মহিলা কন্ঠস্বরটি পেয়ে আমি চমকে পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখি সেই বিশাল চেহারা বিশিষ্ট মেয়েটিকে। সে এরই মধ্যে কখন যেন আমার পেছনে সিঁড়ীর নিচে এসে উপস্থিত হয়েছে। তাঁর সুশ্রী গোল মুখমণ্ডলটি সম্পূর্ণ নির্বিকার, ঠিক যেমনটা এতক্ষণ ধরে আমি দেখে এসেছি। তাঁর স্থির নিস্ফলক দু’চোখের দৃষ্টি যেন এ মুহূর্তে আমাকে বাধ্য করছে তাঁর কথা বিশ্বাস করতে, তবে অপরদিকে আমার মন যেন আবার সেটা করতে নারাজ। কিন্তু এছাড়া আর কোন বিকল্প উপায়ও দেখছি না আমার সামনে। তাই তাঁর কথা মেনে একপ্রকার বাধ্য হয়েই আমি পেছন ফিরে দেওয়ালে থাকা ডায়ালটির দিকে ডানহাতটি বারালাম। ডায়ালে ‘টিট’ ‘টিট’ শব্দের সাথে এক এক করে তাঁর বলা চারটি নম্বর প্রেস করার সময়েও আমার বারে বারে মনে হতে লাগল যেন তাঁকে বিশ্বাস করে আমি ঠিক করছি না। এরপর আমার মনের সেই আশঙ্কায় সিলমোহর পরে যখন আমি তাঁর বলা সেই চারটি নম্বর টিপে শেষের ওকে বাটানে প্রেস করি। কারণ শেষে সেই ওকে বাটানে প্রেস করতেই আরও একটি দীর্ঘ ‘টিট্’ শব্দের সাথে আমার সম্মুখের সেই স্ক্রিনটি আবারও লাল বর্ণ ধারণ করে ফুটিয়ে তোলে সেই একই পরিচিত ও হতাশাজনক ম্যাসেজটি- “password error, remining 1”
আমার এখন নিজের ওপরেই বিদ্রূপ বোধ হল। আমার যে ওকে বিশ্বাস করাটাই ভুল হয়েছে এতে আর কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে না। সে দেখতে এমন নিষ্পাপ ও মিষ্টি হলেও আসলে যে এদের মতই একজন ধূর্ত তা আমার আরও আগে ভেবে নেওয়া উচিত ছিল। একজন নারী হিসেবে পুরুষের মন পড়াটা যতটা সহজ কাজ ছিল, একজন ওপর নাড়ীর মন পড়াটা যে ততটা সহজ কাজ নয় তা আমি এখন বেশ ভালভাবেই বুঝতে পাচ্ছিলাম। সুতরাং আমি আবার অন্য কোথাও পালানোর কথা ভাবতে যাচ্ছি, ঠিক এমন সময়ে সামনে থাকা সেই মেয়েটির পেছন থেকে আরও একটি চেনা মহিলা কন্ঠস্বর বলে উঠে- “ডিয়ার সিস্টার,,,,, তুই কি ভুলে গেলি? যে আজকেই মাস্টার এই জায়গার সমস্ত সিকুরিটি পাসওয়ার্ড রিসেট করেছে। তো্ পুরনো পাসওয়ার্ড বলে ওর দ্বিতীয় সুযোগটাও কেন নষ্ট করলি।” এবং এই বলে সেই মহিলা কন্ঠস্বরটি হাঁহাঁ করে হেঁসে উঠল।
