল নির্জন যার সঙ্গে তাহমিনা হায়াতের কেইসের পুরোটা না হলেও সত্তরভাগ অন্তত মিল আছে।
নির্জন বলল, “আমাদের ঢাকায় ফিরতে হচ্ছে কাল, রুপা। সবগুলো ঘটনাই ঘটেছে ঢাকায়। আমরা শ্রীমঙ্গলে বসে এর কিনারা করতে পারব না!”
“আমার হামহাম দেখা তাহলে হলো না এবারে!”, হতাশ হয়ে বলল রুপা, ল্যাপটপ ব্যাগে ঢুকিয়ে।
“হামহাম হারিয়ে যাচ্ছে না, রুপা। কিন্তু আমাদের হোটেলকিলার ধরা না পড়লে হয়তো আরেকজনের প্রাণ হারিয়ে যাবে!”
আলো নিভিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই মিষ্টি গলার একটা পাখির ঘুমঘুম উসখুস ডাক শুনতে পেল নির্জন।

***
বিকেলের আলো তখনও ছিল আকাশে যাই যাই করেও থেকে যাওয়া অতিথির মতো। কিন্তু স্টেশনে পৌঁছল ওরা চারিদিকে সন্ধ্যার তেলেজলে আঁধার নেমে আসার পর, ট্রেন আসার মিনিট কয়েক আগে। রোগাক্রান্ত কুকুরের পশমের মতো কুয়াশা ছড়িয়ে ছিটিয়ে এখানে ওখানে।
ব্যাগগুলো রুপার জিম্মায় রেখে টিকিট কাটতে গিয়েছিল নির্জন- প্যান্টের পকেটে ভাইব্রেট করে উঠল ফোন।
“খবর পেয়েছেন কিছু?”, বলল সুপ্রভা ফোনের ওপাশ থেকে।
কাউন্টারে ঢাকার দুটো এসি টিকিটের কথা বলে নির্জন বলল সুপ্রভাকে, “কীসের খবর?”

“কাল আপনাকে যার কথা বলেছিলাম, জিহাদুল ইসলাম, ওকে আজ পুলিশ গ্রেফতার করেছে হবিগঞ্জ থেকে।“
“অনলাইনে খুন, ধর্ষণের হুমকির জন্য যদি গ্রেফতার করতে শুরু করে পুলিশ, তাহলে আরো অন্তত এক হাজার হাজতখানা তৈরি করতে হবে নতুন করে!”, বলল নির্জন টাকাটা কাউন্টারে দিয়ে, রুপার দিকে হাঁটতে হাঁটতে।
“ওকে কিন্তু তাহমিনা হায়াতের খুনি সন্দেহেই আটক করেছে, খবরে দেখলাম!”
সিলিট থেকে ঢাকাগামী পারাবত এক্সপ্রেস এসে দাঁড়িয়েছে প্ল্যাটফর্মে। রুপার হাতে টিকিট দুটো দিয়ে, ব্যাগদুটো হাতে নিয়ে সুপ্রভাকে বলল, “এই জিহাদি জাহিদুলকে হুমকি দেয়ার জন্য আটক করলে ঠিকাছে। তবে খুনের ক্ষেত্রে… নাহ- পুলিশের সময় নষ্ট হবে শুধু!”
“হয়তো। আমি শুধু খবরটা আপনাকে জানালাম!”

ফেরার পথে কেবিন নেয়ার ইচ্ছেটা বহুকষ্টে দমন করেছে নির্জন। ট্রেনে সেক্স করার বহুদিনের একটা ফ্যান্টাসি আছে ওর, এবারে সেটা পূরণ হলো না। এই ইনভেস্টিগেশন আরো কতদিন চালিয়ে যেতে হবে ও জানে না। টাকা খরচ করতে হবে ভেবেচিন্তে। ইনভেস্টিগেশনটা ও চালিয়ে যাচ্ছে নিজের তাগিদে, অর্থ যোগান দেয়ার কেউ নেই। ভাগ্য ভালো, জুলফিকার আমান পনেরো দিনের সার্ভেইল্যান্স কস্ট দিয়েছেন। যেহেতু ওদের ফিরে যেতে হচ্ছে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই, নির্জন ঠিক করেছে এই টাকাটা ও তাহমিনা হায়াতের হত্যারহস্য উদ্ঘাটনেই খরচ করবে।
“এইতো সেদিনই ট্রেনে করে এলাম। আবার ফেরত যাচ্ছি সেই বালের জায়গাটায়। ভাল্লাগে?”

বেশ উচ্চস্বরে বলল কথাটা রুপা। সামান্য দূরেই এক চশমাচোখের ভদ্রলোক ‘কালের কণ্ঠ’ পড়ছিলেন, নারী কণ্ঠে বাল শব্দটা শুনেই বোধহয় তাকালের বিস্মিত চোখে। তারপর নাকটা একবার ফুলিয়ে চোখ ফেরালেন পত্রিকার পাতায়।
নির্জন নিচুস্বরে বলল, “আমি তোমাকে আবার নিয়ে আসব, কথা দিলাম, রুপা। মন খারাপ করো না।“
রুপা বলল, “এখন ঢাকায় কী করবেন? ঐ ছয়টা খুন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করবেন?”
কামরার ভেতর জ্যাকেটের দরকার নেই; নির্জন জ্যাকেট খুলে একটা চাদর দুজনের গায়ের উপর ফেলে জড়িয়ে ধরল রুপাকে। বলল, “হ্যাঁ। তবে কাল যে ছ’টা কেইস ঘাঁটতে হবে ভেবেছিলাম, তার মধ্যে থেকে তিনটার এই কেইসের সাথে মিল আছে কিন্তু মনে হচ্ছে না ওসব আমাদের কিলারের কাজ!”
রুপাও নির্জনের দেহে চেপ্টে লেগে গেল। বলল, “কেন?”

“কারণ এই তিনটা খুনে ছুরির ব্যবহার হয়নি। আমাদের কিলার কিন্তু ছুরি চলাতে এক্সপার্ট- অন্তত আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। সেই তিনটা খুনের একটায় গলা টিপে, একটায় বালিশ চাপা দিয়ে এবং আরেকটায় সিলিং এ ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আর সেসব খুনের সাথে যারা জড়িত তারা সবাই ধরাও পড়েছে ইতোমধ্যে। ঐ তিনটা কেইসে তাই সময় নষ্ট করার মানেই হয় না কোন!”
“আর বাকি তিনটা কেইস?”, নির্জনের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল রুপা।
“এই কেইসগুলো বেশ ইন্টারেস্টিং, রুপা। মারাত্মকভাবে ইন্টারেস্টিং!”
রুপা কোন প্রশ্ন না করে তাকিয়ে রইল নির্জনের দিকে। নির্জন ওর কৌতূহলী চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলল, “এই তিনটা কেইসেই ভিক্টিমকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে হোটেল রুমের ভেতর। একই প্যাটার্নে বলব না। তাহমিনা হায়াতের মতো শুধুই ভোকাল কর্ডে ছুরির পোঁচ ছিল না, দেহের অন্যান্য অঙ্গেও ছিল। আর তাদের সবাইকে পাওয়া গিয়েছে নগ্ন অবস্থায়, তাদের মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পর!”
“আল্লাহ! এসব আপনি কখন জানলেন?”

ট্রেন একটা স্টেশনে থেমেছে। জানলার কাচের ভেতর দিকে তাকিয়ে স্টেশনের নাম জানার ব্যর্থ চেষ্টা করে নির্জন বলল, “তোমার ঘুম থেকে ওঠার আগে। ন’টার দিকেই ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল, তারপর অনেক ঘেটে এসব বের করেছি!”
“এসব কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি?”
নির্জন চোখ বন্ধ করল কয়েক সেকেন্ডের জন্য। তারপর চোখ খুলে বলল, “হয়েছে একজনকে। ইডেন কলেজের ছাত্রী হালিমাকে হত্যার অভিযোগে হোটেল গ্রাসল্যান্ডের এক কর্মচারীর জেল হয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয় বিনা অপরাধে জেলে ভুগছে সে। আর বাকিদুটো কেইস এখনো আনসলভড এবং ওপেন। এতদিনে ওসব কেইসকে কোল্ড কেইস বলা যেতে পারে!”
“বুঝেছি!”, অস্ফুটে বলল রুপা।
আশেপাশে একবার নজর বুলিয়ে নির্জন চাদরের নিচে রুপার স্তনে হাত রাখল। ফোঁস করে উঠল রুপা, বলল, “কী করছেন? কেউ দেখবে-“
বাঁহাতে স্তনটি ভালো করে পুরে নিয়ে নির্জন বলল, “কেউ দেখবে না!”
রুপা নির্জনের হাতটা সরিয়ে দিয়ে বলল, “আজ রাতে আমি আপনার বাসায় থাকব- সারারাত সুযোগ পাবেন। এখন ভদ্র হয়ে বসে থাকুন!”

রুপার তার বাসায় আজ রাত থেকে যাওয়ার কথা শুনে সামান্য খুশী হলেও, হতাশ হলো বেশি। ট্রেনে সেক্স করতে না পারি, টেপাটিপি করার ফ্যান্টাসিটাও পূরণ হবে না? কেবিন নিলেই ভালো হতো, ক’টাকাই বা লাগত বেশি!
আরামদায়ক সিটে হেলান দিয়ে নির্জন শরীরকে এক্সাইলে পাঠিয়ে ভাবতে লাগল তাহমিনা হায়াতের কেইসটি নিয়ে।
“এই স্মিত দৃশ্য দেখে নিয়ে/ বেদনার গাঢ় রসে আপক্ক রক্তিম হলো ফল।”

(চলবে)

Exit mobile version