আমি দেখলাম মারিয়া নামের আজকে সকালের বিউটি পার্লারের সেই মেয়েটিও এখন তাঁর বোনের পেছন পেছন এখানে এসে উপস্থিত হয়েছে। তাঁর লিপস্টিক রাঙা লাল ঠোঁটে এখনও খেলা করছে সেই পরিচিত ও অসহ্যকর কুটিল শয়তানী হাসি। এদিকে তাঁকে দেখা মাত্রই আমার অশ্রু ভর্তি ছলছলে দুই চোখ মুহূর্তের মধ্যে পুনরায় আবার রাগে লাল হয়ে উঠেছে। আমার হাতের কাছে নেহাত কোন ভারী বা ধারালো কিছু ছিল না এই সময়ে, নাহলে এ মুহূর্তে সেটিকে সেই মহিলার মুখ বরাবর ছুঁড়ে মারতে আমি বিন্দুমাত্র দ্বিধা বোধ করতাম না।
আমি রাগে তাঁর সামনে এমন করে ফুঁসছি দেখে আমাকে টিজ করতে সে এবার আরও ন্যাকা ন্যাকা স্বরে বলে ওঠে- “তবে এখন চিন্তার বিষয়টি হল,,, নতুন পাসওয়ার্ড; তো… নতুন পাসওয়ার্ড কি হতে পারে? কি হতে পারে?? মিস্ট্রেস লিসার জন্ম তারিখ্… তো্….. আর হবে না কারণ এর আগে সেটিই ছিল। এবং মাস্টার নিজের কোন ডিটেইলসকে পাসওয়ার্ড হিসেবে আজ পর্যন্ত কোনদিন ব্যবহার করে নি, আর ভবিষ্যতেও করবে বলে আমার মনে হয় না। তো আর কার কার আর কার…” গালে আঙ্গুল দিয়ে ভাব্বার ভঙ্গিতে বিড়বিড় করতে করতে সে সেখানেই পায়চারি শুরু করল। এবং সামান্য কিছুক্ষণ এভাবে পায়চারি করে আচমকাই আবার থমকে দাঁড়িয়ে আর্কিমিডিসের ইউরেকা বলার ভঙ্গীতে বলে উঠল- “ভাই, মাস্টারের পরিবারে এখন তাঁর স্ত্রী ছাড়া তো তাঁর আপনজন বলতে তাঁর ভাই আছে, তবে…”
তাঁর কথা শেষ করতে না দিয়েই আমি পুনরায় পেছন ফিরে বাম হাত দরজার ঠাণ্ডা লোহার হাতলটায় রাখলাম এবং ওপর হাত দিয়ে যান্ত্রিক গতিতে দরজার ডায়ালে নম্বর টিপতে শুরু করলাম। দ্বীপের ভাই অর্থাৎ রাজ, হ্যাঁ!!! তাঁর জন্ম সাল তো আমার জানা। ডায়ালে প্রতিটি নম্বর প্রেস সাথে সাথে যেন পালাবার একটা শেষ কিরণ আমার চোখের সামনে ধীরে ধীরে আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠতে লাগল। এরপর এমন আশার আলো সঙ্গে নিয়ে শেষের নম্বরটিও টিপে কাঁপা কাঁপা হাতে যখন আমি ওকে বাটানে প্রেস করি; তক্ষণ যেন আমার সম্মুখের সেই স্ক্রিনটিতে ফুটে ওঠা এক সম্পূর্ণ নতুন ম্যাসেজ ভোরের সূর্যোদয়ের সোনালি আলোকে ছাপিয়ে আচমকা গ্রহণ লাগার মতন করে আমার বাঁচার সেই শেষ কিরণকে মুহূর্তের মধ্যে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে দিল। এরই সাথে কানে ঝিঁঝিঁ লাগার মত করে আসতে শুরু করল একটা দীর্ঘ ‘টিটটটটটটট’ শব্দ। শব্দটি যেন তীক্ষ্ণ আলপিনের ন্যায়ে আমার কানের একদম গভীরে প্রবেশ করে মস্তিস্কের দোরগোড়ায় কড়া নাড়তে লাগল, তবে আমার এতে কোন হুস নেই। কারণ আমি এখন বিহ্বল দৃষ্টিতে হতচকিতের ন্যায়ে তাকিয়ে আছি সামনে থাকা সেই লাল স্ক্রিনটির দিকে; যেখানে এখন ক্রমাগত ফুটে উঠছে একটি ম্যাসেজ- “Access denied, Dore has been locked and master key required.”।
এমন ম্যাসেজ দেখেও আমি কতক্ষণ যে সেখানে এভাবে হতচকিতের মত দাঁড়িয়ে ছিলাম তা আমার জানা নেই। তবে এই মুহূর্তে যেটা আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল তা হল আমার সামনে এর কোন পালাবার পথ নেই। তবে এই নির্মম সত্যটা জেনেও যেন আমার মন সেটিকে স্বীকার করে নিতে পাচ্ছিল না; কিংবা আমি স্বীকার করে নিতে চাইছিলাম না। এবং তাই বোধয় এবার আমি সেই কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থাতেই অন্যমনস্কতার সাথে দরজার হাতলটি ধরে শেষ বারের মতন চাপ দিলাম এবং তাঁতেই এবার ঘটল এক মারাত্মক ঘটনা। আমার সেই হাতলটি ধরে চাপ দিতেই যেন সেই ঠাণ্ডা লোহার হাতল থেকে একটি তীব্র বৈদ্যুতিক শক এসে ধাক্কা মারল আমার পেলব হাতের তালুতে এবং তাঁর পরক্ষনেই সেটি আমাকে ছিটকে ফেলে দিল সিঁড়ীর নিচে। সঠিক সময়ে জসেফিনা না ধরে ফেললে হয়ত সে মুহূর্তে আমার নির্ঘাত কোন সাংঘাতিক রকমের চোট লেগে যেত। আমার মনে পরল এখানে আসার সময়ে জনও আমাকে এই ভাবে সিঁড়ি থেকে পরে যাওয়ার সময়ে হাত ধরে বাঁচিয়েছিল। তবে তাঁদের এই সহানুভুতির জন্য এদের দুজনের মধ্যে কারোর প্রতিই আমার কোনোরূপ কৃতজ্ঞতা পোষণ করার ইচ্ছে হল না।
ওদিকে বাম হাতের কোমল তালুতে এমন সাংঘাতিক রকমের বৈদ্যুতিক শক খেয়ে আমার মুখের ভেতরটা এ মুহূর্তে শুকিয়ে এসেছে এবং তাঁর সাথে হৃৎপিন্ডটাও ঢিপ ঢিপ করতে শুরু করেছে। দরজার হাতলে খাওয়া এই একটি শকই যেন বেশ খানিকক্ষণ আগে আমার হাল্কা গোলাপী স্তনবৃন্তে খাওয়া বৈদ্যুতিক শকের প্রতিটি অনুভূতিগুলিকে মুহূর্তের মধ্যে তাজা করে ফেলেছে।
এমন সময়ে আমার পেছন থেকে মারিয়া একটা চাপা হাঁসি দিয়ে আবারও সেই ন্যাকা ন্যাকা সুরে বলে ওঠে- “আশ্চর্যের ব্যাপার তো!!! ভাইয়ের জন্ম সালও না??? তবে কি সে শুধুমাত্র… [সৎ ভাই বলেইইই… মাস্টার বরাবর এমনটা করে? কি জানি বাবা, বড়লোকদের সব ব্যাপার-স্যাপার।]”
তবে শেষের দুটি লাইন সে বেশ আসতে বলে থাকলেও কথাগুলির প্রায় সবটাই আমার কানে এসেছিল। এবং আসতেই যেন আমার কান দুটো বেড়ালের মতন খাঁড়া খাঁড়া হয়ে উঠল। “সৎ ভাই? রাজ কি দ্বীপের সৎ ভাই? তবে আমাকে তো রাজ এ বিষয়ে কোনদিনও বলে নি! আমার যদিওবা অনেক আগেই এই দুই ভাইয়ের নামের সাদৃশ্যতা নিয়ে মনের ভেতরে একটা সন্দেহ উদ্বেগ ঘটেছিল। এবং সেই সুবাদে যতবারই আমি রাজের সাথে তাঁর দাদার বিষয় আলোচনা করব বলে ভেবে ছিলাম, ততবারই না হয় কলেজের কোন এসাইংমেন্টের চাপে কিংবা নতুন দেশে নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার চাপে তা ভুলে বসেছিলাম। তবে আমার সেই না পারা ও মনে ভেতরেই ক্রমাগত বাড়তে থাকা সন্দেহের সেই ভ্রূণ যে ভবিষ্যতে এমন রূপ নিয়ে নেবে তা আমি কস্মিনকালেও ভাবতে পারি নি।”
এরপর আমার এই চিন্তার জাল ছিন্ন করে মারিয়া পাশ থেকে বলে ওঠে- “চল বোন, এই সুন্দরীটিকে নিয়ে যাই। এর তো আর এখান থেকে পালান হল না। কি আর করা যায় বল, এর কপালেই আছে বসের গোলামী করা।” এবং এই বলে তাঁরা দুজনেই এক সঙ্গে হাহাহা করে তীব্র অট্ট হাঁসিতে ফেটে পরল। আমি আশ্চর্য হয়ে দেখলাম জসেফিনাও এখন তাঁর দিদির সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে হাঁসতে শুরু করেছে। তারপর হাসা শেষ হলে তাঁরা চলতে শুরু করে সেই পথ দিয়ে, যেখান দিয়ে একটু আগেই আমি এতো অবধি দৌড়ে এসেছিলাম। মারিয়া চলতে থাকে আমাদের সামনে সামনে ও আমার বাম হাত ধরে তাঁর পেছন পেছন পা মেলাতে থাকে তাঁর বোন জসেফিনা।
যেমনটা আমি আগেই বলছিলাম, করিডোরের সে জায়গার দু’পাশে সারিবদ্ধ ভাবে ছিল বেশ কয়েকটা ঘর। ইতিপূর্বে দৌড়ে আসার সময়ে আমার সে সব ঘরগুলিকে আলাদা করে দেখা হয় নি বটে, তবে এখন চলার পথে মাথা দু’পাশে ঘুরিয়ে সেই সব ঘড়গুলিকে পর্যবেক্ষণ করে নিচ্ছিলাম। আমি দেখলাম প্রায় সব ঘরগুলির যেন লোহার দরজা দ্বারা বদ্ধ। সেই নিরেট ও পুরু লোহার দরজাগুলি যেন কোন এক আদিম জেলখানার কাল কুঠুরির প্রতিচ্ছবি বহন করে দাঁড়িয়ে আছে আমার দু’পাশে। এছাড়াও সেই প্রত্যেকটি ঘরের দরজাই বিভক্ত ভিন্ন ভিন্ন নম্বরে, ঠিক যেমনটা কোন আবাস হোটেলের এক একটি ঘর বিভক্ত থাকে অদ্বিতীয় নম্বরের সারি দিয়ে।
তবে এগুলির মাঝেও যেটি আমার কাছে বেশ অদ্ভুত বলে ঠেকছিল, সেগুলি হল সেই প্রত্যেকটি দরজার সারিতে ইউনিক নম্বরের নিচে লেখা কিছু বিশেষ ও অদ্ভুত শব্দ। যাদের মধ্যে কিছুটা শব্দের অর্থ আমার সামান্য বোধগম্য হলেও বেশীরভাগটাই হল না। এখনও পর্যন্ত দেখা কথাগুলি যেমন- Pleasure Room, Room of Pain, Training Room for Slaves, Fire and Water Play, Electrostimulation and other Punishments, CBT Room for Mistresses, Endless Blackhole, Punishment / training by Machine/A.I. , Entomophobe and the other genuine phobic, Room of Shame and humiliation, Sissy Training room etc.
এছাড়াও ঘরগুলির প্রত্যেকটি যে বদ্ধ ছিল তা নয় এবং সেটি আমি বুঝতে পারি মারিয়াদের পেছন পেছন বেশ কিছুটা দূর এগিয়ে যেতেই। এদিকে জসেফিনা অনেকক্ষণ আগেই আমার হাত ছেড়ে আমার সামনে সামনে তাঁর দিদির সাথে চলতে শুরু করেছে। পালাবার যে বর্তমানে আমার আর কোন বিকল্প রাস্তা নেই তা বোধয় সে ভালভাবেই আন্দাজ করে পেরেছে এবং সেই জন্যই বোধয় সে এমুহূর্তে এতটা নিশ্চিন্ত হয়ে আমার সামনা সামনি হেঁটে যেতে পারছে।
জ্যান্ত ও ঘুমন্ত দ্বৈতের ন্যায় সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা বদ্ধ ঘড় গুলিকে দেখতে দেখতে আমি এগিয়ে চলছি এমন সময়ে কিছুটা দূরে সেই ব্যতিক্রমী ঘর আমার নজরে পরে। দূরের সেই ঘরের ভেতর থেকে একটি গাঢ় লাল আলো এ মুহূর্তে বায়রের মেঝেতে এসে পড়েছে। এছাড়াও চলার প্রতিটি পদক্ষেপের সাথে মারিয়াদের পেছন পেছন আমি যতই সেই ঘরটির কাছে এগিয়ে আসছি ঠিক ততই যেন একটা অদ্ভুত ক্ষীণ শব্দ আমার কানে ধীরে ধীরে স্পষ্ট ও আরও তীব্র হয়ে উঠছে।
এরপর একটা পর্যায়ে সেই ঘরের একদম কাছে এসে পরায় আমি লক্ষ্য করি সেই ঘরের দরজাটি সম্পূর্ণ হাঁ করে খোলা। মারিয়া ও জসেফিনা আমার সামনে দিয়ে সেই একই লহমায় চলতে থাকলেও পেছনে থাকা আমি এবার থমকে দাড়াই। আমার মনে আচমকাই যেন এক প্রবল উত্তেজনা কাজ করতে শুরু করেছে সেই ঘরটিকে কেন্দ্র করে এবং বোধয় সেই কৌতুহলেই খানিকক্ষণের জন্য সত্যান্বেষী হয়ে ওঠা আমি সেই অদ্ভুত শব্দের রহস্য ভেদ করতে ঘরটিকে উদ্দেশ্য করে গুটি গুটি পায়ে এগতে শুরু করি। এরপর কাছে গিয়ে আধ-অন্ধকার গলিপথ থেকে সরাসরি সে ঘরে চোখ ফেরাতেই তো প্রথমে সেই ঘরে জ্বলতে থাকা তীব্র লাল আলোয় আমার চোখ ধাঁধিয়ে উঠল এবং তারপরে সেই আলোয় কিছুটা ধাতস্থ হয়ে উঠতেই আমি সেই ঘরে যা দেখলাম তাঁতে যেন মনে হল আমার বুকের ভেতরে কেও একজন সজোরে হাতুড়ি পিটিয়ে দিয়ে চলে গেল।
আমি বিস্ফারিত চোখে দেখলাম সেই ঘরের ভেতরে একটি মেয়ে, যার শরীরের এ মুহূর্তে কাপড়ের কোন চিহ্ন পর্যন্ত নেই সে সিলিং বরাবর দড়িতে প্রায় ঝুলছে। প্রায় ঝুলছে বলার কারণ তার নগ্ন শরীরটিকে সম্পূর্ণ দড়িতে বেঁধে কোমর থেকে সিলিং বরাবর এমন ভাবে ঝলান হয়েছে যাতে তাঁর একটি পায়ের আঙ্গুল কোন মতে মাটি স্পর্শ করলেও পুরো পায়ের পাতাটি করছিল না। এছাড়া তাঁর দ্বিতীয় পাটি ছিল শূন্যে, অর্থাৎ সেই পায়ের থাইয়ে দড়ি বেঁধে হাঁটুটিকে উঁচু করে এমন ভাবে বাঁধা হয়েছিল যে দুটি পা মিলে প্রায় একটি অসম্পূর্ণ জ্যামিতিক কোন সৃষ্টি করছিল।
এমন দৃশ্য দেখে আমার মনে পরে গেল যে যখন আমাকে এখানে ধরে আনা হয়েছিল তক্ষণ জনও আমাকে প্রায় একইরকম ভাবে সিলিং থেকে ঝুলন্ত একটি দড়ির সাথে আমার শরীরটিকে বেঁধে ছিল এবং তারপর একে একে ছিন্ন ভিন্ন করেছিল আমার পরনের সমস্ত কাপড়-চোপড়। তবে আমার সাথে এখন এই মেয়েটির পার্থক্য এতটুকুই যে যেখানে জন আমার গোপনাঙ্গের সন্ধান পেতে আমার দুটি পা পৃথক করেছিল একটি লোহার রড দিয়ে সেখানে এই মেয়েটিরও যোনির নাগাল পেতে তাঁর দুটি পা পৃথক করা হয়েছে দড়ির সহযোগে।
এদিকে মেয়েটির মুখও এ মুহূর্তে আবদ্ধ একটি লাল রঙ্গের বল গ্যাগ দ্বারা, যার ওপর দিয়ে ঠোঁট বেয়ে মাকড়সার জালের ন্যায়ে চুয়ে চুয়ে বেরিয়ে আসছে তাঁর মুখের লালারস। এর সাথে ঘরের লাল আলোয় চকচক করতে থাকা মেয়েটির ঘামে ভেজা বাদামি বর্ণের ত্বক সাক্ষি দিয়ে যাচ্ছে তাঁর প্রীতি সে ঘরে চলতে থাকা প্রতিটি অত্যাচার ও ধকলের। নারকেলের মসৃণ দড়িগুলি যেন খুবই নির্মম দক্ষতার সাথে আস্তে পিস্তে জরিয়ে ধরে রেখেছে মেয়েটির হাত, পা, স্তন সহ পুরো নগ্ন শরীরটিকে। এবং সেই সুবাদে সেই পরাধীন নগ্ন শরীরের মজা নিংড়ে নিংড়ে নিচ্ছে পেছনে থাকা একটি দস্যু সমতুল্য লোক। লোকটির চেহারা এতটাই বিশাল ছিল যে প্রথম দর্শনে আপনা থেকেই এই দস্যু শব্দটি আমার মুখে চলে আসল। এছাড়াও লোকটির ছিল সম্পূর্ণ উলঙ্গ এবং সেই নগ্ন শরীরে যেন ভাল্লুকের মতন লোম। লোকটির মুখটি ঢাকা একটি স্কিমাস্ক দ্বারা, যেটি তাঁর বাহ্যিক রূপকে ঢাকতে সমর্থ থাকেও চারিত্রিক কুৎসিকতা ঢাকতে সম্পূর্ণ অসমর্থ ছিল।
অপরদিকে এমন দৃশ্য দেখে আমার দু’পা যেন সেখানেই বরফের মত জমে উঠল। নড়াচড়ার একটুও ক্ষমতা আমার হল না, ওদিকে বেশ অনেকটা দূর এগিয়ে পরা মারিয়া ও জসেফিনারও খেয়াল থাকল না যে আমি এখন তাঁদের পেছনে নেই। মুখোশ ধারী লোকটি এতক্ষণ নিজের ধ্যানেই পেছন থেকে সেই অসহায় মেয়েটির কাঁধে মুখ রেখে তাঁকে চুদে যাচ্ছিল। এর সাথে তাঁর ডান হাতে ধরা ছিল একটি ভাইব্রেটর যা সে এ মুহূর্তে চেপে ধরে রেখেছিল সেই মেয়েটির অরক্ষিত যোনি মুখ বরাবর। জ্যান্ত চলচিত্রের ন্যায়ে আমার সামনে ঘটতে থাকা এই পুরটা দৃশ্য আমার কাছে এতটাই পরিচিত ও তাজা লাগতে শুরু করল যে এক মুহূর্তের জন্য যেন আমার মনে হতে লাগল কয়েক ঘণ্টা আগে আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাই এখন আমি স্বচক্ষে সামনে থেকে দেখছি। দ্বীপের সাথে আমার ঘটে যাওয়া এক একটি ঘটনা আমার চোখের সামনে আবার জলছবির মত ভেসে উঠতে লাগল এবং তাঁর সাথে অনুভূতিগুলিও একে একে তাজা হয়ে উঠতে লাগল।
দ্বীপের অমন রগসুদ্ধ ফুলে ওঠা বিশাল ও কুৎসিত বাঁড়া আমার ছোট্ট পোঁদের ফুটো জুড়ে অমন নির্মম ও অবাধ বিচলন এবং তাঁর সাথে আমার স্পর্শকাতর যোনি মুখে চেপে ধরা তাঁর অমন হিংস্র কম্পমান ভাইব্রেটরের অনুভূতি, এ সমস্ত কিছু স্মরণ হতেই আমার শরীরের ভেতরটা যেন আবারও মোচড় দিয়ে দিয়ে উঠে শুরু করল। কোন এক অকাঙ্খিত যৌন উত্তেজনায় বোধয় আমার অনাবৃত গোলাপী স্তনের বোঁটা দুটো শক্ত হয়ে উঠল এবং তাঁর সাথে তলপেটে বিশেষত যোনিমুখে শিরশিরানি অনুভূত হতে শুরু করল। মনে হতে লাগল যেন শত সহস্র পিঁপড়ের সমূহ একত্রে কিলবিল্ করতে শুরু করেছে আমার ভেজা যোনির ভেতরে এবং বোধয় সেই শিরশিরানিতেই এবার আমার হাত অজান্তেই চলে গেল কোমরে জরিয়ে থাকা সেই চেষ্টিটি বেল্টের ওপর। ইতিমধ্যে আমি ভুলেই বসেছিলাম যে চেষ্টিটি বেল্টের ভেতরে থাকা আমার বেহায়া চেরা পুষি ও পশ্চাৎপদের টাইট ফুটটি দ্বীপের বিশ্রী বীর্য ও ‘বাটপ্লাগ’ ভেতরে নিয়ে সংরক্ষিত ও নতুন মালিকের জন্য অপেক্ষারত।
এরপর সেই শিরশিরানি সহ্য করতে না পেরে আমি সেই বেল্টটি ধরে টানাটানি শুরু করলাম এটা জেনেও যে এতে কোন কাজ দেবে না। তবে আমার এই হুটপাটিতে যে সেই লোকটির সামনে আমার নিজের উপস্থিতির জানান দিয়ে পারি সে বিষয়ে আমার খেয়াল ছিল না। কিছুক্ষণে এই নিষ্ফল প্রচেষ্টার পর অবশেষে যখন আমি হাল ছেড়ে সামনের দিকে তাকালাম তক্ষণ লক্ষ্য করলাম সেই দস্যু সমতুল্য লোকটি মাথা ঘুরিয়ে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। বালাক্লাভা কিংবা স্কি মুখোশ দ্বারা তাঁর মুখটি ঢাকা থাকলেও তাঁর চোখে ফুটে ওঠা স্পষ্ট লোলুভ দৃষ্টি ও জিভ দিয়ে ঠোঁট চাঁটা দেখে আমার বুঝতে বাকী থাকল না যে তাঁর মনে এখন কি চলছে। সে বোধয় আমাকে এমন অর্ধ নগ্ন অবস্থায় সামনে পেয়ে আরও বেশী উত্তেজিত হয়ে পরছে। এবং সেই উত্তেজনার বসেই যেন সে এবার আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে তাঁর সামনে থাকা মেয়েটির অনাবৃত ঝুলন্ত স্তনদুটিকে দ্বিতীয় হাত দিয়ে নির্মমতার সাথে কচলাতে কচলাতে আরও দ্রুততার সঙ্গে তাঁকে পাম্প করতে শুরু করেছে। যার ফলে মেয়েটির মুখ থেকে নির্গত গোঙানির শব্দের সাথে পুরুষটির কোমরের সাথে মেয়েটির ভরাট নিতম্বের সংঘর্ষে সৃষ্ট থপাস থপাস শব্দ তীব্র হয়ে উঠল। এবং আর তাঁর সাথে ভাইব্রেটরের সেই ‘ভো’ ‘ভো’ শব্দ রয়েছেই, বলাই বাহুল্য এই সবের সম্মিলিত শব্দই একটু আগে অদ্ভুত রূপে আমার কাছে এসে ঠেকছিল।
আমি দরজার সামনে থমকে দাঁড়িয়ে এসব দেখছি যার ফলে বেশ কিছুদূর এগিয়ে যাওয়া মারিয়া ও জসেফিনা আমার অনুপস্থিতি উপলব্ধি করে এবার পেছনে ফিরে তাকায়। এবং আমাকে তাঁদের পেছনে থাকার বদলে সে ঘরের সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তৎক্ষণাৎ তাঁরা দ্রুত আবার পেছনের দিকে পা বাড়ায়। কাছে এসেই মারিয়া প্রথমে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ও পরক্ষনে লোকটির দিকে তাকিয়ে পুরো বিষয়টি বুঝে নিতে বেশী সময় নেয় না। এবং তারপরেই সে সেই লোকটির উদ্দেশ্যে শাসান কন্ঠে বলে ওঠে- “তোর বড্ড সাহস বেড়েছে দেখছি, মাস্টারের প্রসাদের ওপর লাল ঝরাতে ভয় করে না? এমন দুঃসাহস যাতে আর দ্বিতীয়বার না দেখি। নাহলে…” এতটুকু বলেই মারিয়া সেই লোকটির মুখের সামনে সপাতে সেই বিশাল ও ভারী লোহার দরজাটি বদ্ধ করে দিল। এবং এরই সাথে ঘরের ভেতরের সেই শব্দগুলিও ক্ষীণ হয়ে উঠল। আমি দেখলাম বেশ বড় বড় অক্ষরে সেই দরজার ওপর লেখা- Room of Shibari.
লেখিকা- স্নেহা মুখার্জি
[বন্ধুরা, পরের পর্বটিও আমার প্রায় তৈরি আছে, আপনারা ভালবাসা ও ভিয়ার্স বাড়িয়ে সহযোগিতা করলে সিগ্রই আমি নিয়ে আসব এই সিরিজের দশম পর্বটিকে। তাই ইন্টারেস্ট ধরে রাখতে চোখ রাখুন আমার যৌনদাসি সিরিজের আগামী পর্বগুলিতে। যেহেতু এই গল্পটি এখনও সবে শুরু এবং আরও অনেক পথ চলা বাকি আছে আপনাদের সঙ্গে তাই আপনাদের ধৈর্য ও আগ্রহ আমার কাছে একান্ত কাম্য। এছাড়াও আপনাদের বাকি কোন সাজেশন থাকলে তা নির্ধিতায় আপনারা জানাতে পারেন এই গল্পের কমেন্ট সেকশনে। ধন্যবাদ।]